ক্যাটাগরি

মার্শে দ্যু ফিল্মে কাদের সিনেমা ‍যায়, কীভাবে যায়

আলোচিত
এই শাখার সঙ্গে ফরাসি এই চলচ্চিত্র উৎসবের সম্পর্ক কী, ‍সেখানে কীভাবে, কারা সিনেমা
প্রদর্শন করাতে পারেন,এবার বাংলাদেশের তিন সিনেমা কীভাবে গেল-তার ঠিকুজি দিয়েছেন ঢাকার
এক চলচ্চিত্র সমালোচক ও এক সাংবাদিক।

মার্শে দ্যু ফিল্ম কী

বিশ্বের
বড় চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর একটি করে বাণিজ্যিক শাখা থাকে যেখানে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র
প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশক ও কলাকুশলীরা যোগ দেন; সিনেমা প্রদর্শনের পাশাপাশি সিনেমার
প্রযোজনা, পরিবেশনা ও নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করেন।

মার্শে
দ্যু ফিল্ম হল কান চলচ্চিত্র উৎসবের তেমনই এক বাণিজ্যিক শাখা। সমালোচকরা যেটিকে বলছেন,
কান চলচ্চিত্র উৎসবের আনুষ্ঠানিক কোনো শাখা নয়; আবার কানের বাইরেও নয়।

তাহলে
কেমন?-এমন প্রশ্নের জবাবে চলচ্চিত্র সমালোচক ও ২০০২
সালের কান উৎসবের ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট বিভাগের বিচারক আহমেদ মুজতবা জামাল জানালেন,
কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগ ও প্যারালাল বিভাগে নির্দিষ্ট সংখ্যক সিনেমা
নির্বাচন করে কান কর্তৃপক্ষ; এর বাইরে বিশ্বের হাজারও সিনেমা প্রদর্শনের জন্য মার্শে
দ্যু ফিল্ম করেছে।

“মার্শে দ্যু ফিল্ম একটি ফিল্ম মার্কেট; যে কেউ সিনেমা দেখাতে
পারেন। প্যাভিলিয়নে, হল ভাড়া করে কিংবা সৈকতে সিনেমা দেখাতে পারেন।বিভিন্ন দেশের পরিবেশক
ও প্রযোজকদের নিয়ে সিনেমার প্রচারণা চালাতে পারেন।”

“ইটস নাথিং আউট অব দ্য ফেস্টিভাল নাথিং ইনসাইড অব দ্য ফেস্টিভাল। এটা উৎসবের
একটা অংশ কিন্তু মার্শে দ্যু ফিল্মে সিনেমা থাকাটা খুব প্রেস্টিজিয়াস ব্যাপার-তেমন
কিছু না। আমাদের বইমেলায় যেমন যে কেউ যেতে পারে, ব্যাপারটা ওই রকম। কিন্তু এটা ওরাই
(কান কর্তৃপক্ষ) আয়োজন করে।”

সিনেমা
প্রদর্শনের পাশাপাশি কারও অনেকে চিত্রনাট্যের উপর প্রযোজক খুঁজে পেতে কিংবা কারও অসম্পূর্ণ
কাজ সম্পন্ন করতে মার্শে দ্যু ফিল্মে যান বলে জানান সাংবাদিক জনি হক; যিনি কয়েক বছর
ধরে কান চলচ্চিত্র উৎসব কাভার করছেন।

মার্শে দ্যু ফিল্মে কাদের সিনেমা, কীভাবে যায়

সিনেমা,
সিনেমার প্রকল্প কিংবা অন্য কোনো কাজে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে মার্শে দ্যু ফিল্মে
যেতে চাইলে আগে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সংগ্রহ
করতে হয় বলে জানালেন জনি হক।

অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাওয়া উপায় বাতলে তিনি জানালেন, বছরের
নির্দিষ্ট সময়ে মার্শে দ্যু ফিল্মের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে আবেদন করা যায়। নিজের প্রতিষ্ঠানের
নাম, ট্রেইলার দেখাতে চান না কী করতে চান-তা আবেদনে যুক্ত করে

মার্শে
দ্যু ফিল্মে যাওয়ার পর কানের মূল ভবনে, বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়নে কিংবা সৈকতে জায়গা
ভাড়া নিয়ে নিজেদের সিনেমা কিংবা ট্রেইলার প্রদর্শন করা যায়। কোথায় দেখাবেন তার উপর
নির্ভর করবে খরচের হিসাব।

মার্শে দ্যু ফিল্মের সঙ্গে কানের সম্পর্ক কী

আহমেদ মুজতবা জামালের ভাষ্যে, “এটা কান চলচ্চিত্র
উৎসবের অংশ; কান চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়া আর মার্শে দ্যু ফিল্মে যাওয়া একই বিষয় না। মার্শে
দ্যু ফিল্ম একটি বাজার। সেই বাজারে যে কেউ অংশ নিতে পারে। পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই
আসুক না কেন, তার ছবি নিয়ে অংশ নিতে পারবে।

এটা
চলচ্চিত্র উৎসবের অফিশিয়াল সেগমেন্ট না। আবার এটা একদম বাইরেও কিছু না। কানের ভেন্যুর
মধ্যেই, তারা এটাকে এলাও করে। বাইরের মানুষ যাতে সেখানে আসতে পারে।“

‘আবার ফেলে দেওয়ার মতোও না’

আহমেদ মুজতবা জামাল বলছেন, মার্শে দ্যু ফিল্ম হলো কানে যাওয়ার জন্য প্রথম
ধাপ। সেখান থেকে পরের ধাপে যাওয়ার স্পৃহা পেতে পারে। ওটাকে এন্ট্রি পোল বলা যায়। এটা
ফেলে দেওয়ার মতো না। এটা অফিসিয়াল না আবার উৎসবের বাইরেও কিছু না।

“মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য এটা কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে। তরুণ চলচ্চিত্রকারসহ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের বড় ধরনের অংশগ্রহণ থাকে। এটা একটা অভ্যস্ত করারও ব্যাপার।
এটা অভ্যস্ত করার জন্য। ওখান থেকে তারা আরও ভালো কিছু করার স্পৃহা তৈরি হবে। কান সেই
সুযোগটা করে দেয় মার্শে দ্যু ফিল্মে মাধ্যমে।”

এবারের মার্শে দ্যু ফিল্মে বাংলাদেশ

এ বছর
মার্শে দ্যু ফিল্মের সম্মানজনক দেশে হিসেবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত দেশ ভারতের প্যাভিলিয়নে
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার ট্রেইলার
প্রদর্শন করা হয়েছে।

প্রযোজক
ও চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল অ্যাক্রিডিটেশন নিয়ে ‘দিন: দ্য ডে’
ও ‘নেত্রী: দ্য লিডার’ সিনেমার ট্রেইলার নিয়ে গেছেন কানে; আফ্রিকান একটি প্যাভিলিয়ন
ভাড়া নিয়ে তিনি সিনেমার ট্রেইলার প্রদর্শন করেছেন।

এর বাইরে
গোয়া ফিল্ম বাজার হয়ে নুহাশ হুমায়ূনের ‘মুভিং বাংলাদেশ’ ও মাকসুদ হোসেনের
একটি চলচ্চিত্র প্রকল্প ছিল এবারের মার্শে দ্যু ফিল্মে।

কানে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কোথায়?

২০০২
সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টরস ফোর্থনাইট পুরস্কার পেয়েছিল তারেক
মাসুদের ‘মাটির ময়না’; এরপর ২০২১ কানের ‘আঁ সেত্রাঁ রিগা’ বিভাগে অফিসিয়াল
সিলেকশনে জায়গা পেয়েছিল ‘রেহানা মরিয়ম নূর’।

একদিন
মূল প্রতিযোগিতা বিভাগেও বাংলাদেশের সিনেমা নির্বাচিত হবে বলে আশা করছেন ঢাকা আন্তর্জাতিক
চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল।