ভক্ত-শ্রোতাদের কাছে কে কে নামে পরিচিত ছিলেন ৫৪ বছর বয়সী এই শিল্পী। তার এমন মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত পুরো ভারতের সংগীত ও চলচ্চিত্র অঙ্গন।
এনডিটিভি জানিয়েছে, কে কের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর নজরুল মঞ্চের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঝটপট মঞ্চ ত্যাগ করেছিলেন এই শিল্পী। সেসময় তাকে অসুস্থ দেখাচ্ছিল। বুকে ব্যথা অনুভব করায় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল তাকে, পথেই তার মৃত্যু হয়।
কে কের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। ওই ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা করেছে কলকাতার পুলিশ। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, তার মৃত্যু নিয়ে অনুষ্ঠান স্থল নজরুল মঞ্চের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের ভাষ্য, সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কাজ করছিল না। ভেতরে ছিল অসহনীয় গরম।
কলকাতায় নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে কে কে।
আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, নানা রকমের আলোর ঝলকানি ছিল নজরুল মঞ্চে। সেখানে গান গাইতে উঠে কে কে বার বার রুমালে মুখ-কপাল ও মাথা রুমাল দিয়ে মুছছিলেন। একাধিক বার বোতল থেকে পানিও পান করেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, মুখের ঘাম মোছার জন্য কে কে বিরতিও নেন। সেসময় দর্শক সারি থেকে বলতে শোনা যায়, ‘বহুত জিয়াদা গরম হ্যায়’।
এক পর্যায়ে কে কে একজনের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন, যা দেখে মনে হয়, তিনি সম্ভবত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কথা বলছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার মৃত্যু ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে। নজরুল মঞ্চের বদ্ধ অডিটরিয়াম কনসার্টের সময় ছিল ভিড়ে ঠাসা। টুইটারে একজন লিখেছেন, “কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে কিংবদন্তীকে চলে যেতে হয়েছে।”
কলকাতায় কনসার্টের পর অসুস্থ, চলে গেলেন গায়ক কে কে
নজরুল মঞ্চের ধারণক্ষমতা প্রায় ২ হাজার ৪০০। কিন্তু একটি কলেজের আয়োজনে ওই কনসার্টে প্রায় ৭ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা পোস্টে দাবি করা হচ্ছে।
ভিডিওতে একটি সিঁড়িতে একদল ছাত্রকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র হাতে দেখা যায়। অনেকেই সেই ভিডিও শেয়ার করে আয়োজকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
৫৪ বছর বয়সী এই গায়ক অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কলকাতায় নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে কে কে।
কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ বা কে কে ‘পাল’ এবং ‘ইয়ারন’ এর মত গানের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৯০ এর দশকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এ গানগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। প্রায়ই স্কুল ও কলেজের বিদায় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শোনা যায় এসব গান।
জীবদ্দশায় কে কে তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দ্য মেসমেরাইজার-এ বলেছেন, “একজন শিল্পী যখন মঞ্চে থাকে, তখন একটি নির্দিষ্ট শক্তি থাকে। কারও অবস্থা যাই হোক না কেন, একবার মঞ্চে উঠলে আমি সবকিছু ভুলে যাই এবং কেবল গেয়ে যাই।”
হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগুসহ নানা ভাষায় গাইতেন তিনি। ১৯৯৯ সালে তার গানের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ হলেও তার আগেই বলিউড সিনেমায় গেয়ে নাম কুড়ান তিনি।
তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- হাম দিল দে চুকে সনমের ‘তাড়াপ তাড়াপ, দেবদাসের ‘ডোলা রে’, ও লামহে সিনেমার ‘ক্যায়া মুঝে প্যায়ার হ্যায়’, ওম শান্তি ওম সিনেমার ‘আঁখোমে মে তেরি’, বাঁচনা এক হাসিনো সিনেমার ‘খুদা জানে’, আশিকী-২ সিনেমার ‘পিয়া আযে না’ ইত্যাদি। গানের জন্য পাঁচ বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন তিনি।