তিন দশকের বেশি সময় এ বাহিনীতে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই দুই শ্রেণির মানসিকতার পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশে সুশাসনটা শ্লোগানের মধ্যেই থাকবে”
শনিবার জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে নিজের লেখা ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি: স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে এসব কথা বলেন সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি)।
শহীদুল হক বলেন, “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক শক্তি এবং আমলাতন্ত্র, এরা কখনই পুলিশের পরিবর্তন চাইবে না। স্পষ্ট কথা, এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা।
“যারা রুলিং পার্টি তারা মনে করে পুলিশ তাদের নিজের সম্পদ। ওরা যা বলবে পুলিশ তাই করবে। এমপি যা বলবেন ওসি তাই করবেন, এই যে কালচার, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ।”
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ২০১৭ সালে একটা উদ্যোগ নেওয়ার কথা দাবি করে সাবেক পুলিশ প্রধান জানান, তার এই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি।
“যেটা ২০১৭ সালে করেছিলাম কিন্তু হয়নি। সেখানে পুলিশ কমিশন করার প্রস্তাব ছিল। পুলিশ কমপ্লেইন করার প্রস্তাব ছিল।
“পুলিশ যদি কোনো অপরাধ করে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো যদি অভিযোগ থাকে তাহলে স্বাধীন স্বতন্ত্র একটা সংস্থা তদন্ত করবে। সেটা হয়নি আমলাদের কারণে, আর রাজনৈতিক নেতারা তো চাইবে না।”
আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এ বাহিনীতে নিজের কর্মজীবনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পুলিশের এই অবস্থার মধ্যে শহীদুল হক কখনো রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথা নত করেনি।”
তিনি বলেন, “আমি চেয়ারের জন্য চাকরি করিনি, বদলি হলে চলে যাব। অনেক কিছু মোকাবেলা করেছি। কিন্তু এসব মোকাবেলা দু’এক জন অফিসারের পক্ষে সম্ভব।
“এর জন্য প্রয়োজন একটি সিস্টেম, যেখানে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে। আর নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারলে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম কখনই ইফেকটিভ হবে না।”
তদন্তে পুলিশের ভুমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ঘটনার প্রথম সিদ্ধান্ত তো পুলিশই দিয়ে দিয়েছে, মামলার চার্জশিট হবে, না ফাইনাল রিপোর্ট হবে, ঘটনা সত্য না মিথ্যা ,এটার রায় তো পুলিশ দিয়ে দিচ্ছে।”
নিরপেক্ষভাবে কাজ না করতে পারলে তদন্ত ঠিকমত হবে না বলেও মনে করেন পুলিশের সাবেক এই আইজিপি।
সমাজে ও রাষ্ট্রে পুলিশের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “সরকার যদি ঘোষণা দেয় দুই ঘণ্টা পুলিশের কোনো কার্যক্রম থাকবে না, কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশের খাতায় রেকর্ড হবে না, তা হলে দেশের অবস্থা কোথায় যায়?
“কার… কার বাড়ি দখল হবে কত শত্রুতা হবে, দেশটা মেসিভ হয়ে যাবে।”
শহীদুল হক বলেন, “পুলিশকে বুঝতে হলে পুলিশকে ‘ওন’ করতে হবে, পুলিশের কাছে যেতে হবে। আবার পুলিশের যে ‘ট্র্যাডিশনাল’ মনমানসিকতা সেটা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। দুইটাই পরিবর্তন করতে হবে।”
সাবেক এই পুলিশ প্রধান জানান, তার লেখা ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি: স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ বইটি একটি দলিল। চাকরি জীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের কথাও তাতে আছে।
“পুলিশ জীবনের স্মৃতি ছাড়াও গ্রাম সহ মধ্যবিত্ত নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের জীবন সংগ্রাম এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। পাঠকরা আগ্রহ নিয়ে পড়বে বলে আশা করি।”
বইটি লেখার পেছনের ইতিহাস টেনে তিনি বলেন, “পুলিশের চাকরিতে একটা ডাইভারসিটি আছে। নিত্য নতুন ঘটনা ঘটে। নিত্য নতুন ঘটনা পাওয়া যায়, নানা রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
“৩২ বছরের চাকরি জীবনের স্মৃতির কথা মনে হয়, সমুদ্র সমান স্মৃতি থেকে কাগজের পাতায় নিয়ে আসতে পারি তা হলে অনেকের সাথে শেয়ার করা যায়। তার পরেই স্মৃতি থেকে লেখা শুরু করলাম।
“সব তো লেখা যায় না। শতশত স্মৃতি আছে। লেখা শুরু করলাম, একমাসেই বই লিখে ফেললাম।”
দ্য ইউনিভারসিটি প্রেস লিমিটেডের প্রকাশনায় বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা, কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কবি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বইটির প্রকাশক দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন।