পিয়ংইয়ংয়ের ওপর ২০০৬ সাল থেকে
চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করার পর বৃহস্পতিবারই প্রথম জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ নতুন নিষেধাজ্ঞার
প্রশ্নে প্রকাশ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ল।
নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১৩ সদস্য
রাষ্ট্রের সবাই ওয়াশিংটনের উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও স্থায়ী সদস্য
রাষ্ট্র চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতায় প্রস্তাবটি খারিজ হয়ে যায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে,
এ খসড়ায় উত্তর কোরিয়ায় তেল ও তামাক রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল;
দেশটির নেতা কিম জং উন একজন অবিরাম ধূমপায়ী। এতে হ্যাকিং গোষ্ঠী ল্যাজারাসকে কালো তালিকাভুক্ত
করার কথাও বলা হয়েছিল; এই গোষ্ঠীটি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের।
বুধবার উত্তর কোরিয়া তিনটি ব্যালিস্টিক
ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার একদিন পর নিরাপত্তা পরিষদে ওই নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার উত্তরপূর্ব এশিয়া সফর শেষ করে দেশে ফিরে যাওয়ার পরদিন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো
ছোড়ে উত্তর কোরিয়া। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে তাদের একটি বৃহত্তম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক
ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র
উৎক্ষেপণের ওপর নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে। ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই
একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে চলছে বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ দেশটি।
চীন, রাশিয়ার বিরোধিতায় তাদের
উত্থাপিত প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়ার পর জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা
টমাস-গ্রিনফিল্ড দিনটিকে ‘হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করেন। এই পদক্ষেপে উত্তর কোরিয়া আরও
সাহসী হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাইডেন এশিয়া ছাড়ার পর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল উত্তর কোরিয়া
তিনি জানান, ওয়াশিংটনের মূল্যায়ন
অনুযায়ী চলতি বছর উত্তর কোরিয়া ছয়টি আইসিবিএম উৎক্ষেপণ করেছে এবং ‘একটি পারমাণবিক পরীক্ষা
চালানোর জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে’।
পরিষদে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি
নিবেনজিয়া বলেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ পুরোপুরি ‘অচল অবস্থা’
তৈরি করবে।
চীনের রাষ্ট্রদূত ঝং চান বলেন,
উত্তর কোরিয়া বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো লাভ হবে না বরং আরও নেতিবাচক
প্রভাব পড়বে ও সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়বে।
গত ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা
পরিষদ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীর তহবিল
বন্ধে স্থির ও সর্বসম্মতভাবে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গেছে। পরিষদ সর্বশেষ ২০১৭
সালে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করেছিল।
তারপর থেকে মানবিক বিবেচনায় দেশটির
ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য চাপ দিচ্ছিল চীন ও রাশিয়া। বন্ধ দরজার পেছনে
নিরাপত্তা পরিষদের উত্তর কোরিয়া বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা কমিটির অনেক সিদ্ধান্ত তাদের কারণে
পিছিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোটে প্রথমবারের
মতো প্রকাশ্যে ওই ঐক্য ভাঙল।
নতুন একটি নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তা
পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র- রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের
কেউ তাদের ভিটো ক্ষমতা প্রয়োগ করার পর জাতিসংঘষের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের সাধারণ পরিষদকে
বৈঠকে বসতে হয়। তাই এখন এ পরিষদ আগামী দুই সপ্তাহ উত্তর কোরিয়া নিয়ে আলোচনা করবে।