তার ভাষ্যে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভালো অবস্থানে থাকায় বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার
সঙ্গে মেলানো যায় না।
মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পিটার হাস বলেন, “মূলত শ্রীলঙ্কার মতো নয় বাংলাদেশ,
এটা নিজের অর্থনীতির উপর দাঁড়িয়ে থাকা সার্বভৌম দেশ। এটা এমন দেশ যেটা সামষ্টিক অর্থনীতির
দিক থেকে খুব ভালো করেছে।”
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুসংহত থাকা
এবং ঋণ নেওয়ার সময় বাংলাদেশের সতর্ক অবস্থানের বিষয়টি বিবেচনায় রাখছেন তিনি।
“(বাংলাদেশ) এমন দেশ, যা কোথা থেকে ও কোন শর্তে
ঋণ নিচ্ছে, সে বিষয়ে খুব সতর্ক থেকেছে। আন্তর্জাতিক ঋণের ক্ষেত্রে চীন থেকে নেওয়া ঋণ
তুলনামূলকভাবে কম। বেশির ভাগ এডিবি ও বিশ্ব ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া।”
“সুতরাং শ্রীলঙ্কায় যা ঘটছে, তার সাথে তুলনীয় নয়,” বলেন তিনি।
তবে ইউক্রেইনে রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশকেও যে চ্যালেঞ্জে ফেলেছে, সেটাও বলেন পিটার হাস।
তার ভাষ্যে, মূল্যস্ফীতি, ইউক্রেইনে রাশিয়ার
আক্রমণের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব এবং গরিব মানুষের ব্যয়
বেড়ে যাওয়ার মতো চ্যালেঞ্জ বর্তমানে বাংলাদেশ মোকাবেলা করছে।
“তবে, এসব চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার চ্যালেঞ্জের মৌলিক পার্থক্য
রয়েছে। আবারও বলছি, এটা হচ্ছে খুব ভালো সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার ফল।”
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বরাবরের মতো বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের
কথা বলে আসছে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
তিনি বলেন, “আমরা
মূলত বলছি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছি। যাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী
বাংলাদেশের মানুষ তাদের নেতা নির্বাচনের অধিকার ও সুযোগ
পাবে।
“এটা বাংলাদেশের বিষয়, তারা কীভাবে এই পরিবেশ তৈরি করবে। এসব আন্তর্জাতিক
মান নিয়ে দূতাবাস বাংলাদেশের সাথে কাজ করছে, কীভাবে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা
যায়।”
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাখ্যা তিনি
বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে সবকিছুর কেন্দ্রে আর সংঘাত হবে না। এটা
বাস্তবিক অর্থে বাংলাদেশ সরকার, জনগণ ও নাগরিক সমাজের কাজ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন
আয়োজন করা।”
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি
বলেন, “নিশ্চিতভাবে তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, নির্বাচন
দেখভালের স্বাধীন সক্ষমতার মাধ্যমে।
“আরেকটি কথা হচ্ছে, নির্বাচনের
প্রক্রিয়া তো ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারি, আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এখনও চালু
হয়নি। সুতরাং আমাদেরকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। আমাদের
দিক থেকে আমরা আন্তর্জাতিক মানের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে কাজ করছি।”
‘র্যাবের জবাবদিহি চাই’
র্যাবের ও এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদে উপর নিষেধাজ্ঞা
দেওয়ার পেছনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ছিল বলে দাবি
করেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “বিশ্বাসযোগ্য
তথ্যের ভিত্তিতে আমরা র্যাব ও এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। সম্ভাব্য
মানবাধিকার লংঘনের জন্য জবাবদিহিতা চাই।
“আর এ ধরনের লংঘনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে আমরা সেটা চাই।
কোনো একটা তালিকা ধরে কিছু কাজ সম্পন্ন করে ফেললাম, এটা তেমন বিষয় না। এটা হচ্ছে মানবাধিকার
রক্ষায় নীতি ও প্রতিশ্রুতির বিষয়।”
মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে
যুক্তরাষ্ট্র কোনো ছাড় দেবে না বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে শ্রমিকদের কাজের
পরিবেশ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা শ্রমিকদের অধিকার ও খারাপ
কর্মপরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
“দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশ এর মূল্য দিয়েছে ২০১৩ সালে জিএসপি বঞ্চিত
হয়ে। আর এসব কারণে বৈদেশিক অর্থায়নের বড় উৎস ইউএস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোঅপারেশন
থেকে বাইরে থেকে যাচ্ছে।”