ক্যাটাগরি

জামায়াতের মন্টুসহ নওগাঁর ৩ যুদ্ধাপরাধীর প্রাণদণ্ড

মুক্তিযুদ্ধের সময় নওগাঁয়
সাতজনকে হত্যার
পাশাপাশি আরও
অনেককে আটকে
রেখে নির্যাতন,
অপহরণ, লুণ্ঠণ
ও অগ্নিসংযোগের
মত অপরাধে
দোষী সাব্যস্ত
করে তাদের
এই শাস্তি
দেওয়া হয়েছে।

দণ্ডিত আসামিরা হলেন- নওগাঁর মো.
রেজাউল করিম
মন্টু, মো.
নজরুল ইসলাম
ও মো.
শহিদ মণ্ডল।
তাদের মধ্যে
নজরুল ইসলাম
পলাতক; বাকি
দুজন রায়ের
সময় আদালতে
উপস্থিত ছিলেন।

বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন
তিন সদস্যের
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার এ
রায় ঘোষণা
করে। ট্রাইব্যুনালের
অপর দুই
সদস্য হলেন
বিচারপতি মো.
আবু আহমেদ
জমাদার এবং
কে এম
হাফিজুল আলম।

১৪৪ পৃষ্ঠার
রায়ের সারসংক্ষেপে
আদালত বলেছে,
এ মামলার
আসামিদের বিরুদ্ধে
প্রসিকিউশন মানবতাবিরোধী অপরাধের যে তিন
ঘটনায় জড়িত
থাকার অভিযোগ
এনেছিল, তার
সবগুলোই প্রমাণিত
হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে রেজাউল করিম মন্টু
১৯৮৬ থেকে
১৯৯১ সাল
পর্যন্ত জামায়াতে
ইসলামী জয়পুরহাট
জেলার আমির
ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের
সময় রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মন্টু তখন থেকেই
ছিলেন জামায়াতের
রাজনীতিতে সক্রিয়। বাকি দুই আসামি
জামায়াতের সমর্থক।

রায়ের সময় প্রসিকিউশনের পক্ষে ট্রাইব্যুনালে
উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর হায়দার আলী, সুলতান মাহমুদ সীমন ও আবুল কালাম। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম ও আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। তামিম পলাতক আসামি নজরুলের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রসিকিউটর হায়দার আলী বলেন,
“আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। আসামিদের বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।”

অন্যদিকে
আসামিপক্ষের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে রাজাকারের যে তালিকা দিয়েছে তা হল শিবিরের তালিকা। অথচ ওই সময় শিবির ছিল না। আমরা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ। আসামিদের সঙ্গে আলোচনা করব। আশা করি আপিল করলে আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে খালাস পাবেন।”

মামলার বৃত্তান্ত


২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত শুরু করে তদন্ত সংস্থা। পরের বছর ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।

এরপর রেজাউল করিম মন্টুকে ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে জয়পুরহাট দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। শহিদ মণ্ডল ও ইসহাক আলীকে গ্রেপ্তার করা হয় একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি। অভিযোগ গঠনের আগে কারাগারে ইসহাক আলী মারা গেলে তাকে এ মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

তদন্ত শেষ করে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। পরের বছর ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়।

২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার
আসামিদের বিচার শুরু করে আদালত। একই বছরের ২৫ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় ২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি।

প্রসিকিউশনের ৩১ জন সাক্ষীর মধ্যে
১৭ জনের
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ
যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। সেই যুক্তিতর্ক
শেষে গত
২৬ মে
মামলাটি রায়ের
পর্যায়ে আসে।
 

আসামি রেজাউল
করিম মন্টু
সর্বশেষ জয়পুরহাট
সদরে থাকতেন।
জেলা শহরের
প্রফেসর পাড়ায়
যে বাসায়
তিনি থাকতেন.
সেটি পিরিচিতি
পেয়েছে রাজাকার
বিল্ডিং নামে।

আর পলাতক
নজরুল ইসলাম
ঢাকায় তেজগাঁওয়ে
থাকতেন। শহীদ
মণ্ডলের বাড়ি
নওগাঁর বদলগাছী
থানার চাঁপাডাল
গ্রামে।

তিন অভিযোগ

অভিযোগ ১: ১৯৭১
সালের ৭
অক্টোবর বিকাল
আনুমানিক ৪টা
থেকে রাত
সাড়ে ৭টা
পর্যন্ত সময়ে
আসামিরা নওগাঁর
বদলগাছী থানার
পাহাড়পুর ইউনিয়নের
রানাহার গ্রামে
হামলা চালিয়ে
স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র সাহেব
আলী, আকাম
উদ্দিন, আজিম
উদ্দিন মণ্ডল,
মোজাফফর হোসেনকে
হত্যাসহ ওই
সময় ১০-১২টি বাড়ি
লুট করে
অগ্নিসংযোগ করে।

অভিযোগ ২: ১৯৭১
সালের ৮
অক্টোবর দুপুর
আনুমানিক দেড়টা
থেকে বিকেল
সাড়ে ৩টার
মধ্যে আসামিরা
নওগাঁর বদলগাছী
থানার পাহাড়পুর
ইউনিয়নের খোজাগাড়ী
গ্রামে হামলা
চালিয়ে স্বাধীনতার
পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র মো.
নুরুল ইসলামকে
হত্যা করে।
এসময় তারা
১৫-২০টি
বাড়ি লুণ্ঠনের
পর অগ্নিসংযোগ
করে।

অভিযোগ ৩: ১৯৭১
সালের ৮
অক্টোবর বিকাল
আনুমানিক ৫টা
থেকে পরদিন
৯ অক্টোবর
আনুমানিক বিকাল
৫টা পর্যন্ত
সময়ে নওগাঁর
বদলগাছী থানার
পাহাড়পুর ইউনিয়নের
মালঞ্চা গ্রামে
হামলা চালিয়ে
স্বাধীনতার পক্ষের মো. কেনার উদ্দিন
এবং মো.
আক্কাস আলীকে
অবৈধভাবে আটক
করে নির্যাতন
করে। পরে
অপহরণ করে
জয়পুরহাটের কুঠিবাড়ি ব্রিজে নিয়ে হত্যা
করে। ওই
সময়ের মধ্যে
আসামিরা ৪০
থেকে ৫০টি
বাড়িতে লুটপাট
চালিয়ে অগ্নিসংযোগ
করে।