ক্যাটাগরি

জনসনের লকডাউন পার্টিতে মাতলামি, বমি; হাতাহাতিও হয়েছিল

কোভিড বিধি ভেঙে ২০২০ সালের ১৮ জুনের একটি পার্টির ওই ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সু গ্রের তদন্ত প্রতিবেদনে।

সরকারি এক কর্মকর্তার বিদায় উপলক্ষে ডাউনিং স্ট্রিটের কেবিনেট রুমে ওই পার্টি শুরু হয়েছিল, যা কেবিনেট সেক্রেটারির রুম পর্যন্ত গড়িয়েছিল।

রাতভর পার্টি করে সর্বশেষ ব্যক্তি ভোর ৩টা ১৩ মিনিটে সেখান থেকে বের হন। সরকারের সাবেক হেড অব এথিকস হেলেন ম্যাকনামারা সন্ধ্যার দিকে ওই পার্টিতে অংশ নেন। অনুষ্ঠানের জন্য তিনি একটি কারাওকে মেশিন নিয়ে এসেছিলেন।

বুধবার প্রকাশিত সু গ্রের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “সেই পার্টি কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে। কিছু ব্যক্তি অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করেছিলেন। একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অন্য দুইজনের মধ্যে ছোটখাটো ঝগড়া হয়েছিল।”

দেশজুড়ে কোভিড সংক্রমণ এড়াতে সেসময় সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ ছিল ব্রিটেনে। সু গ্রে বলেছেন, ডাউনিং স্ট্রিটের ওই পার্টিতে সেই বিধি ভঙ্গ করা হয়েছিল।

বিবিসি জানিয়েছে, সু গ্রের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর পার্লামেন্টে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, “আমার সামনে যা ঘটেছে তার জন্য আমি সমস্ত দায় নিচ্ছি।”

যা কিছু ঘটেছে, সব কিছু থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথাও বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

ওই প্রতিবেদনের পর জনসনের পদত্যাগের দাবি জোরালো করেছেন বিরোধী নেতারা। এই দাবিতে ক্ষমতাসীন টোরি এমপিদেরও শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে লেবার পার্টির নেতা স্যার কির স্টারমার বলেছেন, “খেলা শেষ। এখন তার (জনসনের) তল্পিতল্পা গোছানোর সময়।”

তবে ডাউনিং স্ট্রিটের সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের বিষয়টি নাকচ জনসন বলেন, “আমাকে এগিয়ে যেতে হবে।”

অথচ তদন্ত কর্মকর্তা সু গ্রে তার প্রতিবেদনে বলেছেন, “অনেক আয়োজনের অনুমতি ছিল না। প্রধানমন্ত্রী এবং তার কর্মকর্তাদের অবশ্যই এই সংস্কৃতির জন্য দায় নিতে হবে।”

৩৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে

>> ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সংস্কৃতির জন্য রাজনৈতিক ও সরকারি নেতৃত্বকে অবশ্যই দায় নিতে হবে।

>> প্রিন্স ফিলিপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রাক্কালেও কর্মকর্তারা পার্টি করেছিলেন, যা ভোর ৪টা পর্যন্ত চলে।

>> ২০২০ সালের জুনে আরেকটি পার্টিতে কিছু ব্যক্তি অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করেছিলেন। একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। দুই ব্যক্তির মধ্যে ছোট হাতাহাতিও লেগেছিল।

>> ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ক্রিসমাস কুইজের পর এক পার্টিতে ‘মাতলামির’ কথা উল্লেখ করে ফটোগ্রাফারদের এড়িয়ে যেতে পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন এক কর্মকর্তা। এজন্য তিনি সবাইকে ডাউনিং স্টিটের পেছন দিক বের হয়ে যেতে বলেছিলেন।

‘অগ্রহণযোগ্য আচরণ’

সু গ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডাউনিং স্ট্রিটে নিরাপত্তাকর্মী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণের অনেক উদারহরণ রয়েছে।

এ বিষয়ে জনসনের ভাষ্য, কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় দায়ীদের খুঁজে বের করতে তিনি অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন।

গ্রে সেসব ঘটনার কথাও তার প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন, যেগুলোতে অংশ নেওয়া এবং মদপানের ব্যাপারে কর্মকর্তারা ধন্দে ছিলেন যে, সেখানে যাওয়া ঠিক হবে কিনা। তবে শেষ পর্যন্ত তারাও পার্টিতে যোগ দেন।

২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বরে ডাউনিং স্ট্রিটের প্রেস অফিসে একজন ক্লিনার দেখতে পান, দেয়াল ও ফটোকপি মেশিনের পেপারের বাক্সে রেড ওয়াইন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

২০২০ সালের মে মাসের অন্য আরেকটি অনুষ্ঠানের আগে জনসনের উপদেষ্টা মার্টিন রেনল্ডসকে পার্টি বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন এক উপদেষ্টা। পরে হোয়াটসঅ্যাপে রেনল্ডস উত্তর দিয়েছিলেন, তারা ওই ঝামেলা ‘পার করে ফেলেছেন’।

এ বছরের শুরুতে ডাউনিং স্ট্রিটের পদ থেকে রেনল্ডস পদত্যাগ করেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ফিরে যান।

রয়টার্স জানিয়েছে, রেনল্ডস এখনও কেন প্রশাসনে রয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে জনসন বলেছেন, নির্দিষ্ট একজন কর্মকর্তার বিষয়ে কথা বলা ‘ঠিক না।

ডাউনিং স্ট্রিটে লকডাউন আইন ভাঙার জন্য ব্রিটেনের পুলিশ মোট ৮৩ জনকে জরিমানা করেছে। এর মধ্যে জনসন, তার স্ত্রী ক্যারি এবং অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকও রয়েছেন, যারা ২০২০ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য নোটিস পেয়েছিলেন। গ্রের রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত ১৬টি ঘটনার মধ্যে এটিও রয়েছে।

সু গ্রের এই প্রতিবেদনের পর বরিস জনসনের পদত্যাগের জোর দাবি তুলেছেন বিরোধীদলের নেতারা।

লেবার নেতা স্টারমার বলেছেন, “গ্রের রিপোর্টটি ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের পচন প্রকাশ্যে এনেছে। এটি দেখিয়েছে, ডাউনিং স্ট্রিটের লোকেরা ব্রিটিশ জনগণের আত্মত্যাগকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে আসছে ।”

এসএনপি নেতা ইয়ান ব্ল্যাকফোর্ড এই প্রতিবেদনকে ‘গুরুতর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ডাউনিং স্ট্রিটে ওই পার্টি আয়োজনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন তিনি।

লিব ডেম নেতা স্যার এড ডেভি বলেছেন, “অন্য যে কোনো প্রধানমন্ত্রীকে এরকম প্রতিবেদনের জন্য পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হত। অথচ কনজারভেটিভ এমপিরা এখনও জনসনকে রক্ষা করে যাবেন, তাকে পদে থাকার অনুমতি দেবেন।”

আরও খবর


লকডাউনে পার্টি: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন ও চ্যান্সেলরকে জরিমানা
 


লকডাউনে ডাউনিং স্ট্রিটের পার্টি নেতৃত্বের ব্যর্থতায়: সু গ্রে
 


‘নেতৃত্ব দিন, নয়ত সরে দাঁড়ান’: পদত্যাগের চাপে জনসন
 


প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্যের আগেও জনসনের কার্যালয়ে চলেছে মদের পার্টি
 


ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টির তদন্ত শুরু করেছে ব্রিটিশ পুলিশ
 


লকডাউনের মধ্যে পার্টি: জনসনকে পদত্যাগের আহ্বান
 


ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে লকডাউনের পান পর্বে ‘আমন্ত্রিত ছিলেন ১০০ জন’