দুই ডোজ টিকা আর এক ডোজ বুস্টার নেওয়া
মানুষগুলো করোনাভাইরাস নিয়ে এখন যেন একেবারেই নিশ্চিন্ত। মাস্ক ছেড়েছেন, সামাজিক দূরত্ব
শিকেয় উঠেছে, হারিয়ে যাচ্ছে হাত ধোয়ার অভ্যাসও।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, এই টিকার কার্যকারিতা
কতদিন থাকবে? টিকার সুরক্ষা ধীরে কমবে নাকি হুট করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল মেডিসিন’য়ের সংক্রামণ
রোগ বিশেষজ্ঞ জেইমি মায়ার ‘ইট দিস’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের বলেন, “টিকার
কার্যকারিতা পরিমাপ করলেই একমাত্র জানা যাবে যে এ পর্যন্ত নেওয়া তিন ডোজ টিকা কতদিন
সুরক্ষিত রাখবে।”
কার্যকারিতা কমা
গত বছরের অগাস্টে টিকার কার্যকারিতা কমে
যাওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। তবে তখনও কোভিড-১৯’য়ের আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি
হওয়া থেকে ব্যাপক সুরক্ষা দিয়ে আসছিল টিকা।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ
ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি)’র তথ্যভিত্তিক এক গবেষণা সেসময় জানায় টিকার কার্যকারিতা
৯১.৮ শতাংশ থেকে কমেছে ৭৫ শতাংশে।
এর প্রেক্ষিতে গত বছরের শেষদিক থেকে বুস্টার
ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে। ১৮ বছর বা তদুর্ধ বয়সি যারা ‘ফাইজার’ আর ‘মডার্না’ নিয়েছেন
তাদেরকে ছয় মাস পর আর ‘জেঅ্যান্ডজে’ যারা নিয়েছেন তাদের দুই মাস পর বুস্টার ডোজ দেওয়া
হবে।
পরে ১৬ ও ১৭ বছর বয়সিদের জন্য ‘ফাইজার’
ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আসে। এক ‘মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ পলিসি’র মাধ্যমে পরে যে টিকাই নেন
কেনো তাকে বুস্টার হিসেবে যে কোনো টিকাই দেওয়া শুরু হয়।
টিকার কার্যকারিতা যেভাবে মাপা হচ্ছে
প্রাথমিক সময়ে ‘ক্লিনিকাল ট্রায়াল’য়ে
যাদের ‘ফাইজার’ আর ‘মডার্না’র টিকা দেওয়া হয় তাদের মাধ্যমেই এই দুই টিকার কার্যকারিতা
মাপা হচ্ছে।
টিকা নেওয়া মানুষের রক্তে ‘অ্যান্টিবডি’র
মাত্রা পরিমাপ করে তা করা হচ্ছে। ‘অ্যান্টিবডি’ হল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার তৈরি
করা একটি প্রোটিন আর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই এর মাত্রা পরিমাপ করা যায়।
ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিন’য়ে ‘ইমিউনিবায়োলজি’
বিভাগের অধ্যাপক আকিকো ইওয়াসাকি বলেন, “সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার মাত্রা জানার জন্য আদর্শ
একক এই ‘অ্যান্টিবডি’। যতক্ষণ পর্যন্ত এটি মাপা সম্ভব হচ্ছে ততক্ষণ এটাই সুরক্ষা পরিমাপের
উপায় হিসেবে বলবৎ থাকবে।”
‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’য়ের
এক প্রতিবেদনে জানা যায় এই এপ্রিলে এসে ‘মডার্না’ টিকা নেওয়া ৩৩ জন অংশগ্রহণকারীর
‘অ্যান্টিবডির মাত্রা কমে গেছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। এই তথ্যকে আদর্শ ধরলে ‘মডার্না’র
কার্যকারিতা আরও এক বছর টিকবে।”
ইওয়াসাকি আরও বলেন, “টিকার কার্যকারিতা
মাপার আরেকটি মাধ্যম হল ‘টি-সেলস’। এই কোষ ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হওয়া কোষকে ধ্বংষ
করে যা ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষাকবচ হতে পারে, তাই বিশেষজ্ঞরা এনিয়ে গবেষণা করছেন।”
এদের মাত্রা পরিমাপ করা জটিল, তবে এগুলো
উপকারী।
২০০৩ সালে ভিন্ন ধরনের এক করোনাভাইরাস
প্রায় ৮শ’ প্রাণ কেড়ে নেয়। সে সময় যারা ওই ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন তাদের
‘টি-সেল ইমিউনিটি’ ১৭ বছর পরেও অটুট ছিল।
জেইমি মায়ার কথা বলেন প্রাকৃতিক ‘ইমিউনিটি’
নিয়ে। যারা করোনাভাইরাসে একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন তাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই
একটা ‘ইমিউনিটি’ সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে দ্বিতীয়বার ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার
মাত্রা মহামারীর এক পর্যায়ে অনেক কমে যায়।
তবে ইওয়াসাকি বলেন, “টিকার মাধ্যমে সৃষ্ট
‘ইমিউনিটি’ প্রাকৃতিক ‘ইমিউনিটি’র তুলনায় বেশি শক্তিশালী। কারণ প্রাকৃতিক অনুভূতি মানুষ
ভেদে ভিন্নমাত্রার হয়। তবে টিকা সবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সমানভাবে শক্তিশালী করে
এবং সুরক্ষার মাত্রাও হয় বেশি।”
তিনি আরও বলেন, ‘সুরক্ষার মাত্রা যদি
শুরুতেই বেশি হয় তবে এক পর্যায়ে তা কমতে শুরু করলেও দীর্ঘসময় রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে
পারবেন। এ কারণেই সবাইকে বুস্টার ডোজ নিতে নির্দেশ দিচ্ছে সিডিসি।”
কোনো টিকা কি বেশি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে?
ডা. জেইমি মায়ার বলেন, “কোন টিকা বেশি
স্থায়ী হবে তা বলা মুশকিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল ‘ফাইজার’ ও ‘মডার্না’ দুটোই
‘এমআরএনএ’ ভিত্তিক টিকা এবং দুটোই শরীরের বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। এখন এদের কি দীর্ঘস্থায়ী
হওয়ার সম্ভাবনা আছে? থাকলে তা কতটুকু?”
দুটি টিকাই ‘সার্স কোভিড-১৯’ ভাইরাসের
জিনগত বৈশিষ্ট্যের একটি ছোট্ট অংশ মানুষের শরীরের পৌঁছায়। আর সেটাই করোনাভাইরাসের সঙ্গে
লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ যোগায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে।
অপরদিকে ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’য়ের টিকা
ব্যবহার করে একটি নিষ্ক্রিয় ‘অ্যাডেনোভাইরাস’ যা সক্রিয় অবস্থায় সর্দিকাশি ও অন্যান্য
রোগ সৃষ্টি করে।
‘এমআরএনএ’ ভিত্তিক টিকাও নতুন এক হাতিয়ার
যার দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা সম্পর্কে জানা নেই।
তাই এখন সময়ই বলে দেবে কতদিন সুরক্ষা
দেবে এই টিকাগুলো।
আরও পড়ুন
কোভিড-১৯: টিকা নেওয়া পরও যে কারণে মাস্ক পরতে হবে