ক্যাটাগরি

করপোরেট কর আরও কমার আভাস, অগ্রিম করেও রেহাই চান ব্যবসায়ীরা

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলছেন, করপোরেট কর কমানোর চেয়ে অগ্রিম কর প্রত্যাহার তাদের দৃষ্টিতে বেশি জরুরি।

বর্তমানে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত নয়- এমন কোম্পানিকে ৩০ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিতে হয়।

আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে দুই ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রেই করপোরেট কর হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্টের মত কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন করে করপোরেট কর কমানো হলে রাজস্ব আহরণ আরও কিছুটা কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে নতুন দেশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়িয়ে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর কৌশল হিসেবেই আমরা করপোরেট কর হার কমাতে চাইছি।”

এনবিআরের প্রস্তাব অনুমোদন পেলে আগামী বাজেটে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার নেমে আসতে পারে ২০ শতাংশে। তালিকাভুক্ত নয়- এমন কোম্পানির কর হার কমে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে।

সেক্ষেত্রে টানা তৃতীয়বারের মত কমানোর হবে বাংলাদেশে। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয়- উভয় ধরনের কোম্পানির করপোরেট কর হার হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমানো হয়েছিল। তার আগের অর্থবছর কেবল তালিকাভুক্ত নয়- এমন কোম্পানির কর হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট কমানো হয়েছিল।

বিদ্যমান কর কাঠামো অনুযায়ী, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানের কর হার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ও তালিকার বাইরে থাকলে ৪০ শতাংশ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এছাড়াও মানুষের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও তামাক পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির কর হার সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ। এর বাইরে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর কাছ থেকেও সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ কর আদায় করা হয়। তবে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেট কোম্পানির কর দিতে হয় ৪০ শতাংশ। 

সমবায় প্রতিষ্ঠান (কো-অপারেটিভ সোসাইটি) এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের কর ১২ শতাংশ। এর বাইরে তৈরি পোশাক খাতের পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ১০ শতাংশ ও সাধারণ কোম্পানির কর ১২ শতাংশ। টেক্সটাইল শিল্পের করপোরেট কর ১৫ শতাংশ।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করপোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্তকে অবশ্যই আমরা সাধুবাদ জানাব। কিন্তু এখন করপোরেট কর কমানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে অগ্রিম কর প্রত্যাহার।”

২ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট হারেও যদি কর কমানো হয়, তারপরও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের করপোরেট কর সবচেয়ে বেশি থাকবে বলে মন্তব্য করে তিনি।

জসিম উদ্দিন বলেন, “এখন আমাদের বেশি সমস্যা হচ্ছে অগ্রিম কর নিয়ে। এনবিআর অগ্রিম কর (এটি) এবং অগ্রিম আয়কর  (এআইটি) নামে এই কর আদায় করে। এই কর পরে ফেরত দিতে হয়। অর্থাৎ পরে এসব কর সমন্বয় করতে হয়। এই কর ব্যবস্থাপনায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্যায় পড়ে। আমরা এটা প্রত্যাহার চাই।”

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান- বিআইডিএস এর জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. জায়েদ বখত করপোরেট কর হার আরও কমানোর প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরাও শুনছি যে সরকার এবারও করেপারেট কর হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কিছুটা হলেও বাড়াবে।”

তবে অগ্রিম করের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “এটা সরকারের রাজস্ব আহরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্সট্রুমেন্ট বলে আমি মনে করি। কর আদায় করার সময় সরকার অগ্রিম কর হিসেবে কেটে নেয়। পরে রিটার্ন দাখিলের সময় তা সমন্বয় করা হয়।

“কিন্তু সরকারের কাছে পাওনা থাকলে তা সরকার সময়মত পরিশোধ করে না। এতে স্বচ্ছতা থাকা উচিত।”