বুধবার চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নারগিস আক্তার এক যুগ আগের এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত দুই আসামি ফারজানা লতিফ সাকি (৩৫) ও ইফতেখার লতিফ সাদি (৩৩) রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সাজা ঘোষণার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘটনার সময় ভিকটিম মুমতাহা কারিনার বয়স ছিল ১৯ বছর, আর তার ছোট বোন সালনাবিল তাসনিমের বয়স ছিল ১৬ বছর। আসামিরা তাদের আপন খালাতো বোন ও ভাই।
আদালতের অতিরিক্ত পিপি তসলিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত দুই আসামিকেই ২০০২ সালের অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫(ক) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
এছাড়া ৫(খ) ধারায় তাদের ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুই ধারার সাজা একযোগে কার্যকর হবে বলে তাদের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন সাজাই প্রযোজ্য হবে।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি সাকিকে ৫০ হাজার টাকা এবং সাদিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক।
আসামিদের আইনজীবী শম্ভু প্রসাদ বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, “এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। ২২-২৩ বছরের একজন মেয়ে নিজের খালাতো বোনদের অ্যাসিড মারবে আবার পরে নিজের মুখে অ্যাসিড মাখবে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। যারা সাক্ষী দিয়েছেন কারা কেউ প্রত্যক্ষদর্শী নন। আশা করি উচ্চ আদালতে কাঙ্ক্ষিত বিচার পাব।”
মামলার বিবরণে জানা যায়, সাকিদের বাসা চট্টগ্রাম নগরীর বাদুরতলায়। ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি শহরের জয়নগরে খালার বাসায় বেড়াতে যান। ১০ অক্টোবর তার খালাতো বোন কারিনার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছিল। সেজন্য আত্মীয়দের দাওয়াত দিতে ১ অক্টোবর সকালে কারিনার বাবা আনোয়ারুল কবির ও মাম আনার কলি চকরিয়ায় গ্রামের বাড়িতে যান।
কারিনার মা আনার কলি বিডিনিউজ টৌয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার মেয়ে সাকির ছোট। তার বিয়ে কেন আগে ঠিক হয়েছে, তা নিয়ে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার দুই মেয়েকে অ্যাসিড মেরে ঝলসে দেয় সাকি। ওর কথায় ওর ভাই সাদি ওই অ্যাসিড এনে দিয়েছিল।”
কারিনা ও তাসনিমের বাবা আনোয়ারুল কবীর ওই ঘটনায় মামলা করেন। সেখানে বলা হয়, ২ অক্টোবর ভোরে ঘুমন্ত দুই খালাতো বোন কারিনা ও তাসনিমের মুখে অ্যাসিড ছোড়ার পর বাথরুমে গিয়ে সাকি নিজের মুখেও অ্যাসিড মাখেন, যাতে অন্য কেউ হামলা করেছে বলে সাজানো যায়। আগের রাতে কারিনা ও তাসনিমের সাথে একই ঘরে ঘুমিয়েছিলেন তিনি।
মামলা হওয়ার পর তখনকার কলেজ ছাত্রী সাকি ও তার ভাই সাদিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাদের বিচার শুরু হয়।
বাদীপক্ষে ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের জবানবন্দি শুনে বুধবার দুই ভাইবোনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিল আদালত।