রোববার প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে এ পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “সোমবার থেকে আন্তঃব্যাংক লেনদেন ৮৯ টাকার হারটি কার্যকর হবে।”
এছাড়া আমদানি ও রপ্তানি বিল সমন্বয়ে বিসি দর করা হয়েছে ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা।
গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে এখন থেকে ব্যাংকগুলো এই দরে ডলার কেনাবেচা করবে।
চাহিদা সংকটে ঊর্ধ্বমুখী ডলারের দামের অস্থিরতা কমাতে বেশ কিছু দিন থেকেই টাকার মান অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। এ নিয়ে চলতি মাসে চতুর্থ দফায় ডলারের দাম বাড়ানো হল।
মে মাসে প্রথম দফায় দর বাড়ানো হয়েছিল ৯ মে। সেদিন ডলারের বিনিময় মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে এ বিনিময় হার ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা।
আর গত ২৩ মে তৃতীয়বারের মত ডলারের বিপরীতে টাকার দর ৪০ পয়সা বাড়িয়ে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে নির্ধারণ করা হয় ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা, যা রোববার পর্যন্ত কার্যকর ছিল। তবে ব্যাংকগুলোই এ দর মানছে না বলে খবর এসেছে।
ডলার সংকট: রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন যথেষ্ট?
‘একই দরে’ ডলার কেনাবেচা করবে ব্যাংক
এমন প্রেক্ষাপটে ডলার সংকট নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির বৈঠক করেন টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণকারী সংগঠন বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলার’স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশ (এবিবি) এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে।
সেদিন ব্যাংকগুলো ডলার নিয়ে অস্থিরতা কমাতে একই দরে ডলার কেনাবেচা করতে সম্মত হয়।
পাশাপাশি ডলারের দর নিয়মিত নির্ধারণে বাফেদা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানায়। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় নীতিমালার আলোকে সংগঠনটি এ হার নির্ধারণ করবে, যা ব্যাংকগুলোর সব এডি শাখা মেনে চলবে।
রোববার মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় বাফেদা। সংগঠনটির প্রতিনিধি গভর্নরের কাছে এ প্রস্তাব দেওয়ার পর টাকার মান আরেক দফা কমানোর ঘোষণা এল।
বাফেদা বর্তমান আন্তঃব্যাংক দর ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে প্রতি ডলারের দাম বেশ কয়েক টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ দফায় ১ টাকা ১০ পয়সা বাড়াতে সায় দেয়।
বেশ কিছুদিন ধরে আন্তঃব্যাংকে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি দরে ডলার কেনাবেচা করা নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে তা বাড়ানো হল।
আন্তঃব্যাংকের পাশাপাশি খোলা বাজারেরও বেশ কিছুদিন থেকে বাড়ছে ডলারের দর, যা গত ১৭ মে ১০২ টাকায় উঠেছিল। তবে কয়েক দিন থেকে এ দর কিছুটা কমেছে।
কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে বিশ্বজুড়ে চাহিদা বাড়ায় পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় খরচ বেড়ে যায়। তাতে ডলারের চাহিদাও বাড়তে থাকে। ফলে বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশের মুদ্রা টাকাও ডলারের বিপরীতে দর হারাতে থাকে।
এমন প্রেক্ষাপটে ডলার সাশ্রয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি নিরুসাহিত করার উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারও ব্যয় সঙ্কোচন এবং ডলারের ওপর চাপ কমাতে অতি জরুরি প্রকল্প ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে অর্থায়নে সতর্কতা অবলম্বনের পদক্ষেপ ঘোষণা করে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণও সীমিত করা হয়েছে।