গাজীপুর শহরের জোড়পুকুর পাড় এলাকায় এই বাগান করে তিনি ‘বাড়ির ছাদে বাগান
সৃজন’ ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়ে পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা দীপঙ্কর
বরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মনিরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি শখের বশে ২০১৪ সালের দিকে
অল্পকিছু গাছ লাগান। এরপর উৎপাদনমুখী ও বাণিজ্যক করার চিন্তা করেন।
“সেই ভাবনা থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ঔষধি গাছ, সবজি ও নানা ধরনের
ফলের গাছ আমদানি করি।”
এ কাজে তাকে তার স্বামী আকরাম হোসেন সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেন বলে জানান
মনিরা।
তিনি বলেন, “আকরাম যতবার বিভিন্ন দেশে গেছেন, ততবার আমার জন্য নিয়ে এসেছেন
কোনো না কোন চারা।”
তার ছাদবাগানে দেশি-বিদেশি প্রায় দেড় হাজার উদ্ভিদ আছে দাবি করে তিনি বলেন,
এর মধ্যে ঔষুধি গাছ আছে ৪০ প্রজাতির, শোভাবর্ধনকারী
গাছ ৫৬ প্রজাতির আর বিশেষ প্রজাতির গাছের সংখ্যা ২৬। দেশি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির গাছ
আছে সাত প্রজাতির। ফলদ গাছ ৯৯ প্রজাতির। অন্যান্য অন্তত ১০০ প্রজাতির গাছ আছে ছাদে।
মনিরা বলেন, ঔষধি গাছের মধ্যে আছে, অর্জুন, আমলকী, বহেরা, হরীতকী, ঘৃতকুমারী,
নিম, তুলসী, থানকুনি, বাসক, পেইন কিলার, অ্যাড্রেসিয়া বেরি, ক্লিন স্টোমাক, চেইন অব গ্লোরি, রুয়েলিয়া, রেসিলিয়া, ডেইজি, কিডনি
প্লান্ট, ভ্যানিলা অর্কিড, কর্পূর, জয়ত্রী, গোলমরিচ, সুইট রেসিন, ট্রি রেসিন, কারি
পাতা প্রভৃতি।
মৌসুমি সবজির তালিকা দিতে গিয়ে মনিরা বলেন, আছে লেটুস, করলা, ধনেপাতা,
বেগুন, কাকরোল, পটল, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লাউ, লাল ঢেরস, সিম, শসা, টমেটো সহ আরো
বিভিন্ন প্রজাতি গাছ শোভা পাচ্ছে মনিরার বাগানে। এছাড়া দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় জাতের মধ্যে
আছে ওল্ড চন্ডাল, আগর, সিভিট, হলদু, কৃষ্ণ বট, অশোক, কর্পূর প্রভৃতি।
মনিরার স্বামী আকরাম হোসেন জানান, প্রথম দিকে ছাদবাগানকে বাণিজ্যিক রূপ
দিতে তারা কিছু চারা বিক্রি করতেন। পরে আরও বড় পরিসর নিয়ে ঔষধি গাছ আর ফলের চারা তৈরির
চিন্তা করেন।
নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে চারা উৎপাদন, পরিচর্যা ও অল্প জায়গার সর্বোত্তম
ব্যবহার নিয়ে প্রশিক্ষণও দেন তারা।
আকরাম বলেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ফেইসবুকে ‘ প্লান্টস ফ্রম মুন ‘
নামের একটি গ্রুপ খোলা হয়। সেখানে অনেক মানুষ যুক্ত হন।
বাগানের পাশাপাশি ছাদে হাউজ তৈরি করে মাছ চাষও করেন তারা। গাছের পুষ্টি
যোগাতে মাছের হাউজ থেকে পানি ব্যবহার করেন। উচ্ছিষ্ট দিয়ে নিজেরাই উৎপাদন করেন জৈবসার।
এই সার বাজারের যেকোনো সারের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ বলে তাদের দাবি।
তাদের বাগানের খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর ধারাবাহিকতায়
‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০২০’-এ মনোনীতদের তালিকায় মনিরার নাম আসে।
মনিরা বলেন, “এই খবরে আমার পরিবারের সবাই খুশি, যা আমার কাজে উৎসাহ বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুণ। এভাবে উদ্যোক্তারা
উৎসাহিত হলে দেশে বেকারত্ব কমবে এবং বেকাররা স্বাবলম্বী হয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।”
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান মনিরা।
মনোনীতরা আগামী ৫ জুন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর
কাছ থেকে পুরস্কার নেবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।