টিভি নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যকার সাধনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বললেন, কীভাবে ‘মুজিব’ সিনেমার
সংলাপ লেখা হল, বিদেশি শিল্পীদের বাংলা উচ্চারণ নিয়ে কীভাবে তিনি কাজ করেছেন।
সেই সঙ্গে সিনেমার ট্রেইলার নিয়ে সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: সিনেমার সংলাপের সঙ্গে যুক্ত আছেন আছেন আপনি; চিত্রনাট্য
ও সংলাপ লেখার কাজ কীভাবে সম্পাদন করা হল?
সাধনা আহমেদ: চিত্রনাট্য
লিখেছেন মুম্বাইয়ের কিংবদন্তি চিত্রনাট্যকার শামা জায়েদী ও অতুল তিওয়ারি। আর সংলাপ
লিখেছি আমি, গিয়াস উদ্দীন সেলিম, শিহাব শাহীন ও অনম বিশ্বাস। আমাদের রাইটার্স প্যানেলের
উপদেষ্টা ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর।
কাজটি যথাযথ গবেষণা করেই করা হয়েছে। সর্বোপরি সংলাপ ও চিত্রনাট্য বারবার
পড়ে সংস্কার করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার ছোটবোন শেখ রেহানা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: শ্যাম
বেনেগাল বলেছেন, সিনেমার বাংলা ভাষার উচ্চারণের বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল; সেই
বিষয়টি নিয়ে আপনারা কীভাবে কাজ করেছেন?
সাধনা আহমেদ: একদম
ঠিক। বাংলা ভাষার সংলাপ উচ্চারণের ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেক শিল্পীরা অপরিসীম পরিশ্রম
করেছেন। আমি যেহেতু ডায়লগ কোচ হিসাবেও কাজ করেছি, আমিও ডায়ল্যাক্টের উচ্চারণগুলো শিখেছিলাম।
গোপালগঞ্জের আলাল আহমেদ নামের একজন আমাদেরকে এই বিষয়ে বিস্তর সহযোগিতা
করেছিলেন। প্রথমে প্রমিত বাংলায় ডায়লগ লেখা হয়েছে; পরে যে যে চরিত্রে সংলাপ গোপালগঞ্জের
আঞ্চলিক ভাষায় সেই সংলাপগুলো তিনি আমাদের সঙ্গে বসে বসে ঠিক করে দিয়েছেন। আর আমি দিনের
পর দিন তার কাছ থেকে গোপালগঞ্জের উচ্চারণ শিখেছি।
এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা
শেখ রেহানা একদিন শিল্পীদের সঙ্গে সময় দিয়েছেন। বিভিন্ন চরিত্রের ক্ষেত্রে তাদের দেখার
ও কথা বলার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।
ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে নিজের পিতা ও বঙ্গমাতাকে নিজের মাতা হিসাবে কেমন
দেখেছেন, তারা কেমন করে কথা বলতেন সেসব বলছেন তারা। সেখানে আরেফিন শুভ, নূসরাত ইমরোজ
তিশা, তৌকির আহমেদ, দিলারা জামান, খায়রুল আলম সবুজসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এতে
করে চরিত্র নির্মাণে শিল্পীদের অনেক কাজে লেগেছে বলে আমার বিশ্বাস।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: অনেক
ভারতীয় শিল্পীও এতে কাজ করেছেন; তারা কীভাবে বাংলা রপ্ত করলেন?
সাধনা আহমেদ: ঠিক,
বেশ কয়েকজন ভারতীয় শিল্পী কাজ করেছেন। তবে প্রধান চরিত্রগুলোর প্রায় সব শিল্পীই বাংলাদেশের।
ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে যারা বাংলায় সংলাপ বলেছেন, তারা সবাই পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি।
আর যারা অন্য ভাষায় কথা বলেছেন (ইংরেজি, হিন্দি ও উর্দু) তারা কয়েকজন অবাঙালি ছিলেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: মুম্বাই
ও ঢাকায় সিনেমার শুটিংয়ের সেটে ছিলেন আপনি; শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সাধনা আহমেদ: আমার
অভিজ্ঞতা অসাধারণ। মুম্বাইয়ের সবাই খুব প্রফেশনাল। প্রত্যেকটি মানুষ অত্যন্ত সিনসিয়ার।
সেখানে কঠোরভাবে সময় মেনে সবকিছু শুরু হয়। যে সময়ে শিল্পীদের ও অন্যদের স্পটে পৌঁছানোর
কথা সবাই ঠিক সময়ে পৌঁছে যায়। যখন শুটিং শুরু হওয়ার কথা তখনই শুরু হত। দুই-তিনশত লোক
একসাথে কাজ করছে, কিন্তু কোনো চেঁচামেচি নেই। প্রত্যকে নীরবে নিজের কাজ করে যাচ্ছে।
সত্যিই অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: কানে
ট্রেইলার প্রকাশের পর আলোচনার পাশাপাশি ভিএফএক্স, চিত্রগ্রহণ, আরিফিন শুভর কণ্ঠ, লুকসহ
নানা বিষয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে ফেইসবুকে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
সাধনা আহমেদ: দেড়
মিনিটের একটি ট্রেইলার দেখে পুরো ছবিকে বিশ্লেষণ কোনোভাবেই করা যায় না। আর বঙ্গবন্ধুর
চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পীর কণ্ঠস্বরকে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠের সাথে তুলনা করাই উচিৎ নয়।
এগুলো হাস্যকর চিন্তা, এ নিয়ে ভাবার কিছু নেই। আমি দর্শকদের বলব, যে আপনারা আগে পুরো
ছবিটি দেখুন। আর শুধু লুক দিয়ে তো আর শিল্পসৃষ্টি হয় না; তবে তো বঙ্গবন্ধুর মতো কাউকে
দেখতে লাগলেই সে বঙ্গবন্ধু হয়ে যেতে পারত। সবশেষে মনে রাখতে হবে এটা চলচ্চিত্র।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: নির্মাতা
শ্যাম বেনেগাল বললেন, ট্রেইলার দেখে পুরো সিনেমার সমালোচনার করা যায় না। ট্রেইলার নিয়ে
সমালোচনার পর সিনেমার সম্পাদনায় কোনো পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা আছে কি?
সাধনা আহমেদ: ডিরেক্টর
শ্যাম বেনেগাল তো বলেই দিয়েছেন। আর ছবির পোস্ট প্রডাকশনের কাজ এখনও চলছে। কী করবেন
কী করবেন না, সেটা সম্মানীয় ডিরেক্টর সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বাংলাদেশের
সিনেমা হলে মুক্তির বিষয়ে ‘মুজিব’ টিমের
পরিকল্পনা কী?
সাধনা আহমেদ: মুক্তি
তো দেওয়া হবেই। যখন হবে তখন সবাই দেখতে পাবেন।