বিদেশি শ্রমিক নির্ভর দেশ সিঙ্গাপুর। তবে, মহামারী চলাকালীন ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে সেপ্টেম্বর ২০২১-এর মধ্যে দেশটিতে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা কমেছে দুই লাখ ৩৫ হাজারের বেশি।
দেশটির জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, কোভিড মহামারীর নানা সীমাবদ্ধতায় সেখানকার কোম্পানিরগুলোর প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং অটোমেশনের দিকে ঝোঁকার গতি বেড়েছে।
সিঙ্গাপুরের নির্মাণ শ্রমিকদের পাশাপাশি কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন ডায়নামিক্সের তৈরি রোবট ‘স্পট’। ডেটা সরাসরি মালিক প্রতিষ্ঠান ‘গামন’-এর ডেটাবেইজে পাঠাচ্ছে রোবটটি।
ওই একই কাজে আগে দুজন মানব শ্রমিক লাগলেও, স্পটের উপস্থিতিতে একজন শ্রমিক দিয়েই একই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গামনের মহাব্যবস্থাপন মাইকেল ও’কনেল।
‘কর্মস্থলে মানবশক্তির বদলে’ স্বয়ক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বলেও মনে করেন ও’কনেল। মহামারীর কারণে বিদ্যমান শ্রমিক ঘাটতির আরও অবনতি হয়েছে এবং এই পরিস্থিতি বজায় থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
কেবল নির্মাণ খাতই নয়, সিঙ্গাপুরের লাইব্রেরিতেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রোবট। দেশটির জাতীয় লাইব্রেরি দুটি রোবট নিয়োগ দিয়েছে। শেলফে রাখা বইয়ের নাম পড়তে সক্ষম রোবটগুলো একদিনে এক লাখ বই বা পুরো সংগ্রহের ৩০ শতাংশের নাম পড়তে পারে।
ছবি: রয়টার্স
“কর্মীদের শেলফে থাকা বইগুলোর কল নম্বর একটি একটি করে পড়তে হয় না। এতে শ্রম খরচ হয় এমন রুটিন কাজ কমে আসে,” বলেছেন সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল লাইব্রেরি বোর্ডের সহকারি পরিচালক লি ই ফুয়াং।
দেশটির পণ্য উৎপাদন খাতে প্রতি ১০ হাজার কর্মীর বিপরীতে ৬০৫টি রোবট কাজ করছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স, যা বৈশ্বিক বিবেচনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রোবটিক্স-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় ওই একই শিল্পখাতে ১০ হাজার কর্মীর বিপরীতে রোবটের সংখ্যা ছিল ৯৩২টি।
সেবাগ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হয় এমন খাতগুলোতেও রোবটের ব্যবহার বেড়েছে। সিঙ্গাপুরের ৩০টি মেট্রো স্টেশনে যাত্রীদের জন্য কফি বানানোর কাজটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে রোবটের হাতে।
ওই বারিস্তা রোবটগুলোর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্রাউন ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী কিথ ট্যান-এর দাবি, তাদের রোবটগুলো খাদ্য ও পানীয় ব্যবসা খাতের সবচেয়ে জটিল সমস্যা – কর্মী নিয়োগের সমাধান করছে।
তবে, রোবট বারিস্তাদের সেবাগ্রাহকদের অনেকেই এক্ষেত্রে একজন মানব কর্মীর অভাব বোধ করছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
মেট্রো যাত্রী আশিস কুমার রয়টার্সকে বলেন, “আমরা সবসময়ই কোনো না কোনো ভাবে মানব স্পর্শ খুঁজছি।”