আর নগদ টাকার প্রয়োজন মেটাতে পণ্য রপ্তানির বিপরীতে আসা বৈদেশিক মুদ্রা
এক কার্যদিবসের মধ্যেই স্থানীয় মুদ্রায় নগদায়ন করে উদ্যোক্তাদের পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দুটি সব ব্যাংকের প্রধান
নির্বাহী ও অনুমোদিত ডিলার শাখাকে পাঠিয়েছে।
এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, পণ্য রপ্তানি আয় ভিন্ন কোনো ব্যাংকে ডিসকাউন্টসহ
বিক্রি করলে বা আগাম সমন্বয় করলেও প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তার এলসি
স্থাপনকারী ব্যাংকেই ফেরত পাঠাতে হবে।
এক কার্যদিবসের মধ্যেই তা ফেরত দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত ব্যাংক
হিসাবের মাধ্যমে। এই অর্থ লেনদেনের সব তথ্য সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
উদ্যোক্তারা পণ্য রপ্তানি কোনো ব্যাংকের এডি শাখায় (বৈদেশিক মুদ্রা লেনেদেনের
অনুমতিপ্রাপ্ত) ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে করে থাকেন,
তখন উদ্যোক্তারা চাইলে রপ্তানি বিল আগাম ওই ব্যাংক বা ভিন্ন কোনো ব্যাংকের
কাছে বিক্রি করে দিতে পারেন, যা এলসি নেগোশিয়েট নামে পরিচিত। রপ্তানি আয় দেশে আসলে
তা সমন্বয় করে নেয় ব্যাংক।
আর বিল নেগেশিয়েট না করে থাকলে রপ্তানি আয় আসার পরও ভিন্ন ব্যাংকে বিক্রি
করার সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে দর কষাকষির মাধ্যমে উদ্যোক্তারা বেশি অর্থ নিতে পারেন।
আর ওই ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা পায়।
ব্যাংকারদের দাবির মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত দিল রপ্তানিকারক ব্যাংকের
কাছেই বৈদেশিক মুদ্রা ফেরত আসবে। ভিন্ন কোনো ব্যাংকে ডিসকাউন্ট সুবিধা নিলেও প্রথম
ব্যাংকেই বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাতে হবে ডিসকাউন্ট সুবিধা দেওয়া ব্যাংকে।
আরেক সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রপ্তানি আয়ের মধ্যে স্থানীয়ভাবে
সংযোজিত অর্থ ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি দায় পরিশোধে ব্যবহার করা যাবে।
রপ্তানি আয় ব্যাংকের ‘নস্ট্রো’ হিসাবে
আসার পরও কিছু কিছু ব্যাংক উদ্যোক্তাদের পক্ষে বিল নগদান করে অর্থ পরিশোধ করছে না বলে
অভিযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, “দ্রুত
অর্থ পরিশোধ না করায় উদ্যোক্তারা চলতি মূলধন সঙ্কটে পড়ছেন। রপ্তানি আয় ব্যাংকের নস্ট্রো
হিসাবে আসার এক কার্য দিবসের মধ্যেই তা উদ্যোক্তাদের পরিশোধ করতে হবে।”
আমদানির চাপে দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সঙ্কট চলছে। এতে ডলারের বিপরীতে
প্রতিনিয়ত দর হারাচ্ছে টাকা। সর্বশেষ গত রোববার আন্তঃব্যাংকে ডলারের বিনিময় হার সর্বোচ্চ
৮৯ টাকা বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকে নগদ বিক্রিতে এক্সচেঞ্জ হাউজের বিনিময় হারের উপর ছেড়ে দিয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকগুলো ৯৩ থেকে ৯৯ টাকা পর্যন্ত দরে নগদে ডলার বিক্রি করছে
ব্যাংকগুলো।
অন্যদিকে খোলা বাজারে সোমবার ডলার বিক্রি হয়েছে ৯৭ টাকা ৭৫ পয়সায়। একদিন
আগে তা ছিল ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা।
উদ্যোক্তারা বেশি লাভে ভিন্ন ব্যাংকের কাছে রপ্তানি আয় নগদায়ন করছে।
এতে ব্যাংকগুলো বেশি সুবিধা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে শুরু করেছে।
এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। তাই
ব্যাংকারদের দাবিতে ভিন্ন ব্যাংকে রপ্তানি আয় নগদায়নের সুবিধা বহাল রাখা হলেও বৈদেশিক
মুদ্রা প্রথম ব্যাংকই পাবে বলে সিদ্ধান্ত দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।