সোমবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনা সদর দপ্তরে আর্মি সিলেকশন বোর্ডের বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, “জনৈক ব্যক্তি পদ্মা সেতু প্রকল্পে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ আনায়- কোনো বোর্ড মিটিং না করেই বিশ্ব ব্যাংক সেতুটি নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল; যদিও পরে ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়।
“নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের এই একটি সিদ্ধান্ত- বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশিপাশি জাতির আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দিয়েছে।”
বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের স্বীকৃতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমরা যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছি, তা নিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেতে হবে।”
সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গঠনমূলক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, “বাংলাদেশ আর্মি সব সময়ই অবকাঠামো নির্মাণসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রেখে গেছে।
“…তারা জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে কক্সবাজারের খুরুশকুলে ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছেন।”
বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র উদাহরণ যেখান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গতিশীল নেতৃত্বে তিন মাসের মধ্যে মিত্র বাহিনী তাদের দেশে ফিরে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরপরই একটি উন্নত, পেশাদার ও প্রশিক্ষিত বাহিনী গড়ে তুলতে ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।”
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার বঙ্গবন্ধুর প্রতিরক্ষা নীতি অনুসরণ করে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়নের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন অব্যাহত রেখেছে।
তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “পাকিস্তানি সামরিক সার্ভিসে শুধুমাত্র একজন কর্নেল ছিলেন। এখন জেনারেলরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আছেন এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।”
ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে পেশাদারি দক্ষতা, উৎকর্ষ, সততা ও দেশপ্রেম সম্পন্ন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, নিরপেক্ষ মূল্যায়নের মাধ্যমে পেশাদারভাবে দক্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা সম্ভব এবং আপনাকে পদোন্নতির জন্য উচ্চ নৈতিক চরিত্রের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
“…আনুগত্যসহ নেতৃত্বের জন্য দৃঢ় মানসিকতা, সততা এবং অন্যান্য গুণাবলীসম্পন্ন কর্মকর্তারা উচ্চতর পদোন্নতির জন্য যোগ্য। যাদের সামরিক জীবনে সফল নেতৃত্বের রেকর্ড রয়েছে এমন অফিসারদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা উচিত।”
সেনাবাহিনীর সদস্যরা সর্বদা জনগণের পাশে থাকে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব গোলাম হাসিবুল আলম।