ক্যাটাগরি

স্ত্রীর খোঁজ পেতে বন্ধুকন্যাকে অপহরণ

গেল ৩১ মার্চ অপহৃত হওয়ার পর মাস দুয়েক বাদে সোমবার শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় রাশেদুল ও তার ফুফু রোখসানাকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব-৪ পরিচালক (ডিআইজি) মোজাম্মেল হক মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঢাকার আশুলিয়ার টেঙ্গুরীর এক বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সাদ্দাম হোসেন ও মীরা আক্তার। মোটামুটি এক কিলোমিটার দূরে জিরানী বাজার কলেজ রোডে সাত বছরের সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন রাশেদুল ও নূরজাহান।

সাদ্দাম ও রাশেদুল দুজনই পেশায় রাজমিস্ত্রি। আর মীরা ও নূরজাহান একই পোশাক কারখানার কর্মী। সেই সুবাদে দুই পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্ব।

র‌্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল বলেন, “এর মধ্যে অন্য আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে রাশেদুলের স্ত্রী নূরজাহানের। স্বামী-সন্তান ফেলে সেই ব্যক্তির সঙ্গে চলে যান। সাত বছরের বাচ্চা নিয়ে বিপদে পড়েন রাশেদুল। কিন্তু তিনি জানতে পারছিলেন না তার স্ত্রী কোথায় গেছে।

“তার সন্দেহ হয়, মীরা হয়ত জানেন নূরজাহান কোথায় আছে। তিনি মীরা ও সাদ্দামকে বিভিন্ন সময় নূরজাহানের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন। তারা প্রতিবারই বলেছেন, নূরজাহানের খোঁজ তারা জানেন না।

“রাশেদুলের বিশ্বাস জন্মায়, মীরা তার স্ত্রীর অবস্থান সম্পর্কে জানেন, কিন্তু ইচ্ছে করেই কিছু বলছেন না। এরপর স্ত্রীর অবস্থান জানতে সাদ্দাম-মীরার মেয়েকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন তিনি।”

ডিআইজি মোজাম্মেল জানান, অপহরণের কয়েকদিন আগে আলী হোসেনের বাড়িতে বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে যায় রাশেদুল। বাড়ির ম্যানেজার তাকে জানায়, বাসা খালি নেই। ঘটনার দিন আবারও তিনি বাসা ভাড়া নিতে যান। সেসময় গেটের বাইরে খোলা জায়গায় সাদ্দাম-মীরার ছেলে আর মেয়ে খেলছিল।

“রাশেদুল শিশু দুটির সঙ্গে কথা বলতে যায়। ছেলেটিকে ২০ টাকা দিয়ে দোকানে চকোলেট কিনতে পাঠায়। ছেলেটি চকোলেট কিনতে গেলে মেয়েটিকে নিয়ে পালিয়ে যায়।”

ঘটনার পরদিন ১ এপ্রিল মেয়েটির দাদা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অপহরণ মামলা করেন।

অপহরণের পর শিশুটিকে গাজীপুরে কালিয়াকৈরে রাশেদুলের ফুপু রোখসানা কাছে রাখা হয় জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল বলেন, এরপর রাশেদুল রংপুরে চলে যান।

ঘটনার এক সপ্তাহ পরে তিনি অপহৃত শিশুর মা-বাবাকে ফোন করে বলেন, মেয়েটি তার হেফাজতে আছে এবং তার স্ত্রীর সঠিক ঠিকানা জানালে বাচ্চা ফেরত দেওয়া হবে।

“সাদ্দাম বা মীরা আসলেই জানতেন না রাশেদুলের স্ত্রী কোথায় আছেন। তাই ঠিকানাও দিতে পারেননি। এরপর রাশেদুল ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। শিশুটির বাবা-মা বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠালেও রাশেদুল নিজের অবস্থান প্রকাশ হওয়ার ভয়ে সেই টাকা তোলেননি। শিশুটিকে অপহরণের পর তিনি নিজের ফোন বন্ধ করে দেন, আর চালু করেননি।”

এরই মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাশেদুলের রংপুরের অবস্থান শনাক্ত করা হয় জানিয়ে র‌্যাব-৪ পরিচালক বলেন, সেখান থেকে সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কালিয়াকৈরের রতনপুর থেকে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। গ্রেপ্তার করা হয় রাশেদুলের ফুফু রোখসানাকেও।

র‌্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল বলেন, “শিশুটিকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দিয়ে ফুফুর কাছে কয়েকদিনের জন্য রেখে যান রাশেদুল। এই কয়দিন শিশুটিকে মাতৃআদরেই লালন করেছেন রোখসানা।”