রোববার সকাল সোয়া ৮টায় ইমিগ্রেশন-কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ঢাকা সেনানিবাস (ক্যান্টনমেন্ট) স্টেশন থেকে যাত্রী
নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গেছে আন্তঃদেশীয় এই ট্রেন।
আট ঘণ্টার যাত্রা শেষে ১৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বিকাল ৪টায় কলকাতার চিৎপুর স্টেশনে পৌঁছানোর কথা রয়েছে ট্রেনটির।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে সবুজ পতাকা উড়িয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রার
উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার, রেলের উধর্বতন
কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রেলওয়ের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে বন্ধ
থাকা ট্রেনটি আবারও চালু করতে পেরে তারা আনন্দিত।
তিনি জানান, মৈত্রী এক্সপ্রেস চালুর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কেবল চার
দিন আগে। প্রথম দিনের যাত্রায় ৪৫৬ আসনের এ ট্রেনে ভ্রমণ করছেন ১৬৫ জন যাত্রী।
যাত্রী সংখ্যা কম কেন জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, “এখানে
প্রচারের ব্যাপার আছে। অনেক যাত্রী জানেন না কখন চালু হবে, এর সাথে ভিসার সম্পর্ক
আছে। আমি আশা করি ডে বাই ডে এই যাত্রী সংখ্যা বাড়বে। এক সাপ্তাহের মধ্যে এই আসন
সংখ্যা পূর্ণ হয়ে যাবে।”
রোববার যাত্রীদের রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় রেল
কর্তৃপক্ষ। মাসুদুর রহমান নামে এক যাত্রী জানালেন, তিনি ভারতে যাচ্ছেন স্ত্রীর
চিকিৎসার জন্য।
“ট্রেন ভ্রমণ ভালো লাগে বলেই এই রুটে যাওয়া। কোন ঝুট-ঝামেলা নেই।
নিরাপদে যাওয়া যায় ট্রেনে।”
পরিবারের সবাইকে নিয়ে কলকাতা যাচ্ছে সেলিনা হোসেন ও শফিকুর রহমান।
তারা জানালেন, দীর্ঘদিন তারা এ ট্রেন চালুর অপেক্ষায় ছিলেন।
“পরিবারের সদস্যরা ট্রেনে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, আমরা
সেভাবেই ভিসার আবেদন করেছি।”
সকাল সোয়া ৮টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর
ট্রেনটি বাংলাদেশ অংশের সর্বশেষ স্টেশন চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পৌঁছাবে দুপুর ১টা ৪০
মিনিটে।
সেখানে ২০ মিনিটের বিরতি পাবেন যাত্রীরা। দুপুর ২টায় সীমান্ত
পেরিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হবে মৈত্রী এক্সপ্রেস। সব ঠিক থাকলে চিৎপুর স্টেশনে পৌঁছাবে
বিকেল ৪টায়।
একই ভাবে সোমবার ভারতের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ১০ মিনিটে চিৎপুর
স্টেশন থেকে ফিরতি ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছাড়বে।
ওই ট্রেনটি বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সীমান্ত পেরিয়ে
দর্শনা স্টেশনে পৌঁছাবে। সেখানে ২০ মিনিটের বিরতি নিয়ে সাড়ে ১০টায় রওনা হবে ঢাকার
দিকে।
ঢাকা-কলকাতা রুটে বৃহস্পতিবার ছাড়া সাপ্তাহে ৬দিনই মৈত্রী
এক্সপ্রেস চলাচল করবে বলে জানাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসার জন্য মাকে নিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রী হয়ে ভারতে যাচ্ছেন শাফিনুর আজনান, ট্রেনে ওঠার আগে দেখাচ্ছেন টিকিট। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
টিকেট কাটতে যা যা দরকার
মৈত্রী ট্রেনের টিকেট কাটা যায় ঢাকার কমলাপুর ও চট্টগ্রাম
রেলস্টেশন থেকে। টিকেট কাটার সময় ভিসাসহ পাসপোর্টের মূল কপি দেখাতে হয়।
এখন ভারত ভ্রমণে আরটিপিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া কোভিড নেগেটিভ
সনদ অথবা দুই ডোজ কোভিড টিকা নেওয়ার সনদ দেখাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ঢাকা থেকে কলকাতা ৫৩৮ কিলোমিটারের রেলপথে এসি সিটের ভাড়া ৩ হাজার
৬০৫ টাকা; আর এসি চেয়ারের ভাড়া ২ হাজার ৫৭০
টাকা। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ভাড়ায় ৫০
শতাংশ ছাড় রয়েছে।
মৈত্রী এক্সপ্রেস এখন থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন ঢাকা-কলকাতা পথে যাত্রী পরিবহন করবে। ১ জুন ঢাকা-শিলিগুড়ি পথে চালু হচ্ছে নতুন ট্রেন মিতালি এক্সপ্রেস। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
থেকে ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হয় ২০০৮ সাল ১৪
এপ্রিল। ২০২০ সালে মার্চ মাসে মহামারী শুরু হলে ১৫ মার্চ আন্তঃসীমান্ত রেলসেবা
বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। ফলে বন্ধ হয়ে যায় দুই দেশের মধ্যকার ট্রেন চলাচল।
সংক্রমণ কমে আসায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত ২৮
এপ্রিল ঢাকা সফরে এসে শিগগিরই আবার ট্রেন চলাচল শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। পরে ঢাকায়
ভারতের হাই কমিশন থেকে মৈত্রীর চলাচল শুরুর তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়।