সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ক্রিপ্টো মুদ্রা
বাজারের অস্থিতিশীলতা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ পৌঁছালেও, রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, বয়সে
তরুণদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজারে অংশ নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের বয়োজ্যেষ্ঠরা।
ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ ‘কুকয়েন’-এর এক জরিপে
উঠে এসেছে, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে ২৭ শতাংশ আমেরিকান নাগরিক (প্রায় পাঁচ কোটি)
গেল ছয় মাসে ক্রিপ্টো মুদ্রার লেনদেনে অংশ নিয়েছেন।
মার্চ মাসের ওই জরিপের তথ্য বলছে, ৫০
বা তার বেশি বয়সের ২৮ শতাংশ নাগরিক আগেভাগেই অবসরে যাওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ক্রিপ্টো
মুদ্রায় বিনিয়োগ করছেন।
এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, বয়োজ্যেষ্ঠদের
ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগের আগ্রহের কারণ, এ প্রযুক্তিকে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখছেন
তারা। বাজারে চলতি ‘ট্রেন্ড’ থেকে বাদ পড়তে চাননি বয়োজ্যেষ্ঠ্যরা; বরং, নিজস্ব বিনিয়োগের
পোর্টফোলিও বহুমুখী করার উপায় হিসেবে দেখছেন একে।
২০২২ সালের শুরুর দিকে জোর আলাপ চলছিল
বিটকয়েনসহ অন্যান্য ক্রিপ্টো মুদ্রাগুলোকে মূল ধারার আর্থিক ব্যবস্থা ও পেনশন পরিকল্পনায়
সমন্বয়ের সম্ভাব্যতা নিয়ে। তবে, গেল কয়েক সপ্তাহে ক্রিপ্টো বাজারের অস্থিরতায় অনেকটাই
চাপা পড়ে গেছে সেই আলাপ-আলোচনা।
এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান
নিউবার্গার বারম্যানের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা এরিক নুটজেন রয়টার্সকে বলেন, “বিনিয়োগকারীরা
যদি ক্রিপ্টো চায়, তবে সেটা তাদের পোর্টফোলিওর ছোট একটি অংশ হওয়া উচিত এবং তাদের সেই
বিনিয়োগ হারানোর মানসিক প্রস্তুতিও থাকা উচিত।”
“আমরা সবাইকে এই বিনিয়োগের পরামর্শও
দেবো না,” যোগ করেন তিনি।
গত বছরের নভেম্বর মাসে সর্বোচ্চ মূল্যের
রেকর্ড গড়েছিল বিটকয়েন। ৬৯ হাজার ডলার ছুঁয়েছিল প্রতিটি বিটকয়েনের দাম। কয়েক মাসের
ব্যবধানে সেই দাম নেমে এসেছে ৩০ হাজার ডলারে। বাজারে ধস নামায় নতুন বিনিয়োগকারীদের
অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে আশঙ্কা করছে রয়টার্স।
বিনিয়োগকারী আর বাজার বিশ্লেষকরা এখন
কাছ থেকে নজর রাখছেন বিটকয়েনের বাজারের ওপর। দাম আবারও আগের মতো ঊর্ধ্বমুখী হয় কি না,
পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
কুকয়েনের জরিপের ঠিক এক সপ্তাহ আগেই
১১ হাজার নাগরিকের অংশগ্রহণে এক জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মার্কিন কর্তৃপক্ষ
বলেছিল, দেশটির নাগরিকদের ১২ শতাংশ গত বছরে ক্রিপ্টো বিনিয়োগে অংশ নিয়েছেন।
ওই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বয়সভেদে শ্রেণিভুক্ত
করা না হলেও, ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্তত অর্ধেকের বার্ষিক আয় এক লাখ ডলার
বা তার বেশি। জরিপে অংশগ্রহণকারী এক-তৃতীয়াংশের বার্ষিক আয় ছিল ৫০ হাজার ডলার বা তার
কম।
ক্রিপ্টো খাতে বয়োজ্যেষ্ঠদের আগ্রহ নিয়ে
প্রশ্ন তোলার সুযোগ না থাকলেও, অবসর তহবিলের জন্য ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজার আদৌ নির্ভরযোগ্য
কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজার এতোটাই অস্থিতিশীল
আর অনিশ্চিত যে বাজার বিশ্লেষক আর বিশেষজ্ঞরা অবসর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই খাতে বিনিয়োগ
না করার পরামর্শই দিচ্ছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
তবে, বিনিয়োগকারী যদি অভিজ্ঞ হন, এবং
বড় আর্থিক ক্ষতির মুখেও অবিচল থাকতে পারেন; তবে ক্রিপ্টো খাতে বয়োজ্যেষ্ঠদের অংশগ্রহণও
প্রশ্নের বাইরে নয়।