ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার কয়েকটি দেশে সম্প্রতি
‘মাঙ্কিপক্স’য়ের একটি অভূতপূর্ব সংক্রমণ দেখা হেছে। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা এই সংক্রমণ
নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছেন আরেকটি মহামারী ঠেকানোর উদ্দেশ্য নিয়ে।
ইনসাইডার ডটকম’য়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী,
“মাঙ্কিপক্স রোগে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এর মুখে পুঁজ থাকে এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
এই ফুসকুড়িগুলো কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণক্ষম থাকে। প্রচণ্ড ছোঁয়াচে এই রোগ ছড়াতে
সরাসরি স্পর্শেরও প্রয়োজন হয় না। আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানার চাদর বা তার স্পর্শ করা
যে কোনো জিনিস থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া সম্ভব। তবে এই রোগে মৃত্যুর হার ১ শতাংশ।”
লক্ষণ
জ্বর, পিঠব্যথা, ত্বকে র্যাশ বা ফুসকুড়ি
এই রোগের প্রধান লক্ষণ। দুই থেকে চার সপ্তাহ এই সংক্রমণ স্থায়ী হয়। আর ভাইরাসের সংস্পর্শে
আসার পাঁচ থেকে ২১ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়।
প্রথমে দেখা দেয় জ্বর, মাথা, পেশি ও পিঠে
ব্যথা, ‘লিম্ফ নোড’ ফুলে যাওয়া, গায়ে কাঁপুনি, অবসাদ ইত্যাদি।
এর দুই থেকে তিন দিন পর র্যাশ দেখা দিতে
শুরু করে। প্রথমে দেখা দেয় মুখে, সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। শুরুতে তা সমতল
আকারে ফুলে ওঠে, লালচে রং থাকে। পরে তা ক্ষতে পরিণত হয়, ভেতরে জমে পুঁজ।
পরে সেগুলো শুকিয়ে কালচে রং নেয় এবং শেষে
খষে পড়ে।
এই রোগের কোনো স্বীকৃত চিকিৎসা নেই। তবে
গুটি বসন্ত বা ‘স্মলপক্স’য়ের টিকা এই রোগের বিরুদ্ধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর।
ইনসাইডার ডটকম’য়ের প্রতিবেদনে আরও জানানো
হয়, এপর্যন্ত যেসব পুরুষের মাঝে এই রোগ শনাক্ত হয়েছে তারমধ্যে সিংহভাগই সমকামী। তাই
বলে এই রোগকে সমকামীদের রোগ হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে না।
রোগীর ‘সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন’ নয় বরং
রোগীর শরীরের কোন অংশে এই বসন্ত দেখা দিচ্ছে সেদিকে নজর দিতে হবে।
সুইডিশ হেল্থ অথোরিটি’র মতে, “সাধারণত
‘মাঙ্কিপক্স’য়ের র্যাশ দেখা দেয় মুখ, হাত, পায়ের পাতার নিচে। তবে ইউরোপের শনাক্ত
হওয়া রোগীদের র্যাশ দেখা গেছ যৌনাঙ্গ, তার আশপাশে এবং মলদ্বারে।
এই র্যাশ থেকে নিঃসৃত পুঁজ ও খষে পড়া
মৃতকোষ প্রচণ্ড সংক্রামক, তা সে শরীরের যে স্থানেই থাকুন না কেনো। তাই এগুলো সুস্থ
ব্যক্তির শরীরের যে অংশে স্পর্শ করবে সেখানেই রোগের সূত্রপাত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ
ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি)’র ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রিয়া ম্যাককলাম বলেন, “ত্বকের
ওই র্যাশগুলোতে ভাইরাসের ঘনত্ব খুবই বেশি। আর এই ভাইরাস খুবই স্থিতিশীল কারণ এর ‘ডিএনএ’
হল ‘ডাবল স্ট্র্যান্ডেড’। র্যাশগুলো রোগের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব সময়ই সংক্রমণক্ষম।
আর রোগী ততক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ যতক্ষণ না আক্রান্ত স্থানে সুস্থ স্বাভাবিক ত্বক
গজায়।”
“ব্লিচ দিয়ে এই ভাইরাস কাপড়, থালাবাসন
থেকে শুরু করে সব জায়গা থেকে ধ্বংস করা সম্ভব। আক্রান্ত রোগীর শরীর থেকে মৃতকোষ ঝরে
পড়লে সেগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ওই কাপড় ‘গ্লাভস’ না পরে ধরা
যাবে না।”
আরও পড়ুন