ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ দায়রা আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
চার আসামির মধ্যে মো. এমাদুল হক ওরফে গণ্ডারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। আর শহীদুল্লাহ, মনির ও আজাদুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আসামিরা সবাই মধ্য মনিপুর এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে শহীদুল্লাহকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার চলে, বাকিরা রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রায় শুনে তাদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কাঠগড়ায় থাকা আসামিরা এজলাসে উপস্থিত বাদীকে হুমকি দিতে থাকেন এবং আইনজীবীদের গালাগাল করতে থাকেন।
রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুল হাসান জানান, কাজী জহুরুল ইসলাম বাবু মধ্য মনিপুরে ‘সুমন রকমারি বিপণি’ নামে একটি স্টেশনারি সামগ্রীর দোকান চালাতেন। একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় এমাদুল হক এবং তার কয়েকজন সহযোগীকে র্যাবের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এর প্রতিশোধ নিতে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই জহুরুলকে হত্যা করে আসামিরা।
মামলার বিবরণে বলা হয়, শহীদুল্লাহ সেদিন জহুরুলকে বাসা থেকে তার দোকানে ডেকে নেন। সেখানে আসামিরা জহুরুলকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে এমাদুল তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে জহুরুলের পিঠে ও পেটে আঘাত করেণ
জহুরুল চিৎকার দিয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে হামলাকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। চলে যাওয়ার সময় এমাদুল চিৎকার করে বলেন, “সাত বছর পর প্রতিশোধ নিলাম।”
নিহত কাজী জহুরুল ইসলাম বাবু
আহত জহুরুলকে প্রথমে গ্যালাক্সি হাসপাতালে, পরে সেখান থেকে শমরিতা হাসপাতালে এবং সবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনায় জহুরুলের ভাই কাজী তাজুল ইসলাম সেদিনই মিরপরে মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেখানে এমাদুল, মনির, আজাদুল ও শহীদুল্লাহর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
পরে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র হলে আদালত তাদের বিচার শুরু করে। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১২ জনের সাক্ষ্য শুনে বিচারক সোমবার চারজনকেই দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিলেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী তাজুল ইসলাম বলেন, “এ রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।”
অন্যদিকে দণ্ডিতদের আইনজীবী মো. রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, পলাতক শহীদুল্লাহ মারা গেছেন বলে আসামিপক্ষ দাবি করেছে। তবে এ সম্পর্কে আদালতে কোনো মৃত্যু সনদ দাখিল করা হয়নি বা আদালতকে জানোনোও হয়নি।