বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের টিভি রুমে রোববার রাত ১০টার দিকে মারধর করা হয় বলে বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দিন জানান।
শাহাবুদ্দিন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডি মর্নিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হলে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার টিভি রুমে বসে খেলা দেখার সময় মাদার বখশ হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী গিয়াসউদ্দিন কাজলসহ ২-৩ জন ধূমপান করছিলেন। এ সময় শাহাবুদ্দিন কাজলকে বাইরে গিয়ে ধূমপান করতে বললে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে কাজল ও তার অনুসারীরা শাহাবুদ্দিনকে মারধর শুরু করে এবং তার লুঙ্গি ছিঁড়ে ফেলে।
ঘটনাটি হল প্রাধ্যক্ষ শামীম হোসেনকে জানানো হলেও তিনি ঘটনাস্থলে যাননি। পরে ঘটনার বিচারের দাবিতে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী জাকারিয়া ও অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম টিপু এবং ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নুর, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক আন্দোলনরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সেসময় উপ-উপাচার্য সুলতান-উল ইসলাম টিপু বলেন, “এ সব ঘটনার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। এজন্য সার্বিক বিষয় নিয়ে দ্রুতই বসব। আশা করি, এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান হবে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শাহাবুদ্দিন বলেন, “রোববার রাতে আমি হলের টিভি রুমে আইপিএল খেলা দেখছিলাম। এ সময় আমার পাশে তিনজন বসে সিগারেট খাচ্ছিল। আমার ধোঁয়ায় সমস্যা হওয়ায় আমি তাদের খুব নম্রভাবেই বলি যে, বাইরে গিয়ে সিগারেট খেলে ভালো হতো। এ সময় কাজল আমাকে বলে, তোর সমস্যা হচ্ছে তুই বাইরে যা।
“এক পর্যায়ে কাজলের সঙ্গে আমার তর্কাতর্কি শুরু হলে আমাকে পাশ থেকে একজন গলা চেপে ধরে এবং মারধর করে। এক সময় আমার পরনের পোশাকও ছিঁড়ে ফেলে।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কাজল বলেন, “টিভি রুমে আমরা কয়েকজন সামনে বসে খেলা দেখছিলাম। তখন আমার দুই ব্যাচমেট সিগারেট খাচ্ছিল। এ সময় শাহাবুদ্দিন রুমে এসে বলে যে, সিগারেট কে খাচ্ছিস। এখান থেকে বের হয়ে গিয়ে খা। একপর্যায়ে সে উচ্চ গলায় কথা বলা শুরু করে। ফলে আমরা তার নাম-পরিচয় জানতে চাই। কিন্তু সে তা না করে বাকবিতণ্ডা শুরু করে।”
তার সঙ্গে কথাকাটাকাটি এক পর্যায়ে গালাগালি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সেই (শাহাবুদ্দিন) প্রথমে আমার গায়ে হাত তুলেছে। এমনকি আমি সেখানে কোনো সিগারেট খাইনি।”
প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ঘটনা সম্পর্কে জেনেছি। ঘটনার পরপরই আহত শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি মীমাংসার জন্য এরই মধ্যে হল প্রাধ্যক্ষকে জানানো হয়েছে।”
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শামীম হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবে। পরবর্তীতে সে রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে অবস্থানরত সংবাদকর্মীরা আন্দোলন করার পাশাপাশি তিন দফা দাবি জানিয়েছে।
দাবিগুলো হল- কাজলসহ তার দুজন সহকারীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা, দায়িত্বে অবহেলা করায় হল প্রাধ্যক্ষকে পদ থেকে অব্যাহিত প্রদান এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের ওপর এমন ঘটনা নিরসনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা।