১০ দিন ধরে পানিতে নিমজ্জিত থেকে ধান পচে গেছে, সেই ধান
কেটে আনার চেষ্টা করছেন কৃষক। এ ছাড়াও তলিয়েছে বাদাম, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত। অনেক
কৃষককে খালি হাতে মাঠ থেকে ফিরতে হয়েছে। অফসোস করে বলেছেন, তাদের গোলা এবার
একেবারে শূন্য।
শনিবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল
চন্দ্র সোম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে জেলার কয়েকটি
উপজেলার প্রায় এক হাজার ১০০ হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। আমরা
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছি। তাদেরকে কৃষি মৌসুমে
সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হবে।”
কৃষি বিভাগের মতে, ধান ছাড়াও আউশ বীজতলা ১৩০ হেক্টর, আউশ
ধান ৩০ হেক্টর, সবজি ৭০ হেক্টর এবং ৯৫ হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে।
তবে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলনের’ সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়
দাবি করেন, কৃষি বিভাগ যে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দিয়েছে, প্রকৃত ক্ষতি তার চেয়ে বেশি।
তিনি দাবি করেন, “পাঁচ হাজারের বেশি হেক্টর জমির ধান
তলিয়ে গেছে। এখান থেকে কোনো ধান পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রকৃত
তালিকা করে তাদেরকে বিশেষ সহযোগিতা দেওয়া উচিত। আগামী বোরো মৌসুম পর্যন্ত তাদেরকে
সহযোগিতা দিলে তারা আবারও চাষবাস করতে পারবেন।“
কৃষকরা জানিয়েছেন, গত ১৪ মে থেকে সুনামগঞ্জে হঠাৎ পাহাড়ি
ঢল ও টানা বর্ষণ শুরু হয়। ১৭ মে থেকে পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। এর পরের তিন
থেকে চার দিনের মধ্যে জেলার ছাতক, দোয়রাবাজার, সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাসহ
বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। চোখের সামনে তলিয়ে যায় পাকা বোরো ধান।
সদর উপজেলার অচিন্ত্যপুর গ্রামের কৃষক গৌছ আলী (৬৫) এবার
২৪ কেদার জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। ধান যখন সবে পাকতে শুরু করেছিল এর মধ্যে একদিন
সকালে ওঠে দেখেন, সব পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
“যেখানে পাকা ধানের ঢেউ ছিল, সেখানে পানির ঢেউ। এরপর থেকে
মনে শান্তি নেই। কীভাবে বছরের খাবার সংগ্রহ করব, সংসারের চাহিদা মেটাব- এই
দুঃশ্চিন্তায় ঘুম আসছে না।“
তিনি আরও বলেন, যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা
করে সরকারিভাবে বিশেষ সহযোগিতা দেওয়া উচিত।
সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের কৃষক লিলু মিয়া (৬০) বলেন, “আমার
প্রায় পাঁচ কেদার জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। জমিতে কাঁচি লাগাতে পারিনি। এত পরিশ্রম
করে, ২০-২৫ হাজার টাকা ঋণ করে চাষ করেছিলাম। আমার সব নষ্ট করে গেল। এখন কী খেয়ে
বাঁচব, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাব কেমনে?”
সদর উপজেলার সাক্তারপাড়া গ্রামের কৃষক সফর আলীর (৪০) ১০
কেদার জমির ধান ও বাদাম একদিনের পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গিয়েছে। পানি নামছে এক
সপ্তাহ পর। তাই সব ধান পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, “খরচার হাওরের উজানের ধান এবারের অকাল বন্যায়
সব ডুবাইয়া নষ্ট করে দিয়ে গেছে। এখন আমরা কিভাবে চলব। সরকার আমাদেরকে বাঁচার উপায়
করে দিক।”
সফর আলী দাবি করেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সারা বছরের
মাসোহারা ভিত্তিতে সহযোগিতা করা হোক।
লালপুর গ্রামের কিষাণী রেহানা বেগম (৪৫) বলেন, “আমরা
ক্ষেত করেছিলাম, একদিনের পানিতে চোখের সামনে সব নষ্ট হয়ে গেছে। ফসল হারিয়ে এখন
হায় হায় করছি আমরা।“
“বন্যার পানিতে যা নষ্ট হয়ে গেছে তা থেকে কোনো ফলন আসবে
না। আমরা এখন কী করব, কী খাব। সরকার আমাদেরকে একটি উপায় করে দিলে ভালো হয়।”
আরও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে বন্যায় ‘শত কোটি’ টাকার ক্ষতি
সুনামগঞ্জে বন্যায় ধসে গেল ৩ সেতু
বন্যা: সুনামগঞ্জে বোরো ধান নিমজ্জিত, শতাধিক পুকুর প্লাবিত
সুনামগঞ্জে বন্যায় ১৯৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি