মুমিনুল
হক টেস্ট নেতৃত্ব ছাড়তে চাওয়ার পর সম্ভাব্য পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে
সাকিবের নাম। তবে তাকে অধিনায়ক করার পথে মূল বাধা, টেস্ট ক্রিকেটে তাকে নিয়মিত পাওয়া
নিয়ে অনিশ্চয়তা।
২০২০
সালের অক্টোবরে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর সদ্য সমাপ্ত শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগ পর্যন্ত
দেড় বছরে স্রেফ তিনটি টেস্ট খেলেছিলেন সাকিব। শ্রীলঙ্কা সিরিজের সময় বোর্ড সভাপতি নাজমুল
হাসান প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, সাকিবকে কখন পাওয়া যাবে, নিশ্চিত থাকতে পারেন না তারাও।
তবে
খালেদ মাহমুদ বুধবার বিসিবিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন, টেস্টের প্রতি সাকিবের
বিরাগ নেই। নেতৃত্বের দাবিদার অন্য কয়েকজনের কথা তিনি উল্লেখ করলেন বটে, তবে তার মতে,
টেস্টে সাকিবকে পাওয়া নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা তিনি দেখেন না।
“সাকিব
সবসময়ই বলে ও টেস্ট খেলতে চায় এখন। জানি না, এই কথাটি কেন আসে যে সাকিব টেস্ট খেলতে
চায় না। সাকিবের সঙ্গে যতবার কথা বলি, ও তো বলে অন্য ফরম্যাটের চেয়ে টেস্ট বেশি উপভোগ
করে। সাকিব যদি খেলতে চায়, যদি নিতে চায়, আমার মনে হয়, দায়িত্ব একটা দিলে সাকিবেরও
একটা পরিবর্তন হতে পারে হয়তো।”
“আমি
বলছি না যে সাকিবই অধিনায়ক হবে। তামিম আছে, রিয়াদ এই ফরম্যাট ছেড়ে দিয়েছে। মুশি আছে,
সে নেবে কিনা, এটা বড় ব্যাপার। কে হবে আমি জানি না। তবে সাকিবকে নিয়ে ইস্যু নাই, সাকিবকে
জিজ্ঞেস করলেও বলে যে সবসময় টেস্ট খেলতে চায়।”
বৃহস্পতিবার
দুপুরে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভার পর জানানো হবে বাংলাদেশের নতুন টেস্ট অধিনায়কের
নাম। মুমিনুলের সময়টায় কোনো সহ-অধিনায়ক না থাকলেও এবার সহকারী একজনকে ঠিক করা হবে বলেও
জানান খালেদ মাহমুদ।
বিসিবির
এই পরিচালকের মতে, অধিনায়কের দায়িত্বটা লম্বা সময়ের জন্য দেওয়া উচিত।
‘যে-ই
হোক না কেন, ২ বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া, একটা অধিনায়ককে সময় দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
যে-ই করুক, সে কীভাবে চায় দায়িত্ব, এটা গুরুত্বপূর্ণ।”
আগে
দুই দফায় বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। ২০০৯ সালে তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজার
সহকারী হিসেবে গিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। প্রথম টেস্টের মাঝপথে মাশরাফি চোটে পড়লে
দায়িত্ব পান সাকিব। পরে ২০১১ সালের শেষ দিকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরের দফায় তিনি টেস্ট
ও টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব পান ২০১৮ সালে। এবার ২০১৯ সালের অক্টোবরে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায়
শেষ হয় তার পথচলা।
এখন
তার বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেছে। তবে এই অলরাউন্ডার এখনও লম্বা সময় নেতৃত্ব দিতে পারবেন বলেই
বিশ্বাস খালেদ মাহমুদের। দায়িত্ব দেখছেন তিনি অন্য সিনিয়র ক্রিকেটারদেরও।
“ফিটনেস,
ইনজুরি, অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। তবে সাকিব তো এখন অনেক অভিজ্ঞ। টেস্ট ম্যাচ সে
উপভোগ করছে। এই দুটি টেস্ট ম্যাচে সাকিব যে পরিমাণ বল করেছে, কবে সাকিব টানা এত বল
করেছে, মনেও নাই আমার।”
“এখনও
এত বয়স হয়নি সাকিবের। আরও দুই-তিন বছর খেলবে অন্তত। যতদিন খেলবে, আমি মনে করি, ওদের
উচিত বাংলাদেশের জন্য কিছু করা, বাংলাদেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। ওরা অনেক কিছু
করেছে বাংলাদেশের জন্য, পুরো বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছে। অনেকে বলে ‘ওয়ান্ডার
বয়’, এখন ও এবং সিনিয়র ক্রিকেটার যারা আছে, মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহদের দায়িত্ব
বাংলাদেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।”
গত
বিপিএলে ফরচুন বরিশালের কোচ চিলেন খালেদ মাহমুদ, অধিনায়ক সাকিব। ক্যারিয়ারজুড়েই নানা
সময়ে সাকিবকে তিনি দেখেছেন কাছ থেকে। সাকিবের গভীর ক্রিকেট বোধ ও তার ব্যক্তিত্বের
ধরন মিলিয়ে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তিনি দারুণ কার্যকর হবেন বলেই ধারণা খালেদ মাহমুদের।
“সাকিবের
ক্রিকেট জ্ঞান তো অসাধারণ। ওর সঙ্গে কথা বলে আরাম পাওয়া যায়। অনেক ধারণা রাখে, ক্রিকেট
নিয়ে ওর চিন্তা-চেতনা অন্যরকম। যদিও অনেক সময় নিজের মতো থাকে, আমরা জানি। তবে ও যে
রকম চরিত্র, যেরকমভাবে মিশতে পারে সবার সঙ্গে…আগেও দুই দফায় অধিনায়ক ছিল, তবে তখন তো
অনেক ছোট ছিল। এখন যদি পায়, গোটা দলের আবহ বদলে দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
নেতৃত্ব
থেকে ‘মুক্তি’ চাওয়া বর্তমান অধিনায়কও বাহবা পেলেন খালেদ মাহমুদের। বাংলাদেশের সাবেক
অধিনায়কের আশা, ভারমুক্ত হলে আবার রানের জোয়ার বইবে মুমিনুলের ব্যাটে।
“মুমিনুল
তো আগে পারফর্মার। নেতৃত্বে চেষ্টা করেছে সবটা দিয়ে। এটা করতে করতে হয়তো ওর খেলায় প্রভাব
পড়েছে। আমারও একসময় অধিনায়কত্ব করতে করতে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়েছিল। একদিক থেকে
আমি বলব, মুমিনুল বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্যারিয়ারে এখনও অনেক দূর যাওয়ার আছে ওর।
ওর ব্যাটিংটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য জরুরি। আশা করি, ও আরও অনেক রান করবে, সামনের
সময়ে অনেক সেঞ্চুরি করবে বাংলাদেশের জন্য।”