বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রোববার রায়ের এই তারিখ ঠিক করে দেন।
আসামিরা হলেন- নওগাঁর মো. রেজাউল করিম মন্টু, মো. নজরুল ইসলাম ও মো. শহিদ মণ্ডল। তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক। বাকি দুজন কারাগারে আছেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় নওগাঁয় সাতজনকে হত্যার পাশাপাশি আরও অনেককে অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠণ ও অগ্নিসংযোগে সম্পদ ধ্বংসের আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
আসামিদের মধ্যে রেজাউল করিম মন্টু ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী জয়পুরহাট জেলার আমির ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মন্টু তখন থেকেই ছিলেন জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয়। বাকি দুই আসামি জামায়াতের সমর্থক।
তাদের পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, আবুল কালাম আজাদ ও তাপস কুমার বল।
তিন আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করে।পরের বছর মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগে তাদের অভিযুক্ত করে বিচার শুরু হয়।
যুদ্ধাপরাধ: নওগাঁর ৪ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন
এ মামলার ৩১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ২৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়।
আসামিদের মধ্যে রেজাউল করিম মন্টুকে ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে জয়পুরহাট দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। শহিদ মণ্ডল ও ইসহাক আলীকে গ্রেপ্তার করা হয় একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি।
তিন অভিযোগ
আসামি রেজাউল করিম মন্টু সর্বশেষ জয়পুরহাট সদরে থাকতেন। জেলা শহরের প্রফেসর পাড়ায় যে বাসায় তিনি থাকতেন. সেটি পিরিচিতি পেয়েছে রাজাকার বিল্ডিং নামে।
আর পলাতক নজরুল ইসলাম ঢাকায় তেজগাঁওয়ে থাকেন। শহীদ মণ্ডলের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী থানার চাঁপাডাল গ্রামে।
অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর বিকাল আনুমানিক ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সময়ে আসামিরা নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের রানাহার গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র সাহেব আলী, আকাম উদ্দিন, আজিম উদ্দিন মণ্ডল, মোজাফফর হোসেনকে হত্যাসহ ওই সময় ১০-১২টি বাড়ি লুট করে অগ্নিসংযোগ করে।
অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে আসামিরা নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খোজাগাড়ী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র মো. নুরুল ইসলামকে হত্যা করে। এসময় তারা ১৫-২০টি বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ করে।
অভিযোগ ৩: ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর বিকাল আনুমানিক ৫টা থেকে পরদিন ৯ অক্টোবর আনুমানিক বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময়ে নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের মো. কেনার উদ্দিন এবং মো. আক্কাস আলীকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করে। পরে অপহরণ করে জয়পুরহাটের কুঠিবাড়ি ব্রিজে নিয়ে হত্যা করে। ওই সময়ের মধ্যে আসামিরা ৪০ থেকে ৫০টি বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে।