১ জুন ইতালির বিপক্ষে ‘ফিনালস্সিমা’ ম্যাচে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচের আগে নিজ দেশের দৈনিক টিওয়াইসির মুখোমুখি হয়েছিলেন মেসি। সেখানে দেওয়া সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য।
প্রশ্ন: ‘লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাই ইউরোপের মতো গোছানো নয়’, কিলিয়ান এমবাপের এই মন্তব্য সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
লিওনেল মেসি: অনুশীলনের বাইরে অবশ্যই আমরা নানা বিষয় নিয়ে কথা বলি, কিন্তু এই বিষয় নিয়ে ওর সঙ্গে কথা হয়নি। জানি না, সে কেমন করে বলেছে, কী বলেছে। এটা নিয়ে স্পেনের খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি। যখন বাছাই শেষ করে আমরা ফিরতাম, তখন বলতাম, ‘তোমাদের কি ধারণা আছে, সেখানে (লাতিন আমেরিকায়) খেলতে যেতে হলে বিশ্বকাপ বাছাই উতরানো তোমাদের জন্য কতটা কঠিন হতো?’
কলম্বিয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা, গরম, ভেনেজুয়েলা…প্রতিটি দেশের ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশন, এসব বাছাইকে আরও বেশি কঠিন করে তোলে। এগুলো ছাড়াও সেখানে দুর্দান্ত খেলোয়াড় নিয়ে গড়া দারুণ সব দল আছে এবং প্রতিপক্ষ যে দলই হোক না কেন, ফুটবলের মান অনেকটা একই।
এখন আমি মনে করি, আমরা ইউরোপিয়ান একটি দলের বিপক্ষে খেলব এবং এটা আমাদের জন্য দারুণ একটি পরীক্ষা।
প্রশ্ন: ইতালির বিপক্ষে ‘ফিনালিস্সিমা’ ম্যাচ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
মেসি: তারা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন। ইতালি যদি বিশ্বকাপে থাকত, তাহলে ফেভারিট দলগুলোর একটি হতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা ছিটকে গেছে, কিন্তু তারা আগেই গ্রুপ পর্বের বাছাই (বাছাইয়ের সরাসরি ধাপ) পেরোতে পারত, যখন তাদের সুযোগ ছিল প্লে-অফে যাওয়ার আগের ম্যাচটি জেতার। কিন্তু তারা সেটা পারেনি, ফুটবলীয় কারণেই পারেনি, ছিটকে গেছে বিশ্বকাপ থেকে।
নিশ্চিতভাবে ইতালি যদি থাকত, তাহলে ড্রয়ে কেউ তাদের গ্রুপে পড়তে চাইত না। তাই সেরা উপায়ে প্রস্তুত হতে এবং লক্ষ্য পূরণের পথে এগিয়ে যেতে ইতালির বিপক্ষে ম্যাচটি আমাদের জন্য চমৎকার একটা পরীক্ষা।
প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হারের পর পিএসজি সমর্থকদের দুয়ো শুনেছিলেন…
মেসি: প্রথমেই আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘বাচ্চারা কি বলল? তারা কি এগুলো দেখেছে?’ তারা কী ভেবেছিল এবং কী বলছিল…এবং সত্যি বলতে, বিষয়টা আমার ভালো লাগেনি। কেননা, আমার পরিবার সেখানে ছিল এবং তারা দেখল, লোকে আমাকে দুয়ো দিচ্ছে, সেখানে আমার বাচ্চারাও ছিল এবং তাদেরকে এসব সহ্য করতে হয়েছিল।
ওরা আমাকে কিছু বলেনি, বিষয়টা এড়িয়ে গিয়েছিল এমনভাবে, যেন তারা কিছু বোঝেনি, কেন দুয়ো দেওয়া হয়েছিল, সেটাও তারা উপলব্ধি করতে পারেনি। কিন্তু আমি জানি, তারা কিছু একটা অনুভব করেছিল।

প্রশ্ন: মেসি কার জন্য খেলে?
মেসি: প্রথমত আমি সবসময় নিজের এবং জয়ের জন্য খেলি। কেননা, খেলতে নামলে আমি সবকিছুকেই (প্রতিপক্ষকে) হারাতে চাই। লড়াই যেখানেই হোক না কেন, প্রতিটি ম্যাচে আমি সবসময় নিজের সর্বোচ্চটুকু নিংড়ে দিতে চাই।
এরপরও কিছু সময় আমার পরিবারকে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, ভুগতে হয়েছে।
যেমন, জাতীয় দলের হয়ে আমি যখন কোনো সাফল্য পাচ্ছিলাম না এবং সমালোচিত হচ্ছিলাম, তখন অনেক বিষয় তাদের হজম করতে হয়েছিল। দিনের পর দিন টিভি চালু করলেই তারা শুনতে পেত, আমাকে সমালোচনা করা হচ্ছে, কিংবা এমন কথা বলা হচ্ছে যেগুলো সত্যি নয়, এতে আমার মতো আমার পরিবারের লোকও ভীষণ ভুগেছে।
কোপা আমেরিকা জয়ের পর বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছিলাম। টের পাচ্ছিলাম, যে আনন্দ এই মুহূর্তে তারা অনুভব করছে, ঠিক একই অনুভূতি আমারও হচ্ছিল। আমি এখনও তাদের জন্য খেলি, আমার সন্তানদের জন্য, আমার স্ত্রীর জন্য।
প্রশ্ন: ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে কি মেসিকে খেলতে দেখা যাবে?
মেসি: আগেও আমি বলেছি, (কাতার) বিশ্বকাপের পর অনেক বিষয় নিয়ে আমাকে পুনরায় ভাবতে হবে। আসলে জানি না,,,। সত্যি কথা হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে আমি ভাবব এবং দেখা যাক কী হয়।
একটা সময় যেমন কল্পনায়ও ছিল না, আমি বার্সেলোনা ছাড়া অন্য কোথাও খেলব। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমাকে চলে যেতে হলো। আগামীতে অনেক কিছু ঘটতে পারে, ফুটবল খুবই পরিবর্তনশীল। সত্যিই এটা আমার কাছে খুব কঠিন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি এই মুহূর্তে আমার কাছে স্পষ্ট নয়।
প্রশ্ন: দিয়েগো মারাদোনাকে সম্মান জানাতে নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজের জার্সি পরার ভাবনা কিভাবে এলো?
মেসি: ম্যাচের আগের রাতে আমি আর আন্তোনেল্লা শুয়ে ছিলাম। আমি ওকে বললাম, “দিয়েগোর জন্য আমাকে কিছু করতে হবে।“ সেটা জাতীয় দলের হয়ে কিংবা অন্য কোনো ভাবে।
এরপর আমি ওপরে গেলাম এবং সেখানে একটা ছোট্ট দরজা ছিল, যেটা সবসময় বন্ধ থাকত, সেখানে আমি জিনিসপত্র রাখি। খুললাম সেটা। একটা চেয়ার ছিল সেখানে, সেটির ওপরে নিওয়েলসের ১০ নম্বর লেখা টি-শার্টটা ছিল।
ওই দরজাটা সবসময় বন্ধ থাকে, আমিও ঠিক জানি না, সেখানে আসলে কী করতে গিয়েছিলাম আমি। এমনকি আমার মনেও ছিল না ওই জার্সিটা আমার কাছে আছে। তো আমি জার্সিটা দেখলাম এবং বললাম, “এটাই তো চাইছি।”
অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার ছিল। রাত ১১টার মতো হবে তখন। আমরা আর কোনোকিছুতে মনোনিবেশ করছিলাম না।
প্রশ্ন: আর্জেন্টিনা দলে নানা জনের ভূমিকা কী?
মেসি: যখন আমরা এখানে একত্রিত হই, মনে হয় সবকিছু ভিন্নভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে, প্রত্যেকে নিজেদের ভূমিকাটা জানে এবং মাঠে কী করতে হবে, সেটাও জানে। ম্যাচ জেতার চেষ্টা করতে যেটা করতে হবে, আমরা সেটাই করি এবং সেটা ভালো হোক কিংবা খারাপ।
অবশ্যই আমি খেলতে এবং ভালো খেলতে পছন্দ করি, সবসময় পায়ে বল রাখতে চাই। কিন্তু সেটায় যদি কাজ না হয়, তাহলে আমাদের ভিন্ন কিছু করতে হবে, আমরা সেগুলোর জন্যও প্রস্তুত থাকি। কেননা, জাতীয় দলে খেলা মানে স্রেফ ওরকম নয়, যখন বল পায়ে থাকবে, ভালোও খেলতে হবে। বল পায়ে এবং বল ছাড়া কী করতে হবে, সে বিষয়ে সবাই ভালোভাবে জানে।

প্রশ্ন:আলেহান্দ্রো সাবেইয়া ও লিওনেল স্কালোনির তুলনা করতে যদি বলা হয়…
মেসি: আমার মতে, দুজনই রক্ষণে প্রচুর গুরুত্ব দেয়, কিন্তু আক্রমণাত্মক খেলার কথা ভুলে যায় না এবং সবসময় তারা মাঠে নামে জয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। অনেকবারই দেখেছি, শুধু বিশ্বকাপে নয়, কোপা আমেরিকা, ইউরোকোপা, এমনকি চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও…জাল অক্ষত রাখতে পারলে সবসময় জয়ের সুযোগ থাকে, তা যে ম্যাচেই হোক বা প্রতিপক্ষ যেই হোক।
সবকিছু খুবই ট্যাকটিক্যাল, ভীষণ চর্চিত এবং প্রতিপক্ষকে যতটা সম্ভব কম জায়গা দেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। গোছানো যে কোনো জাতীয় দল বা অন্য কোনো দল প্রতিপক্ষের জন্য ম্যাচটা কঠিন করে তুলতে পারে।
প্রশ্ন: বর্তমান আর্জেন্টিনা দল এবং তাদের সাফল্য নিয়ে বলুন।
মেসি: এই দল প্রতিটি ম্যাচ খেলে ‘ফাইনাল’ ভেবে। কোচিং স্টাফরা ম্যাচগুলোর জন্য দলকে দারুণভাবে প্রস্তুত করে এবং ছেলেরা খুব ভালো করে জানে তাদের কিভাবে খেলতে হবে এবং ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্তে তাদের কী করতে হবে। তরুণ একটা দলে যা সহজ নয়, কিন্তু এই দলের সবার নিজের করণীয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা আছে। আর্জেন্টিনার এই দলটা যে কারো সঙ্গে লড়াই করতে পারে এবং যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য ম্যাচটা কঠিন করে তুলতে পারে।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, আমরা বিশ্বকাপের দাবিদার বা এমন কিছু। বলতে চাইছি, আমরা যে কোনো দলের বিপক্ষে লড়াই করব, কেননা যে কারও বিপক্ষে খেলার জন্য আমরা প্রস্তুত।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে ইতালির অনুপস্থিতি নিয়ে আপনার ভাবনা…
লিওনেল মেসি: সত্যি বলতে, এটা অদ্ভুত যে তারা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন এবং বিশ্বকাপে নেই। তাদের না থাকা পীড়াদায়ক, কিন্তু এটাই এখন সত্যি।
পিএসজিতে আমার সতীর্থ এবং বন্ধু আছে ইতালি দলের, দুজনের সঙ্গে আমার দারুণ বন্ধুত্ব, আমি সেখানে যাওয়ার পর তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে, বিশেষ করে মার্কো ভেরাত্তি। ওর জন্য আমার খুব কষ্ট লাগছে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে ফ্রান্সের সম্ভাবনা কেমন দেখেন?
মেসি: ফ্রান্স মুগ্ধতা ছড়ানো একটি দল। গত বিশ্বকাপের আগেও আমি বলেছিলাম, তাদের সম্ভাবনা আছে এবং তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আমি মনে করি, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের (২০১৬ আসরে ফাইনাল হার) ধাক্কা তাদেরকে আরও শক্তিশালী করেছিল এবং আরও অনেক কিছু বুঝতে শিখিয়েছিল। এবারও তারা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার থাকবে।
প্রশ্ন: করিম বেনজেমার ব্যালন ডি’অর জয়েন সম্ভাবনা কতটুকু মনে হয়?
মেসি: আমার মনে হয়, এখানে দ্বিধার কোনো অবকাশই নেই। এটা স্পষ্ট যে বেনজেমা দুর্দান্ত একটা বছর কাটিয়েছে এবং শেষটা করেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে। শেষ ষোলো থেকে শুরু করে পরের সব ম্যাচেই সে দলের জয়ের কারিগর আমার মনে হয়, এ বছর পুরস্কারটি তার পাওয়া নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রশ্ন: সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে কাতার বিশ্বকাপ শুরু করবে আর্জেন্টিনা। প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষকে কিভাবে দেখছেন?
মেসি: বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ সবসময় অন্যরকম। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক না কেন, প্রথম ম্যাচে জড়তা থাকে। আমাদের দলের অনেকেরই এটা প্রথম বিশ্বকাপ। তাদের চাওয়া যেমনই থাকুক, ‘জিততেই হবে’-এই চাপ তারা অনুভব করবে। কারণ, বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ জেতাটা পরের পথচলার জন্য আত্মবিশ্বাস দেয়। এটা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দল রোমাঞ্চ অনুভব করছে, উন্মুখ হয়ে আছে এবং আমরা ভালোভাবে প্রস্তুতি হচ্ছি সেই সময়ের জন্য।
প্রশ্ন: গ্রুপে আপনাদের অন্য সঙ্গীরা কেমন?
মেসি: অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি যে, কোনো প্রতিপক্ষই সহজ নয়। গত বিশ্বকাপে আমাদের সঙ্গে যেমনটা হয়েছে, আমরা গ্রুপপর্ব নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু পরে শেষ পর্যন্ত সবকিছু আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গিয়েছিল (নাইজেরিয়া, আইসল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গ্রুপের লড়াইয়ে রানার্সআপ হয়েছিল তারা এবং শেষ ষোলোয় ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরেছিল)।
মেক্সিকো এমন একটা দল, যাদের বিপক্ষে আমাদের সবসময় চড়া মূল্য দিতে হয় এবং তারা ভালো খেলে। যদিও আমরা প্রায়ই ভাগ্যকে পাশে পেয়েছি এবং বেশিরভাগ সময় তাদের সঙ্গে উতরে গেছি বা জিততে পেরেছি। দলটা খুবই ভালো এবং খেলা নিয়ে স্বচ্ছ ধারনা তাদের আছে।
তাদের এমন একজন কোচ আছে যিনি আর্জেন্টিনা দল সম্পর্কে জানেন; তারা আমাদেরকে খুব ভালোভাবে জানে। নিশ্চিতভাবে আমাদের গ্রুপটা কঠিন হবে, পোল্যান্ড ম্যাচের মতোই কঠিন হবে। পুরো বিশ্বকাপই কঠিন হতে যাচ্ছে।

প্রশ্ন: সের্হিও আগুয়েরোর হঠাৎ সরে দাঁড়ানোর খবরে বিস্মিত হয়েছিলেন?
মেসি: দেখুন, ওর কী হয়েছিল, আমরা তেমন একটা জানতাম না। একটু দূর থেকে ওকে দেখেছিলাম এবং যতক্ষণ না ওর সঙ্গে কথা হলো, ততক্ষণ পরিস্থিতি বুঝতে পারিনি। যা দেখলাম তাতে মনে হলো, ওর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত।
কিন্তু সে বিশেষ একজন, সবার চেয়ে আলাদা ব্যক্তিত্বের এবং এ কারণেই সে সিদ্ধান্তটা নিতে পেরেছে। নিশ্চিতভাবে সে কষ্ট পেয়েছে, একাকী কিংবা পরিজন-বন্ধুদের সঙ্গে কেঁদেছে। সৌভাগ্যক্রমে সে দ্রুত ভিন্ন একটা পথ খুঁজে পেয়েছে এবং ভালো আছে। মনে হচ্ছে, সে ভালোই আছে।
সে যা করছে তা উপভোগ করছে। যেটা ভাবছে, সেটা কারও পরোয়া না করে বলছে। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর আমার ধারনা, সেও এভাবে ভালোবোধ করছে এবং তাকে ভালো দেখাচ্ছে।
তাকে মিস করছি কিনা? হ্যাঁ, অনেক। সারা দিন আমি ওর পাশে থাকতাম, একসঙ্গে ঘুম থেকে উঠতাম, একসঙ্গে ঘুমাতে যেতাম এবং সত্যিটা হচ্ছে, তাকে মিস করব। ব্যক্তিগতভাবে আমি ওকে অনেক মিস করব, আমার মনে হয় পুরো দলও ওকে মিস করবে।
প্রশ্ন: আর্জেন্টিনার হয়ে পারফরম্যান্সের জন্য আগে সমালোচিত হতেন, সেটা তো বদলেছে?
মেসি: এটা নিয়ে অনেকবার কথা বলেছি এবং আমরা বলেছি, জেতাটাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। অতীতে আমরা যে দারুণ কাজগুলো করেছিলাম, সেসবের মূল্যায়ন করা হয়নি। যেমন বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা, দুটি কোপা আমেরিকার ফাইনাল খেলা। আগের দলটার সমালোচনা করা তাই ভীষণ অন্যায়।
ওই সময়ও আমরা জাতীয় দলের জন্য সবটুকু দিয়েছি… কিন্তু তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছিল এবং তাদের এটা প্রাপ্য ছিল না, কেননা তারাও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করেছিল। তারা (ট্রফি) জিততে পারেনি, কিন্তু তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিল। আমার মনে আছে, ব্রাজিল বিশ্বকাপে ওরা সবাই যতটা খুশি ছিল, তার আগে কখনও ছিল না। ওই বিশ্বকাপ উপভোগ্য ছিল, শেষ দিনের আগ পর্যন্ত তেমনই ছিল। কোপা আমেরিকার মতো, যেটায় আমরা পেনাল্টিতে হারলাম। কিন্তু হ্যাঁ, এটা ভালো যে লোকে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে সবকিছু জেতা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: কোপা আমেরিকা জয়ের স্মৃতি এখনও কতটা নাড়া দেয়?
লিওনেল মেসি: ফেলে আসা মুহূর্তগুলো কেমন ছিল, ছবি দেখলে সেসব স্মৃতি ফিরে আসে। এরপর আবার তা অন্য সবকিছুর মতোই। ব্যাপারটা এরকম যে, ওই পর্ব শেষ, ওটা জেতা হয়ে গেছে, ঠিক যেমন যখন আমরা জিততে পারিনি এবং ওখান থেকে আমার আবার এগিয়ে গেছি সামনের দিকে।
এটাও (কোপা আমেরিকা জয়) ঠিক তাই। স্মৃতিটা মধুর, এই তো। ওই পর্যন্তই এবং সবসময় এভাবেই থাকবে। কোনো কিছু বদলায়নি। এগিয়ে যেতে হবে, নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, নতুন লক্ষ্য দাঁড়াবে এবং এক-একটি দিন হিসেব করে ভাবতে হবে।

প্রশ্ন: পিএসজিতে নতুন মৌসুম নিয়ে কিভাবে পরিকল্পনা করছেন?
মেসি: নিজেকে নিয়ে ভাবছি, ব্যক্তিগতভাবে এবং এ বছরে কী হলো, সেটা নিয়ে ভাবছি। পিএসজিতে সময়টা ভালো কাটেনি। পরিস্থিতি বদলাতে পারব কি-না, তা নিয়ে ভাবছি…আমি জানি, এই বছরটা ভিন্ন হবে। সামনে যা আসছে, তার জন্য ইতোমধ্যে নিজেকে তৈরি করেছি।
এখন আমি এই ক্লাবকে জানি, এই শহরটাকে চিনি, ড্রেসিংরুতে সতীর্থদের সঙ্গে আরেকটু বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করছি এবং আমি জানি, ভিন্ন কিছু হবে (আগামীতে)।
প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজি-রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচে পেছন ফিরে তাকিয়ে কি মনে হয়?
মেসি: ফলটা ছিল আমাদের জন্য চরম ধাক্কা। আমি তো অনেক বছর ধরেই এর মধ্যে ছিলাম এবং আমি জানি রিয়াল মাদ্রিদ কী।
আমি জানতাম যে এমন কিছু হতে পারে। কারণ, আচমকাই তারা গোল করে ফেলতে পারে এবং ম্যাচের মোড় তাতে বদলে যায়। এটাও জানতাম, ম্যাচে ১৫-২০ মিনিট আমাদের থাকবে, কিন্তু যদি অদ্ভুত কিছু ঘটে বা গোল হয়ে যায়, তাহলে ম্যাচটা আবার বদলে যাবে এবং আমাদের সঙ্গে তা-ই ঘটল। পরে বাকিদের সঙ্গেও (চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল) তা ঘটল এবং এমন নয়, এটা এই প্রথম হলো।”
প্রশ্ন: বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে এসে কোন পরিবর্তনগুলো অনুভব করছেন?
মেসি: আমাকে নতুন খেলার ধরনের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হয়েছে। আগে সারা জীবন আমি এক ঘরানার খেলায় (বার্সেলোনায়) অভ্যস্ত ছিলাম। নতুন একটা জায়গাতে আসাও ছিল অন্যরকম। ফুটবলকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা, নতুন সতীর্থ…সহজ ছিল না, সবকিছুই আমার জন্য নতুন ছিল।
প্রশ্ন: ছবিতে আপনার ঘরে এত কার্পেট দেখা যায়!
মেসি: আমরা এত ঠাণ্ডার সঙ্গে অভ্যস্ত নই…বার্সেলোনাতেও ঠাণ্ডা কিন্তু এতটা নয়। প্যারিসের ঠাণ্ডা সহ্য করা যায় না। আমরা আরও উষ্ণ কিছুর খোঁজে আছি।
প্রশ্ন: বাচ্চারা প্যারিসে মানিয়ে নিতে পেরেছে?
মেসি: থিয়াগো পরিস্থিতি বোঝে এবং সম্ভবত সে বিষয়গুলো নিজের মধ্যেই রাখে। কখনও কিছু বলে না। কিন্তু এর বাইরে সে বার্সেলোনার সবকিছু এবং সেখানকার বন্ধুদের মিস করে। তবে সে দ্রুত মানিয়ে নিয়েছে।
মাতেও একইরকম, মানিয়ে নিয়েছে। সে ভিন্ন প্রকৃতির, দ্রুত সম্পর্ক তৈরি করতে পারে এবং সহজে ছাড়তে পারে। আর সিরো এই প্রথম স্কুলে গেল, সেহেতু তার কোনো পছন্দ ছিল না। সৌভাগ্যক্রমে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে।
প্রশ্ন: আপনি নিজে প্যারিসে কতটুকু মানিয়ে নিলেন?
মেসি: সৌভাগ্যক্রমে বাচ্চাদের এখানে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়টা ছিল দারুণ। আমাদের সবসময় ভয় ছিল, বাচ্চারা এই পরিবর্তনে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাবে। কিন্তু ঘটল উল্টোটা। সবকিছু সহজভাবে হলো, দ্রুত ওরা স্কুলে গেল, বন্ধু বানালো।
আমার ও আন্তোনেল্লার জন্য বেশি কঠিন ছিল। মনে পড়ে, প্রথম যেদিন ওদের স্কুলে নিয়ে গেলাম, স্কুল থেকে বেরিয়ে আমি আর আন্তোনেলা কেঁদেছিলাম। ভয়ঙ্কর ব্যাপার ছিল। পরস্পরকে বলছিলাম, ‘এখানে কী করছি আমরা, কী হয়ে গেল!’
প্রশ্ন: আর্জেন্টিনা দলে এসে কী আনন্দ ফিরেছে?
লিওনেল মেসি: এখানে আসতে পারাটা সবসময় আনন্দের। একটু আগেও আমরা এ নিয়ে কথা বলছিলাম। আমার মনে হয়, টিভি বা সামাজিক মাধ্যমেও আপনি দেখতে পাবেন। দারুণ একটা দল এবং আমরা ভালো সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। জয়ের ধারায় আছি আমরা, এভাবে এগিয়ে যেতে এটা অনেক সাহায্য করে; তো আমরা খুবই খুশি।