ক্যাটাগরি

রাশিয়ার তেল বাংলাদেশে পরিশোধন উপযোগী নয়: প্রতিমন্ত্রী

মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ভবনে এক অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে তেল কেনার অফার পাচ্ছি। কিন্তু সেই তেলটা আমাদের উপযোগী কিনা সেটা চিন্তা করতে হবে।”

ইউক্রেইনে যুদ্ধ লাগানোর জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা রাশিয়া অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে বলে গত ২৩ মে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী।

আর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার খড়গ পাশ কাটিয়ে রাশিয়া থেকে কীভাবে জ্বালানি ও গম আমদানি করা যায়, সেই কৌশল ভারতের কাছ থেকে শিখতে চাওয়ার কথা সোমবার জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর জ্বালানি প্রতিবেদকদের সংগঠন এফইআরবির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, “আমরা সারটেইন দেশ থেকে ক্রুডের যে অফার পেয়েছি, আমরা দেখেছি সেইটা আমাদের রিফাইনারির জন্য ম্যাচ করে না। আমরা অ্যারাবিয়ান মারবান ব্যবহার করি। এটা আলাদা স্পেসিফিকেশনের।”

বাংলাদেশ মূলত অপরিশোধিত তেল কেনে সৌদি আরবের সৌদি অ্যারামকো এবং আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি থেকে।  

আর পরিশোধিত তেল সরবরাহ করে কুয়েত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতের আটটি কোম্পানি। এর মধ্যে চীনের কোম্পানি দুটি।   

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের হিসাবে, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের ৩০ লাখ ৬৩ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে। এ সময় অপরিশোধিত তেল এসেছে ৮ লাখ ৭০ হাজার টন।

অপরিধোধিত তেলের ঘনত্বের মাত্রা বোঝানো হয় এপিআই (আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইন্সটিটিউট) গ্র্যাভিটি দিয়ে। এপিআই গ্র্যাভিটি যত বেশি হবে, ওই তেল তত হালকা হবে। এই মান ১০ এর বেশি হলে তেল পানিতে ভাসবে। আর ১০ এর কম হলে তা পানির চেয়ে ভারী হওয়ায় তলিয়ে যাবে।

ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির এনার্জি ইনসাইটে দেখা যায়, রাশিয়ার পাঁচ ধরনের অপরিশোধিত তেলের মধ্যে ইএসপিও এর এপিআই গ্র্যাভিটি ৩৬, সাখালিন ব্লেন্ডের ৪৪ দশমিক ৭, সাইবেরিয়ান লাইটের ৩৪ দশমিক ৮, সোকল এর ৩৫ দশমিক ৬ এবং ইউরালস এর ৩০ দশমিক ৬। আর অ্যারাবিয়ান মারবানের এপিআই গ্র্যাভিটি ৪০ দশমিক ৪।

আনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি নসরুল হামিদ।     

বাজেটে কত ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। বিইআরসি (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) যদি মূল্যটা ঠিক হয়, তাহলে সেই মূল্যের ওপর আমরা হিসাব করব যে সরকার কত টাকা ভর্তুকি দেবে।”

তবে আপাতত বড় কেনো পরিবর্তনে না যাওয়ার ইংগিত দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, বিদ্যুৎ বা জ্বালানির ক্ষেত্রে (দামে) এমন কোনো পরিবর্তন হবে না… আমরা চাচ্ছি সকলের কাছে যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে।”

তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। বৈশ্বিক পরিস্থিতি যাই হোক, জনগণকে স্বস্তিতে রাখাই আমাদের লক্ষ্যে।

বিদ্যুতখাতের জন্য নতুন যে মহাপরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেখানে দেশে নতুন জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের বিষয়টি থাকছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

এফইআরবির নির্বাহী পরিচালক রিশান নাসরুল্লাহর সঞ্চালনায় মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান ও এফইআরবির চেয়ারম্যান মো. শামীম জাহাঙ্গীর বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে জ্বালানি তেল বেচতে চায় রাশিয়া
 

রাশিয়ার তেল-গ্যাস ছাড়া বিশ্বের চলবে?
 

রাশিয়ার তেলের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
 

রাশিয়া থেকে বাড়তি তেল কেনা ভারতকে ‘ঝুঁকিতে ফেলতে পারে’
 

ভারত কেন রাশিয়া থেকে আরও তেল কিনছে?
 

যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়বে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
 

এখনই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা ‘ভাবছে না’ সরকার