ক্যাটাগরি

চোখের পাতা কাঁপে যে কারণে

যে পেশির কারণে চোখের পাতা খোলা আর বন্ধ হয় সেটাতে কোনো
কারণে খিঁচুনি ধরলে চোখের পাতা কাঁপতে পারে। চিকিৎসাশাস্ত্রে যাকে বলা হয় ‘মায়োকেমিয়া’।

“এই সমস্যা খুবই সাধারণ। আর নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। তাই
চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই,” চোখের এই সমস্যা নিয়ে এভাবেই ভরসা দেন ‘রাটগের্স নিউজার্সি
মেডিকেল স্কুল’য়ের ‘ইন্সটিটিউট অফ অপথামোলজি অ্যান্ড ভিজুয়াল সায়েন্স’য়ের সহকারী অধ্যাপক
ডা. রজার ই. টারবিন।

ইনসাইডার ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন,
“তবে এই পিটপিট বা চোখের পাতা কাঁপার সময় যদি চোখ লাল হতে থাকে, আলো সহ্য করতে না পারলে,
মুখে অবশভাব দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।”

একটি নয়, বহু কারণে চোখের পাতা কাঁপার সমস্যা দেখা দিতে
পারে।

পুষ্টির অভাব

পুষ্টিহীনতার কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফাইনবার্গ স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের
অপথামোলজি’র সহকারী অধ্যাপক ডা. লিজা এম. কোহেন বলেন, “সাধারণত ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে
চোখের পাতা কাঁপার সমস্যা হয়।”

এছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিগত সমস্যার মধ্যের রয়েছে- দেহে প্রয়োজনের
বেশি বা কম ক্যালসিয়াম থাকা। ভিটামিন বি-টুয়েল্ভ ও ভিটামিন ডি’র অপর্যাপ্ততা, ফসফেট
কম।

তবে পুষ্টির অভাবেই শুধু নয়, শারীরিক বিভিন্ন কারণেও চোখের
পাতা কাঁপার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যেমন- অবসাদ, অরুচি, কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা, পেশিতে টান
ইত্যাদি।

ডা. কোহেন বলেন, “এই সমস্যা কাটাতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
জরুরি। ফলমূল, অপ্রক্রিয়াজাত শষ্যের খাবার, চর্বিহীন মাংস, শুঁটিজাতীয় সবজিগুলো ভিটামিন
ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ। এসব খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।”

অবসাদ কাটাতে

মুখে বলা সহজ যে ভালোমতো ঘুমাতে হবে। তবেই কাটবে অবসাদ।
তবে মানসিক যন্ত্রণায় ঘুম হওয়াটাও সহজ নয়।

এজন্য ডা. কোহেন পরামর্শ দেন, “ভালো ঘুমের জন্য অভ্যাস
রপ্ত করতে হবে। অ্যালকোহল ও ড্রাগ থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত ১৫ মিনিট
ব্যায়াম করতে হবে।”

তারপরও ঘুমের সমস্যা হলে দেখাতে হবে ডাক্তার। কারণ ‘ইনসমনিয়া’,
থায়রয়েডের সমস্যা বা রক্তশূন্যতার কারণেও অবসাদ লাগতে পারে।

কম্পিউটার ভিশন
সিন্ড্রম

টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল বা এই ধরনের যান্ত্রিক পর্দার
দিকে তাকানোর পর চোখে যে কোনো অস্বস্তি বা দেখতে সমস্যা হওয়াকে ‘কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রম’য়ে
আক্রান্ত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।  

“অনেকক্ষণ ধরে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের এসব পর্দার দিকে তাকিয়ে
থাকলে চোখে চাপ পড়ে। সেখান থেকেও চোখের পাতা কাঁপতে পারে”, বলেন ডা. কোহেন।

তিনি পরামর্শ দেন, ঘণ্টা খানেক এই ধরনের বৈদ্যুতিক পর্দার
দিকে তাকিয়ে থাকার মধ্যেই বিরতি নিতে হবে। বিশ ত্রিশ মিনিট পরপর দূরে তাকাতে হবে।

কোনো কিছু অনেকক্ষণ ধরে কাছ থেকে দেখলে চোখের পেশিতে চাপ
পড়ে। তখন চোখের পেশিতে টান পড়ে। আর দূরে তাকালে চোখের পেশি শিথিল হয়।

চোখের শুষ্কতা

শুধু দুঃখে বা সুখেই মানুষের চোখ কান্না করে না, এই অশ্রুজল
চোখ আর্দ্র রাখতেও সাহায্য করে। আর এই অশ্রুর পরিমাণ অপর্যাপ্ত হলেই শুষ্ক চোখের সমস্যা
দেখা দেয়।

এর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- বয়সের সঙ্গে অশ্রুর পরিমাণ কমা,
অ্যালার্জির কারণে চোখের পানি অতিরিক্ত কারণে বের হয়ে গেলে, গাড়ি চালানো বা পড়ার সময়
চোখের পাতা কম ফেলা।

কোহেন বলেন, “শুষ্কতার সমস্যা থেকে চোখে টান পড়ে, চোখ পিটপিট
করার পরিমাণ বাড়ে, যা থেকে চোখের পাতা কাঁপতে পাড়ে।”

‘ড্রাই আই’য়ের আরও লক্ষণ হল- চোখ লালচে হওয়া, ঝাপসা দেখা,
আলো সহ্য করতে না পারা, চোখ জ্বলা বা চুলকানো।

আর এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় হল- কৃত্রিম অশ্রুর ড্রপ
ব্যবহার করা যা চিকিৎসকের পরামর্শে সংগ্রহ করা যায়। আর এই ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তার
দেখাতে হবে। কারণ শুষ্কতার সমস্যা থেকে চোখে স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

কখন যাবেন ডাক্তারের
কাছে

চোখের পাতা কাঁপা সাধারণ বিষয় হলেও, ডা. কোহেন ও টার্বিনের
ভাষ্যমতে নিচের লক্ষণগুলো থাকলে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

* দুই চোখেই সমস্যা হলে। * চোখের পাতা কাঁপার পাশাপাশি
এর আশপাশের ও মুখের পেশিতে সমস্যা দেখা দিলে। * 
সপ্তাহখানেকের বেশি সমস্যা হলে। * সমস্যা দিন দিন বাড়তে থাকলে। * মুখে দুর্বলতা,
অসাড়তা ব্যথা বা অস্বস্তি দেখা দিলে। * মাথাব্যথা ও দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকলে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন

মাস্ক ব্যবহারে হতে পারে শুষ্ক চোখের সমস্যা
 

গ্রীষ্মে চোখের সুরক্ষা
 

চোখ ভালো রাখতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস