আড়াই লাখ মানুষের বসবাসের এই লৌহজংয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নের জমি-জিরাত, বসতভিটা
পদ্মাগর্ভে বিলীন হচ্ছে প্রায় প্রতি বছরই। উপজেলার কনকসার ইউনিয়নের সিংহেরহাটি গ্রাম
এবং লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামের ১ নম্বর ওয়ার্ডে সপ্তাহখানেক ধরে ভাঙন
শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিংহেরহাটি ও বড় নওপাড়া গ্রামের হোসেন মোল্লার বহু
বছরের পুরনো বাড়ির ভিটা ভাঙতে শুরু করেছে। ভাঙনে নদীগর্ভে আংশিক তলিয়েছে মিঠু মোল্লার
ঘর। এসব গ্রামের অনেকেই তড়িঘড়ি করে ঘর ভেঙে নিরাপদ জায়গায় সরিয়েও নিচ্ছেন। বিশেষ করে
বড় নওপাড়া গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ঝুঁকিতে আছে। দিন বা রাত কখন পদ্মায়
গিলে খায় সে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এখানকার মানুষ।
ভাঙনরোধে পদ্মা তীরে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড
বড় নওপাড়া গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক নদী ভাঙনের কাছে অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে
বলেন, “প্রায় ২৫ বছর যাবৎ আমি এই বাড়ি থাকি। আমার বিল্ডিং ভেঙে যাচ্ছে। সামনের
বাড়িঘর সব পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। আমরা অহন কোথায় যামু।”
ফরিদ মাঝি গত তিন দশক ধরে দেখছেন ভাঙনে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে
পদ্মায়।
এই গ্রামের ফাতেমা বেগম জানান, ১৭ বছর আগে বিয়ের পর যখন এই গ্রামে আসেন,
তখন বাড়ির আশপাশে নদীর চিহ্নই তিনি দেখেননি। এখন পরিস্থিতি আতঙ্কের বলে জানান এই গৃহবধূ।
ভাঙন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে লৌহজংয়ের দুই ইউনিয়নের শতাধিক মানুষ
“এখন নদীর প্রতিটি ঢেউ কানে বাজে। আমরা আতঙ্কে দিনরাত কাটাচ্ছি। রাতে
ঘুমাতেও পারি না। মনে হয়, এই বুঝি পদ্মায় খেয়ে ফেলবে।”
ভাঙন রোধে দ্রুত এবং স্থানীয় সমাধান চান ফাতেমা বেগম।
ভাঙনের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ভাঙন রোধে পদ্মাতীরে জিও
ব্যাগ ফেলা হবে। জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এই পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছে।
ভাঙনে জমিজিরাত, বসতভিটা পদ্মাগর্ভে বিলীন হচ্ছে প্রায় প্রতিবছরই
তিনি আরও বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এসে ছবি তুলে নিয়ে
গেছেন। এবং তাদের দ্রুত ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার জন্য বলেছি। তারা আগামী দুই-একদিনের
মধ্যে এসব এলাকায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলবেন।”
এর আগে ১৮ মে লৌহজং-টঙ্গাবাড়ি উপজেলায় ৪৪৬ কোটি টাকার স্থানীয় বাঁধ নির্মাণ
কাজের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।
তখন তিনি বলেন, স্থায়ী বাঁধ হয়ে গেলে এ এলাকায় ভাঙন সমস্যায় আর থাকবে না।