মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৩৪। শ্রীলঙ্কাকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠাতে এখনও তাদের চাই ১০৭ রান।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার স্রেফ সোয়া ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়ার অভিযানে নেমে ২৩ রানে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ!
প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতার স্মৃতি অবশ্যই এখন সবচেয়ে তরতাজা। তবে নিজেদের সবশেষ দুটি চতুর্থ ইনিংসে ব্যর্থতার ক্ষত এখনও খুব বেশি পুরনো হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় একবার ৫৩, অন্যবার ৮০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল দল।
তারপর এই প্রথম নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা হলো বিভীষিকাময়। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, হতে পারতো এর চেয়েও খারাপ!
ছোট্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পেয়ারের তেতো স্বাদ পেতে পারতেন মাহমুদুল হাসান জয়। কাসুন রাজিথার করা ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে ‘কট বিহাইন্ড ছিলেন’ তিনি। কিন্তু শ্রীলঙ্কা দলের কেউই বুঝতে পারেননি। আবেদনও করেননি তারা। ওভার শেষে রিপ্লেতে বোঝা যায় বলে ব্যাটের স্পর্শের ব্যাপারটি।
ব্যাটের কানায় লেগে দুই বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলেন জয়। ব্যক্তিগত ৯ রানে বেঁচে যান কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যর্থতায়। তৃতীয় স্লিপে রাজিথার বলে সহজ ক্যাচ জমাতে পারেননি এই বদলি ফিল্ডার।
জয়ের মতো ভাগ্যবান ছিলেন না তামিম। আসিথা ফার্নান্দোর বলে দ্বিতীয় স্লিপে সহজ ক্যাচ ধরতে গিয়ে তালগোল পাকালেও শেষ পর্যন্ত মুঠোয় রাখতে পারেন কুসল মেন্ডিস। বাংলাদেশের সফলতম ওপেনার পান ক্যারিয়ারের প্রথম পেয়ারের তেতো স্বাদ।
অহেতুক রান নেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হন বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত।
রিভিউ নিয়ে মুমিনুল হককে ফেরায় শ্রীলঙ্কা। রাজিথার অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়ার চেষ্টায় শূন্যতেই থামেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ২ বল খেলে তিনি খুলতে পারেননি রানের খাতা। টানা ৭ ইনিংসে দুই অঙ্কে যেতে পারলেন না বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
দুইবার ‘বেঁচে’ গিয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি জয়। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লাফানো বলে খোচা মেরে ধরা পড়েন দ্বিতীয় স্লিপে।
দশম ওভারে ২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কাঁপতে থাকা বাংলাদেশকে কক্ষপথে ফেরাতে লড়াই করছেন প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক ও লিটন। আগের ইনিংসে সাকিব ছয়ে খেললেও এবার প্রমোশন দিয়ে সেখানে পাঠানো হয়েছে ১৬০ ওভারের বেশি কিপিং করা লিটনকে।
দিনের শেষ সময়টা নিরাপদে কাটিয়ে দেন দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যান মুশফিক ও লিটন।
চতুর্থ দিন শেষে ম্যাচ যেখানে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে বাস্তবিক দুটি ফল সম্ভব, ড্র কিংবা শ্রীলঙ্কার জয়। সিরিজ হার এড়াতে হলে পঞ্চম দিনের সকালের সেশন নিরাপদে কাটিয়ে দিতে হবে বাংলাদেশকে।
বৃষ্টির জন্য তৃতীয় দিন অনেকটা সময় ভেসে যাওয়ায় শেষ দুই দিন খেলা শুরু হবে নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা আগে, সাড়ে নয়টায়। তাই আর্দ্রতা আরেকটু ভালোভাবে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে রাজিথা, আসিথাদের। সেই সুবিধা বৃহস্পতিবার ছিল বাংলাদেশের পেসারদের জন্যও। যদিও তা একেবারেই কাজে লাগাতে পারেনি তারা।
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে প্রথম দুই সেশনে অবিচ্ছিন্ন থেকে যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দিনেশ চান্দিমাল। তাদের জুটি শতরান স্পর্শ করার সঙ্গে লিডও পায় শ্রীলঙ্কা। লিড শতরানে নেওয়ার পরেই কেবল বিচ্ছিন্ন হন তারা।
নির্বিষ বোলিংয়ে ম্যাথিউস ও চান্দিমালকে তেমন একটা ভোগাতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ধীরে কিন্তু দৃঢ়ভাবেই এগিয়েছেন দুই অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। প্রথম সেশনে ৩৩ ওভারে যোগ করেন ৮৭ রান। দ্বিতীয় সেশনে রানের গতি একটু বাড়িয়ে ২৫ ওভারে তোলেন ৯০।
চা-বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারে চান্দিমালকে ফিরিয়ে ১৯৯ রানের জুটি ভাঙেন ইবাদত হোসেন।
এর আগে অবশ্য টেস্টে চার বছর পর নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে পৌঁছান চান্দিমাল। ৯১ রান থেকে ইবাদত হোসেনকে টানা দুই চারে ৯৯ রানে যান তিনি। এক বল পর কাভারে আলতো করে ঠেলে সিঙ্গেলের জন্য দৌড় দিতেই দুই হাত উঁচিয়ে ধরেন তিনি।
১৮১ বলে ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন চান্দিমাল। এর পাঁচটিই তিনি করলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ টেস্টে।
২১৯ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১২৪ রান করে চান্দিমালের বিদায়ের পর বেশি দূর এগোয়নি শ্রীলঙ্কার ইনিংস। সাকিব ও ইবাদতের চমৎকার বোলিংয়ে ৪১ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় সফরকারীরা।
এর মধ্যে ভাগ্যেরও একটু ছোঁয়া আছে। সাকিবের বলে নিরোশান ডিকভেলার বিপক্ষে স্টাম্পিংয়ের আবেদন করে বাংলাদেশ। পরে দেখা যায়, লঙ্কান বাঁহাতি বাটসম্যানের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে লিটনের গ্লাভসে গিয়েছিল বল। কট বিহাইন্ড হয়ে যান দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা লঙ্কান কিপার-ব্যাটসম্যান।
তৃতীয় নতুন বলে রমেশ মেন্ডিসকে এলবিডব্লিউ করে দেশের মাটিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় পেসার হিসেবে টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়ার আশা জাগান ইবাদত। প্রাভিন জয়াবিক্রমাকে এলবিডব্লিউ করে চার বছর পর টেস্টে পাঁচ উইকেটের উল্লাসে মাতেন সাকিব।
ইবাদত পরের ওভারে পাননি কোনো উইকেট। মুশফিক-সাকিবের র্যালি থ্রোয়ে আসিথা রান আউট হলে ৫০৬ রানেই থেমে যায় শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস।
ক্লান্তিকর দীর্ঘ দিনের শেষটায় বোলিংয়ে সাফল্যের খুশি মিলিয়ে যেতে বসেছে ব্যাটিংয়ে আরেকটি ব্যর্থতায়। মিরপুর টেস্টে হার এড়াতে কাটাতে হবে পঞ্চম দিনের অনেকটা সময়।
২৭৪ বলে ক্যারিয়ারের মন্থরতম সেঞ্চুরি স্পর্শ করা ম্যাথিউস শেষ পর্যন্ত ১২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৪২ বলে ১৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৬৫
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৮২/৫) ১৬৫.১ ওভারে ৫০৬ (ম্যাথিউস ১৪৫*, চান্দিমাল ১২৪, ডিকভেলা ৯, রমেশ ১০, জয়াবিক্রমা ০, আসিথা ২; খালেদ ২৩-৩-৮৫-০, ইবাদত ৩৮-৪-১৪৮-৪, সাকিব ৪০.১-১১-৯৬-৫, মোসাদ্দেক ১২-১-৩৮-০, তাইজুল ৪৯-১০-১২৪-০, মুমিনুল ৩-০-৭-০)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৩ ওভারে ৩৪/৪ (জয় ১৫, তামিম ০, শান্ত ২, মুমিনুল ০, মুশফিক ১৪*, লিটন ১*; রাজিথা ৬-৩-১২-১, আসিথা ৬-২-১২-২, জয়াবিক্রমা ১-০-৯-০)