দুই সপ্তাহ আগে প্রথম দফায় আমদানিতে এলসি মার্জিন বেড়ে যাওয়ার পর বিদেশ থেকে আসা ফলের দাম কিছুটা বেড়েছিল। এখন নতুন করে শুল্ক বাড়ানোর খবরে আরেক দফায় দাম বেড়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকান ঘুরে দেখা যায়, বিদেশি ফলের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে বিক্রিতে আর দোকানের তাকগুলোতে আমদানি করা ফলের জায়গা নিচ্ছে দেশি সব মৌসুমি ফল।
এ দুই কারণে বিদেশি ফলের আমদানিও কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, জ্যৈষ্ঠের এ সময়টাতে প্রতিবছরই আমদানি ফলের চাহিদা কমে বলে বিদেশ থেকে আসেও কম।
বাজারের স্থায়ী ফলের দোকান আর রাস্তার মোড়ে মোড়ে আম-জাম, লিচু, কাঁঠাল, আমরুজের সমারোহ কয়েকদিন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে। ক্রেতারাও এগুলোই কিনছেন বেশি বেশি। এতে বিদেশি ফলের দাম বাড়ার বিষয়টি খুব একটা সামনে আসছে না।
মৌসুমের শুরুতে বাজারে আসা লিচু সাজিয়ে রাখছেন পুরানা পল্টনের এক ফলের দোকানি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
মুখরোচক রসালো ফলের মৌসুম শুরুর এ সময়টায় প্রতিকেজি আম এখন ৭০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে মিলছে। লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। কাঁঠাল সেভাবে আসতে শুরু না করায় দাম কিছুটা বাড়তি।
দেশি ফলের এমন সমারোহের মধ্যে সরকারি নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের কারণে দাম বাড়ছে বিদেশি ফলের।
বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে রিজার্ভের ওপর থেকে চাপ কমাতে গত ২৩ মে ফুল, ফল, প্রসাধনী ও আসবাব পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনিবআর)।
আপেল, আঙুর, লেবুজাতীয় ফল, কলা, ডুমুর, আনারস, পেয়ারা, আম, অ্যাভোকাডো, তরমুজ, নানা জাতের বাদাম আমদানিতেও ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়।
মিরপুর বড়বাগ বাজারের পাশে ফুটপাথের ফল বিক্রেতা শাহ আলম জানান, গত দুইদিন ধরে বাদামতলী ফলের বাজারে দাম বাড়ছে। আপেল, মাল্টা, আঙুর, নাগফলসহ সব ধরনের আমদানি করা ফলের দাম ঊধ্বর্মুখী। ফলে খুচরায়ও দাম কিছুটা বাড়াতে হয়েছে।
“সব ধরনের আপেলের ১৫ কেজির কার্টনে নতুন করে দাম বেড়েছে ২০০ টাকা করে। খুচরায় আমরা কেজিতে ২০ টাকা করে বাড়িয়েছি। অস্ট্রেলিয়ান আঙুর কার্টন ৪০০০ থেকে বেড়ে ৪৪০০ টাকা হয়েছে। খুচরায় দাম ৫০০ থেকে বেড়ে ৫৫০ টাকা হয়েছে। নাগফল তিনদিন আগে বিক্রি হত ৩৫০ টাকা কেজি, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা করে,” বলেন ওই বিক্রেতা।
ঢাকার পুরানা পল্টনের ফলের দোকানে আকার ভেদে ১০০টি সোনারগাঁওয়ের কদমি লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৭০০ টাকায় এবং দিনাজপুরের চায়না-থ্রি ৮০০-১,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
এ দোকান থেকে লিচু কিনতে আসা মিরপুর স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান শাহীন বলেন, আপেল ও মাল্টার দাম এখন যেভাবে বাড়ছে, তাতে আপাতত খাওয়ার চিন্তা বাদ দেওয়াই উচিত। তারচেয়ে বরং দেশি আম-লিচু খেয়ে মানুষ পুষ্টি চাহিদা মেটাতে পারে।
মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের বিক্রেতা মোক্তার হোসেন জানান, শুক্রবার থেকেই মাল্টার ১৫ কেজির কার্টনে ১৫০ টাকা করে দাম বেড়েছে। আঙুর, আনার, ড্রাগনের দামও একইভাবে বেড়েছে। সরকার নতুন করে ফল আমদানির ওপর কর বাড়িয়েছে। সেকারণেই দাম বাড়াতে হয়েছে বলে পাইকারি বিক্রেতারা তাদের জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ভালো মানের ড্রাগন ফল কিনতে এখন পাইকারিতে ৩৩০ টাকা দিতে হচ্ছে। এতে বিক্রি করতে হয় প্রতিকেজি ৪০০ টাকায়। এরচেয়ে মানের দিক থেকে একটু পিছিয়ে থাকা ড্রাগন বিক্রি করা হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। অস্ট্রেলিয়ান আঙুর সারাবছর ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৫০ টাকায়।
অবশ্য বাদামতলীতে বাংলাদেশ ফল আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলছেন ভিন্ন কথা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বাদামতলীতে ফলের দাম খুব একটা বাড়েনি। বরং গত একমাস ধরে আমদানিকারকরা ফল আমদানি একবারেই কমিয়ে দিয়েছে।
“বর্তমানে একদিকে দেশি ফলের মৌসুম। অন্যদিকে সরকার এলসি মার্জিন বাড়িয়েছে, এখন আবার নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা গত একমাস ধরেই ফল আমদানি প্রায় স্থগিত রেখেছে। এরপরেও কেউ কেউ আমদানি করছে। কিন্তু তারা ফলের কাঙ্খিত দাম পাবে না। কারণ, গ্রীষ্মে এমনিতেই চাহিদা কম থাকে। তার ওপর এখন শুল্ক বাড়ার কারণে দাম অনেক বেড়ে যাবে,” বলেন তিনি।
আরও পড়ুন
ডলার বাঁচাতে আমদানি আরও কঠিন করল বাংলাদেশ ব্যাংক