স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার বক্তব্যের একপর্যায়ে ‘বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো রাতের বেলায় ভোট চাই না‘ বলতেই হট্টগোলের সূচনা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
রোববার দুপুরে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ১১টার দিকে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের উপস্থিতিতে সভা শুরু হয়। শুরুতে নির্বাচনের বিস্তারিত তুলে ধরেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। এরপর কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের সমস্যা ও অভিযোগ তুলে ধরেন।
সবশেষে কথা বলেন মেয়র প্রার্থীরা। মেয়র প্রার্থীরা একে একে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বেলা সোয়া ১২টার দিকে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার তার বক্তব্য শুরু করেন।
একপর্যায়ে তিনি বলেন, “এই সরকারের আমলে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নেই। নির্বাচনের নামে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জনগণের সঙ্গে প্রহসন হয়েছে।”
“এবার আমি দল ত্যাগ করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা আছে। ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে আমি শঙ্কিত। আমরা বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো রাতের বেলায় ভোট চাই না।”
এই কথা বলার পরপরই আওয়ামী লীগের অন্তত ১৫ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী চিৎকার–চেঁচামেচি শুরু করেন। তারা কায়সারের বক্তব্যে বাধা দেন।
এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খোকন সবাইকে শান্ত হতে বলেন। এরপর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মাইক হাতে নিয়ে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও ইসি মো. আলমগীর মঞ্চে বসে ওই হট্টগোল দেখেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, “আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, আপনাদের আমার কথা শুনতে হবে। সকলে শান্ত হোন। আগের নির্বাচনে কী হয়েছিল, সেটি নিয়ে কথা বলবেন না। এই নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন।”
পরে নিজাম উদ্দিন কায়সার পুনরায় মাইক হাতে নিয়ে বলেন, “কুমিল্লা সিটিতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ভোটাররা শঙ্কিত। ইভিএমের কারচুপির আশঙ্কাও রয়েছে। তাই একজন ভোটার ভোট দেওয়ার পর ভোট সম্পন্ন করার প্রিন্ট আউট করে ‘স্লিপ’ স্বচ্ছ ব্যালট বক্সে ফেলার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।”
“এই কমিশনকে সুষ্ঠু ভোটের বিষয়টি আমাদের আশ্বস্ত করতে হবে। পুলিশ দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার ও হয়রানি করার আশঙ্কা রয়েছে। তাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করার দাবি জানাচ্ছি।“
তিনি আরও বলেন, “আগামী ১ জুন থেকে দুজন নির্বাচন কমিশনারকে কুমিল্লায় রাখেন। তারা নির্বাচন মনিটরিং করুক। আমরা চাই, নতুন কমিশন যেন ভোটারদের আস্থা ফিরে পায়। নিজেদের ক্যাম্পে নিজেরা আগুন লাগিয়ে মামলা দিয়ে আমাদেরকে যেন হয়রানি করা না হয়।”
সভায় নৌকা প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী আরফানুল হক রিফাত উপস্থিত ছিলেন না। তার পক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, “একজন মেয়র প্রার্থীর পোস্টার নাকি হেলমেট বাহিনী ছিঁড়ে ফেলেছে, সাংবাদিকরাও তাই লিখেছেন। আমার ধারণা, তাদের (বিএনপি) দুই প্রার্থী আছেন, তারাও তো নিজেরা এ কাজ করে আমাদের ওপর দোষ চাপাতে পারেন?”
“তাছাড়া জামায়াতের দলের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও মাঠে আছেন, তাই প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের ভয়ে ভোটাররা আতঙ্কে আছে।“
টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, “ইভিএম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমি এখনও বিশ্বাস করি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র পদপ্রার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম ইভিএম ভোটকেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
আরেক স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী কামরুল হাসান বাবুল নির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছেন। তিনি মনে করেন, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।
আরও পড়ুন:
কুমিল্লা সিটি: প্রতীক নিয়ে প্রচারে
কুমিল্লার ‘বিদ্রোহী’ ইমরান ‘ছাড়ছেন’ ভোটের মাঠ
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন: ‘বিদ্রোহী’ ইমরানকে বোঝাতে বৈঠকে বসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা
সাক্কু-নিজামের ভোটের প্রচারে যেতে বিএনপিকর্মীদের মানা
কুমিল্লা সিটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আফজল খানের ছেলে ইমরান
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন: সাক্কুর সম্পদ সবচেয়ে বেশি
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন: সাক্কুর চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে বেশি