মঙ্গলবার
নিজেদের সংলাপের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান বিএনপি মহাসচিব
মির্জা
ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
ফখরুল
বলেন, “যুগপৎ
আন্দোলনের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।”
“আমরা
প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছি যে, যুগপৎ ধারায় আন্দোলন যার যার অবস্থান থেকে পরিচালনা
করতে হবে,”
বলেন সাকি।
যুগপৎ
অর্থ তারা জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করবে না, তবে একই লক্ষ্য অর্জনে তারা কর্মসূচি
আলাদাভাবে পালন করলেও তাতে সমন্বয় থাকবে।
বিএনপি
২০ দলীয় জোটে রয়েছে, যেখানে তাদের সঙ্গে জামায়োতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল
রয়েছে। আবার গণফোরামসহ ভিন্ন কয়েকটি দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও গড়ে তারা, যদিও
তা এখন নিষ্ক্রিয়।
বাম
গণতান্ত্রিক জোট ছেড়ে আসা জোনায়েদ সাকির দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকা আ স ম রবের
জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনের
প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
তার
মধ্যেই মঙ্গলবার বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করল গণসংহতি, যে বৈঠকটি হয়েছে ঢাকার হাতিরপুলে
বাম দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
যুগপৎ
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “ভয়াবহ যে ফ্যাসিবাদী
সরকার, যারা আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধবংস করে দিচ্ছে, তাদেরকে সরিয়ে সত্যিকার
অর্থেই একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা একমত হয়েছি।
“যে
বিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি, তা হচ্ছে, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল
করতে হবে। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে, তাদের অধীনে নির্বাচন
কমিশন গঠন হবে, তাদের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই ভবিষ্যতে
পার্লামেন্ট ও সরকার গঠিত হবে।”
বিএনপি
মহাসচিব বলেন, “আমাদের
আলোচনায় মৌলিক কোনো মতভেদ দেখিনি। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের নামের বিষয়ে
মতভিন্নতা থাকতে পারে, অন্তবর্তীকালীন না নিরপেক্ষ সরকার। এটা নিয়ে কোনো সমস্যা
হবে না। আমরা আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব।”
সরকারবিরোধী
বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে অন্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাবেন বলে
জানান বিএনপি মহাসচিব।
জোনায়েদ
সাকি বলেন, “আমরা
মনে করি, বর্তমান সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন দরকার এবং এইভাবে যদি একটা জাতীয় রূপরেখা
আজকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কাছে থেকে হাজির হয়, জনগণ নতুন করে আন্দোলিত হবে।
একটা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারবে।”
তিনি
বলেন, “বর্তমান
সরকার ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে এককাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এবং এরা
প্রত্যেকেই ভোটাধিকারের দাবিতে আজকে নিজেরা আন্দোলন করবেন। একটা জাতীয় ঐক্যের
জায়গায় সরকার যেহেতু দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, এই জাতীয় আন্দোলন আগামী দিনে সকলে নিজের
অবস্থান থেকে সাধ্যমত করবেন।
“এর
মধ্যে কীভাবে সমন্বয় গড়ে তোলা যাবে সেই সমন্বিত যুগপৎ ধারা বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি,
এবং ভবিষ্যতেও এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে একটা কাঠামো একটা রূপরেখা
নিশ্চিতভাবে সামনে আসবে।”
আলোচনার
জন্য সকাল সোয়া ১২টায় গণসংহতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল
হাসান মাহমুদ টুক ও সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন।
গণসংহতির
১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে সাকির সঙ্গে ছিলেন আবুল হাসান রুবেল, তাসলিমা আখতার,
মুনির উদ্দিন পাপ্পু, হাসান মারুফ রুমি, ইমরাদ জুলকারনাঈন, বাচ্চু ভুঁইয়া,
জুলহাসনাইন বাবু, দীপক রায়, মিজানুর রহমান, আলিফ দেওয়ান।
সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব
আওয়ামী
লীগ ব্তমান সংবিধানে ভর করে ‘ফ্যাসিবাদ
কায়েম করেছে’
দাবি করে জোনায়েদ সাকি বলেন, “এই
সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামোর বদল দরকার। সেজন্য আমরা সাংবিধান সংস্কারের সুনির্দিষ্ট
কতগুলো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছি।
“যেমন
আমরা মনে করি, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে হবে, নিম্ন
আদালতকে উচ্চ আদালতের অধীনস্ত করতে হবে সমস্ত দিক থেকে। উচ্চ আদালতের বিচারক
নিয়োগের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি করতে হবে এবং কোনোভাবেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা যাবে না। আমরা এমন সাতটি
প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি।”
তার
মধ্যে আরও রয়েছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার, নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি,
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদে নিম্ন কক্ষ ও উচ্চ কক্ষ
গঠন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সব নিবন্তনমূলক আইন বাতিল ইত্যাদি।
সাকি
বলেন, “আমরা
মনে করি, এই সরকারের পতনের পরে ভবিষ্যত রাষ্ট্রটি কীভাবে চলবে, এই বিষয়ে
সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুণগত রূপান্তর বা গণতান্ত্রিক রূপান্তর,
নতুন একটা গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত তৈরির মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নতুন
স্বপ্ন তৈরি হতে পারে।”
মির্জা
ফখরুল বলেন, “কতগুলো
মৌলিক বিষয় এদেশের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন যে কথাগুলো জোনায়েদ সাকি সাহেব বলেছেন।
গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে সংবিধানের পরিবর্তন এবং
কতগুলো মৌলিক বিষয় আছে তার পরিবর্তন- আমরাও মনে করি যে অত্যন্ত জরুরি।”