ক্যাটাগরি

শ্রদ্ধা আর স্মৃতিচারণে সাইমন্ডসকে শেষ বিদায়

এই মাসের মাঝামাঝি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬ বছর বয়সে ওপাড়ে পাড়ি জমান সাইমন্ডস। শুক্রবার সকালে পারিবারিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর সাইমন্ডসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে টাউন্সভিলের রিভারওয়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়েছিল তার পরিবার, বন্ধু, সতীর্থ থেকে শুরু করে ভক্তরা।

দুর্দান্ত এক ক্রিকেটার ও বর্ণময় চরিত্র সাইমন্ডসের একটি ক্রিকেট ব্যাট, মাছ ধরার ছিপ, কাঁকড়ার পাত্রসহ তার ক্যারিয়ার জুড়ে ব্যবহার করা ক্যাপগুলি প্রদর্শন করা হয় সেখানে।

সাইমন্ডসকে কখনও ‘রয়’, কখনও ‘সাইমো’ নামে ডাকতেন সতীর্থ-বন্ধু-পরিজনরা। তার সাবেক সতীর্থ রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ড্যারেন লিমানরা শোনান তাদের খেলোয়াড়ী জীবনের পুরনো কিছু গল্প। তুলে ধরেন কীভাবে ‘রয়’ মাঠে ও মাঠের বাইরে তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু জিমি মাহের ও ম্যাথু মটও তার জীবনের গল্পগুলির স্মৃতিচারণ করেন।

গভীর রাতে আগুনের পাশে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার সময় প্রিয় কয়েকটি কবিতা শোনার আশায় কবি রুপার্ট ম্যাককলকে টেলিফোন করতেন সাইমন্ডস। ম্যাককল স্মরণ করেন সেসব।  

একটি ভিডিও প্রদর্শনীর পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পরিচালক গ্রেগ রওয়েল শ্রদ্ধাঞ্জলি কার্যক্রম শুরু করেন, যে ভিডিওতে দল ও অন্যদের প্রতি সাইমন্ডসের নিবেদনের কিছু ঘটনা, তার ঘটনাবহুল জীবনের নামা মুহূর্ত তুলে ধরে হয়।

দুর্দান্ত এক ক্রিকেটার হলেও মাঠের ভেতরে-বাইরে বিতর্ক সাইমন্ডসের নিত্যসঙ্গী ছিল। মাতাল হয়ে মাঠে আসা, টিম মিটিং বাদ দিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া; এসব কারণে পড়েছিলেন নিষেধাজ্ঞার মুখে। একের পর এক বিতর্কে না জড়ালে তার ক্যারিয়ার আরও দীর্ঘ হতো নিশ্চিতভাবে।

লিমান তাকে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে অভিহিত করেন। গিলক্রিস্ট বলেন, পুরনো বন্ধুরা সাইমন্ডসের ক্রিকেট জীবনের কথা উল্লেখ না করে যখন তার মাঠের বাইরের জীবন সম্পর্কে কথা বলে, সেটা তাকে বেশি আঘাত করে। 

ছবি: ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

ছবি: ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

“একজন ব্যক্তি হিসেবে তার সম্পর্কে আমরা এত কথা বলেছি যে, সে কোন স্তরের ক্রিকেটার ছিল, তা বলতে আমরা ভুলে যাই।”

সাইমন্ডস কেমন ক্রিকেটার ছিলেন, তা ফুটে উঠল সাবেক অধিনায়ক পন্টিংয়ের কথা।

“সে অসাধারণ একজন মানুষ এবং দুর্দান্ত সতীর্থ ছিল। আমি যদি আগামীকাল একটি টেস্ট ম্যাচ, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির দল বাছাই করি তাহলে সপ্তাহের প্রতিদিন সে আমার দলে থাকবে।”

ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে জন্ম হলেও সাইমন্ডসের বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায়। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ ছিল তার। ১৯৯৫ সালে কিশোর বয়সে তাকে তার জন্মভূমির প্রতিনিধিত্ব করতে বলা হয়েছিল। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট মাতিয়ে ইংল্যান্ড ‘এ’ দলে ডাকও পান।

জুনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে দেখা হওয়ার পর থেকে সাইমন্ডসের বন্ধু ও কিছুদিন আগে ইংল্যান্ডের সাদা বলের কোচের দায়িত্ব নেওয়া ম্যাথু মট বললেন, সবসময় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলারই স্বপ্ন দেখেছেন সাইমন্ডস।

“সে অবশ্যই এটা (ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা) বিবেচনা করেছিল। কিন্তু সে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে মরিয়া ছিল। এটা তার শৈশবের স্বপ্ন ছিল, এটা কখনোই আর্থিক বিষয় ছিল না।”

২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ে বড় অবদান ছিল সাইমন্ডসের। ওই দশকে টেস্ট দলেও বছর দুয়েক তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

প্রায় ১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৯৮ ওয়ানডে খেলে তার রান ৫ হাজার ৮৮। সেঞ্চুরি ৬টি, ফিফটি ৩০টি। ব্যাটিং গড় ৩৯.৭৫। তবে তিনি ‘স্পেশাল’ ছিলেন যে কারণে, তা খানিকটা ফুটে ওঠে তার স্ট্রাইক রেটে, ৯২.৪৪। বল হাতে উইকেট ১৩৩টি।

টেস্ট খেলেছেন ২৬টি। ২ সেঞ্চুরি ও ১০ ফিফটিতে ১ হাজার ৪৬২ রান করেছেন ৪০.৬১ গড়ে। উইকেট নিয়েছেন ২৪টি। টি-টোয়েন্টির তখনও কেবল শুরুর সময়। ম্যাচ খেলতে পেরেছেন ১৪টি। ৪৮.১৪ গড় ও ১৬৯.১৪ স্ট্রাইক রেটে রান তার ৩৩৭, উইকেট ৮টি।

তবে এসব রেকর্ড-পরিসংখ্যান সাইমন্ডসকে বোঝাতে পারবে সামান্যই। ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে কার্যকর ক্রিকেটারদের একজন মনে করা হয় তাকে। ক্রিকেট ইতিহাসে তিনি আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবেন তার ফিল্ডিংয়ের জন্যও।

‘হেই ট্রু ব্লু’ গানের সুরে সমাপ্তি টানা হয় শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠানের। তবে অ্যান্ড্রু ‘রয়’ সাইমন্ডসের স্মৃতি চিরকাল ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।