আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর, বি) এর সঙ্গে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের দায়িত্বে থাকা এ প্রতিষ্ঠানটির যৌথ গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার রাজধানীর ওয়াসা ভবনে ‘সার্ভে অব সুয়েজ অ্যান্ড আদার কন্টামিনেটেড সারফেস ওয়াটার অ্যান্ড ট্রিটেড ওয়াটার সোর্সেস ফর দ্য প্রেজেন্স অব সার্স-সিওভি-২ ইন অ্যান্ড অ্যারাউন্ড ঢাকা সিটি’ শীর্ষক এ গবেষণার ফল সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ওয়াসার পরিশোধিত পানিতে ভাইরাসটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে ঢাকা শহরের পুকুর ও নদীর পানিতেও করোনাভাইরাসের জীবাণু মেলেনি।
অনুষ্ঠানে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বলেন, “শুধুমাত্র গতানুগতিকভাবে এই গবেষণা চালানো হয়নি, প্রকৃত অবস্থা তুলে আনতেই গবেষণাটি চালিয়েছি।
“করোনাভাইরাসের সময়ে জীবন ও জীবিকা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হাত ধোয়ার বিষয়টি দেখেছি।”
এর পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসার পানিতে করোনাভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব আছে কি না সেটা দেখতে আইসিডিডিআর,বি এর সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি করা হয় বলে জানান তিনি।
“আশার কথা হল, আমরা নিশ্চিত হলাম ঢাকা ওয়াসার পানিতে করোনাভাইরাসের জীবাণু নেই,” – বলেন তাকসিম।
২০২০ সালের অগাস্ট থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাস ধরে পরিচালিত এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন আইসিডিডিআর, বি’র এমিরেটাস সাইন্টিস্ট সিরাজুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শুধু করোনাভাইরাস নয়, অন্যান্য ভাইরাস যাতে ওয়াসার পানিতে না থাকে সেই ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “এখনো কিছু কিছু পানিবাহিত রোগ আছে। ঢাকায় যেসব পুরনো পাইপ লাইন ছিল, সেগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। একটা এলাকায় যদি ২ হাজার মানুষ থাকে, সেখানে ২-৪ ইঞ্চি লাইন বসানো হয়েছে।
“কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে ২০ হাজার লোক হয়ে যায়। এসমস্ত এলাকা চিহ্নিত করে তেমন পাইপ লাগাতে হবে। ওয়াসা যে পানি পরিশোধন করে সেটা শতভাগ নিরাপদ। কিন্তু যে পাইপলাইন দিয়ে যায়, সেগুলোতেই সমস্যা হয়ে থাকে।”
ফাইল ছবি
‘গুলশানে পানির দাম বাড়ান যাত্রাবাড়ীতে কমান’
পানির দাম নির্ধারণ নিয়ে অনুষ্ঠানে ঢাকা ওয়াসার এমডির কথায় বিরক্তি প্রকাশ করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
তাজুল ইসলাম বলেন, “ওয়াসা বেশ কিছু ভালো কাজ-কর্ম করছে, তেমনিভাবে ওয়াসার এমডি সাহেব আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, তিনি কোনো বিষয়ে দায় দায়িত্ব নেয় না। দায়িত্ব দিতে চান মন্ত্রীর ওপর।
“এখানে পানির দাম বাড়াবেন কি না, সেটা জিজ্ঞাসা করেছেন। পনির দাম বাড়াবেন, কি কমাবেন? সেটা তো আপনারা ঠিক করবেন।”
এলাকা ভিক্তিক পানির দামে তারতম্য করার নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “উৎপাদন খরচ কত, এটা আইডেন্টিফাই করেন।
“উৎপাদন খরচ যদি ২০ টাকা হয়, ঢাকার বিত্তবান যারা গুলশানে বসবাস করে, আমি নিজেও করি। তারা পানি খায় ১৫ টাকা দিয়ে আর বস্তির মানুষ পানি পায় না। এটা কী বিচার?
সমতার প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “ওয়াসার পানির দাম কত হবে? সার্ভিস চার্জ কে কত দেবে? গুলশান থাকলে আপনি যে দাম দেবেন যাত্রাবাড়ীতে সেই দাম দেবেন অথবা ঢাকার বাইরে সেই দাম দেবেন এটা কি সমতা হল?
“আপনি আমি বিত্তবান মানুষ আমাকে ভালো জায়গায় রাখছেন এবং এখানে সুবিধা বেশি এখানে ট্যাক্স বেশি হবে না কেন? সরকার টাকা দেবে, সরকার টাকাটা দেয় কোথা থেকে?”
ভর্তুকি দিয়ে সেবা দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে স্থানীয়সরকার মন্ত্রী বলেন, “আপনি যাত্রাবাড়ীর মানুষকে কম দামে খাওয়ান, আপনি ভর্তুকি দেন গ্রামে দেন, টঙ্গীতে দেন। সেখানে না দিয়ে আপনি আমাকে দিচ্ছেন।
“আমি বড়লোক মানুষ, আমার লাখ টাকা ইনকাম আছে, আমার কাছ থেকে দাম কম নেবেন। এটা কিভাবে হয়?”