এই দুটি ঘটনা নমুনা মাত্র। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে সাকিব আল হাসানের সংবাদ সম্মেলনে এরকমই ছিল প্রাণের ছোঁয়া। দেশে এরকম জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তাকে দীর্ঘদিন পরই পাওয়া গেল। ২০১৯ সালের অক্টোবরে তিনি নিষিদ্ধ হলেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে যখন ফিরলেন, তখন গোটা বিশ্বেই কোভিডের নানা বিধি-নিষেধ। সংবাদ সম্মেলনগুলো ততদিনে হয়ে গেছে ভার্চুয়াল।
কোভিডের দীর্ঘ প্রহর পেরিয়ে এখন আবার সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক। এরকম মুখোমুখি সংবাদ সম্মেলন যে সাকিব নিজেও মিস করছিলেন, তা পরিষ্কার তার কথায় আর আচরণে। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন দারুণ প্রাণোচ্ছল। নিজে থেকেই বেশ মজা করলেন কয়েকবার। মুখে হাসি লেগেই ছিল।
নিজের ও দলের পারফরম্যান্স, ম্যাচের অবস্থা নিয়ে নানা খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ তো থাকলই। এসব নিয়ে সাকিবের কথায় সাধারণত সবসময়ই ছাপ পড়ে তার গভীর ক্রিকেটবোধ ও ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্কের। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তবে এ দিন তিনি ছিলেন সাধারণ অন্য বেশির ভাগ দিনের চেয়ে একটু বেশিই প্রাণবন্ত। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে মিশে থাকল রসিকতা।
অনেক সময়ই সংবাদ সম্মেলনে এক-দুই কথায় বা ছোট্ট করে উত্তর সেরে ফেলেন। খুব বেশি লম্বাও হয় না সংবাদ সম্মেলন। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, এই পর্ব তিনি উপভোগ করছেন। একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিলেন ক্লান্তিহীন। বিশদভাবে। প্রচুর হাসলেন। অনেক হাসালেনও।
দিনটি অবশ্য ছিল তার জন্য অম্ল-মধুর। টেস্ট ক্রিকেটে প্রায় ৪ বছর পর ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন এ দিন। যদিও নিষেধাজ্ঞা ও চোট-ছুটি-বিশ্রাম মিলিয়ে এই সময়ে টেস্ট খেলেছেন স্রেফ ৭টি। তারপরও, টেস্টে ১৮তম ৫ উইকেটের পর ১৯তম হতে সময় তো লাগল অনেক! ভালো লাগা তাই তার মনে খেলে যাওয়ার কথা।
তবে সেই সাফল্য উপভোগের সময় বা সুযোগ, পেলেন না তেমন। তিনি ৫ উইকেট পাওয়ার একটু পরই শেষ হলো লঙ্কান ইনিংস। এরপর বাংলাদেশের ইনিংস শুরু হতেই টপাটপ উইকেটের পতন!
তামিম ইকবাল ক্যারিয়ারে প্রথমবার আউট হলেন ‘পেয়ার’ বা জোড়া শূন্যতে, অধিনায়ক মুমিনুল হকও বিদায় নিলেন রান না করে। আত্মঘাতী রান আউটে ফিরলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, জীবন পেয়েও মাহমুদুল হাসান জয় আউট ১৫ রানে। ঘরের মাঠে তাই বাজেভাবে হারের শঙ্কায় দল। শেষ দিনে অপেক্ষায় ম্যাচ বাঁচানোর কঠিন লড়াই।
এই লড়াইয়ে সাকিব মূল বাধা মনে করছেন শ্রীলঙ্কার দুই পেসারকে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১০ উইকেটের ৯টিই নিয়েছেন কাসুন রাজিথা ও আসিথা ফার্নান্দো মিলে। দ্বিতীয় ইনিংসেও দুজন তিন উইকেট নিয়ে ফেলেছেন। শেষ দিনের উইকেটে যদিও স্পিনারদের নিয়ে দুর্ভাবনা থাকার কথা বেশি। তবে সাকিব বললেন, দুই পেসারকে সামলানোই হবে আসল চ্যালেঞ্জ।
“আপনি যদি দেখেন, মূল হুমকি হলো ওদের দুই ফাস্ট বোলার। ফাস্ট বোলাররা সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ ওভারের স্পেল করতে পারে। এই গরমে কতক্ষণ ওরা বল করতে পারবে? লাঞ্চ পর্যন্ত হয়ত দুজন সর্বোচ্চ ১০-১০ করে ২০ ওভার বল করতে পারবে। ওই সময়টা পার হলে আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। বল পুরনো হয়ে যাবে, বোলাররা ক্লান্ত হবে, ব্যাটসম্যান সেট।”
সেই লড়াইয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে সাকিবকেও। যদিও উইকেটে এখন আছেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস। দুজনই আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। এই টেস্টেই প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর দুজন গড়েছেন ২৭২ রানের রেকর্ড জুটি। তবে অবদান রাখতে হবে সাকিবকেও।
তিনি জেনুইন অলরাউন্ডার, স্রেফ বোলিংয়ে ৫ উইকেট নিয়ে তুপ্তির ঢেকুর তোলার উপায় নেই। দল তাকিয়ে থাকবে তার ব্যাটের দিকে। তিনি নিজেও তৈরি সেই চ্যালেঞ্জের জন্য। আপাতত তার চাওয়া, লাঞ্চের আগে যেন ব্যাটিংয়ে নামতে না হয়।
“আমিও চাই (ব্যাটিংয়ে ভালো করতে)… দলকে বাঁচাতে হলে, আমরা যারা আছি, এখনও ছয়টা উইকেট যারা আছে, সবাইকে অবদান রাখতে হবে। নইলে কঠিন হবে। পঞ্চম দিনে এরকম পরিস্থতি যখন আসবে, কাল প্রথম ঘন্টায় তো পুরো আক্রমণ করবে আমাদের, খুবই স্বাভাবিক। আমরা ওদের জায়গায় থাকলে তা-ই করতাম। আমাদের তা সামলাতে হবে। প্রথম ঘন্টায় যদি উইকেট না হারাই এবং লাঞ্চ পর্যন্ত যদি উইকেট না যায়, তাহলে হয়তো আমরা একটা জায়গায় আসার চেষ্টা করতে পারব।”
দিনটি বাংলাদেশের জন্য হতাশার হলেও সাকিবের সৌজন্যে সংবাদ সম্মেলন হলো আনন্দময়। সেই রেশ নিয়েই শেষ হলো দিন। নতুন দিনের জন্য আশার শুরু হয়তো সেই হাসির জোয়ার থেকেই!