শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ ১০ উইকেটে হেরেছে মূলত তিন দফার ব্যাটিং ধসে। ম্যাচের প্রথম সকালেই টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দল ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্রেফ ২৪ রানের মধ্যে। সেখান থেকে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের অসাধারণ দুটি সেঞ্চুরি দলকে উদ্ধার করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে আবার বিধ্বস্ত হয় টপ অর্ডার। এবার ৫ উইকেট নেই ৫৩ রানের মধ্যে।
লিটন এবারও দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলেন। সঙ্গে পান সাকিব আল হাসানকে। কিন্তু দুজনের শতরানের জুটি শেষ হতেই যথারীতি আরেকটি ধস। শেষ দিনে ১৩ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের হার।
এই টেস্ট কোনো বিচ্চিন্ন ঘটনা নয়। সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই টেস্টেই দেখা গেছে ভয়াবহ ব্যাটিং ধস। এমনকি বছরের শুরুতে নিউ জিল্যান্ডকে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে হারালেও দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে পড়ে ২৭ রানের মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ৫ উইকেট পড়ে ৩৯ রানের মধ্যে।
শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমন একের পর এক ব্যাটিং বিপর্যয় নিয়েই প্রশ্ন হলো সবার আগে। কোচ বললেন, কারণ তার জানা নেই। তবে সম্ভাব্য সমাধান ভাবার চেষ্টা করলেন তিনি।
“যদি উত্তরটা জানতাম (ধস কেন হচ্ছে), তাহলে তো এরকম হতো না! তবে ভিন্ন কিছু করতে হবে আমাদের। সেটা হতে পারে ব্যাটিং অর্ডার বদলানো। দু-একটি ব্যাপার ভেবে দেখতে হবে আমাদের। ২৪ রানে ৫ উইকেট, ২৩ রানে ৪ উইকেট, এসব জায়গা থেকে টেস্ট জেতা যায় না।”
“এসব নিয়ে আমাদের তাই ভাবতে হবে এবং কিছু একটা বদল আমাদের করতেই হবে। গত ৬ থেকে ৮ মাসে অনেক বেশিই হয়েছে এটা।”
গত বছরের শুরু থেকে বেশ কয়েকটি টেস্টে খুব ভালো অবস্থানে থেকেও শেষ পর্যন্ত হারের বেদনায় পুড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। ডমিঙ্গোর মতো, ছোট ছোট ভুলের বড় খেসারত দিচ্ছে দল।
“আমরা ভালো অবস্থানে যাচ্ছি, কিন্তু এরপর হুট করেই অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চারদিন ধরে হয়তো ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি, কিন্তু একটি সেশন এত বাজে হচ্ছে যে আর ফেরার উপায় থাকছে না। আমি নিশ্চিত, ক্রিকেটারদের জন্যও এটা হতাশাজনক। ওরা চেষ্টা করছে লড়াইয়ে ফেরার, কিন্তু একটা পর্যায়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।”
“শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেট পড়ে গেছে, তার পরও ড্র করে ফেলেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ ইনিংসে ৪০০ তাড়া করে ফেলছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৮০ রানে এগিয়ে আছি ৫ উইকেট হাতে রেখে, চট করে চার উইকেট পড়ে যাচ্ছে। খুব ভালো অবস্থানে ছিলাম। রাব্বির (ইয়াসির আলি) রান আউটের পর সব বদলে যাচ্ছে। ছোট ছোট ভুলের কারণে সব ভেস্তে যাচ্ছে। আশা করি, অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তবে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে প্রয়োজন জয়।”
ডমিঙ্গোর মতে, ক্রিকেটাররা এভাবে বারবার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে থাকলে কোচ হিসেবে একটা পর্যায়ে অসহায়ত্ব কাজ করে। তবে ক্রিকেটারদের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন না তিনি।
“অবশ্যই, খুবই হতাশ লাগে। তবে আমরা জানি, ছেলেরা চেষ্টার সর্বোচ্চ করছে। দু-একটি ব্যাপার আমাদের পক্ষে আসেনি। আমরা একটি রিভিউ নিতে পারিনি, দু-একটি সিদ্ধান্ত বিপক্ষে গেছে। আমি গিয়ে যদি সবার সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি করি, যদি বলি ওরা ভীষণ বাজে, তাহলে তো লাভ নেই কোনো। আমার কাজ হলো ওদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলায় সহায়তা করা, যেন ওরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে (পরের সফর) টেস্ট জিততে পারে।”