আর এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হল সঠিকভাবে ঘুমানো।
ঘুম হল শরীরের ক্ষয়পূরণের সময়। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে পরের দিন আবার জীবন যুদ্ধে নামার জন্য শরীর প্রস্তুত হয় ওই ঘুমের সময়। তবে রাতে ভালো ঘুম হওয়ার পরও পরদিন শরীরে ব্যথা ও অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভাঙতে পারে।
ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া কিংবা যে অবস্থানে ঘুমিয়েছেন তার কারণে এই ব্যথা হয়।
অ্যারিজোনা’র ‘ভ্যালি স্লিপ সেন্টার’য়ের সভাপতি ও ‘ক্লিনিকাল স্লিপ এডুকেটর’ লরি লেডলি রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “ঘুমের মধ্যে ঘাড় ব্যথার মতো সাধারণ সমস্যা যেমন হতে পারে তেমনি ‘স্পাইনাল কম্প্রেশন’য়ের মতো মারাত্মক আঘাতও পাওয়া সম্ভব।”
ঘাড় ঘুরাতে না পারা, কাঁধ ব্যথা, পিঠ ব্যথা ইত্যাদি বেকায়দায় ঘুমানোর কারণে হওয়া সাধারণ সমস্যা।
তবে মেরুদণ্ডের ‘ডিস্ক’য়ের সমস্যা, বুকের খাঁচার হাড় সরে যাওয়া ইত্যাদি মারাত্মক জটিল সমস্যাও হতে দেখা যায়।
যেভাবে ঘুমালে ব্যথা হয়
ঘুমের মধ্যে শরীরের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তবে আঘাত যাতে না লাগে তার প্রতিরোধক ব্যবস্থা অবশ্যই আছে। যেমন- কিছু কায়দায় ঘুমানো এড়িয়ে চলতে হবে, বাদ দিতে হবে কিছু বেমানান বালিশ।
লেডলি বলেন, “মাথার ওপর হাত থেকে কিংবা কাঁধের ভরে লম্বা সময় শুয়ে থাকলে ব্যথা হবে। যদি এমন কোনো বালিশে মাথা রেখে ঘুমান যা ঘাড়কে বেকায়দায় রাখে তাহলে পরদিন ঘাড় ঘুরাতে পারবেন না কিংবা প্রচণ্ড ব্যথা হবে। আবার শোয়ার সময় পা যদি কোনো কারণে ওপরের দিকে উঠে থাকে তাহলে ঘুমাতে যেমন সমস্যা হবে তেমনি শারীরিক ব্যথাও দেখা দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “ঘুমানোর আরেকটি বাজে কায়দা হলো পেটের ভরে শোয়া। এর ফলে পিঠ আর ঘাড় দুটোর ওপরেই চাপ পড়ে। আর এভাবে ঘুমিয়ে পরলে ঘুমের মধ্যেই এপাশ ওপাশ করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়, ফলে ঘুম নির্ভেজাল হয় না।”
হাঁটু ভাঁজ করে বুকের কাছে এনে এবং একহাত শরীরের নিচে চেপে রেখে শোয়ার কায়দাকে বলে ‘ফিটল পজিশন’।
মায়ের পেটে নবজাতক এই কায়দায় থাকে বলেই এমন নাম।
লেডলি বলেন, “তবে এই কায়দায় ঘুমানোও বিপজ্জনক। কারণ এই অবস্থায় মেরুদণ্ড অত্যন্ত বাঁকা হয়ে থাকে ফলে ঘাড় ও পিঠে টান পড়ে থাকে। আবার শ্বাস নিতেও কষ্ট হবে এভাবে ঘুমালে।”
ঘুমানোর নিরাপদ কায়দা
লেডলি বলেন, “পিঠের ভরে ঘুমানো সবচাইতে নিরাপদ। ঘুমের মধ্যে অবস্থান কী হয় তার ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও অন্তত এই কায়দায় শুয়েই ঘুমানোর চেষ্টা করা উচিত।”
দুই হাত রাখা থাকবে দুই পাশে। এই কায়দায় শোয়া হলে শরীরের কোনো অংশে টান পড়ে থাকে না, ফলে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কম। আবার পিঠের ভরে ঘুমালে ঘাড় উঁচু হয়ে থাকে ফলে ঘাড়, কাঁধ ও পিঠে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
এই ঘুম বিশারদ আরও পরামর্শ দেন, “একপাশে কাত হয়ে ঘুমানও নিরাপদ, তবে এড়িয়ে চলতে হবে ‘ফিটল পজিশন’। কাত হয়ে ঘুমালে মেরুদণ্ডের ওপর কোনো চাপ থাকে না। ফলে ঘাড়, কাঁধ ও পিঠে আঘাত পাওয়া আশঙ্কা কমে।”
ঘুমের মধ্যে যদি হাত মাথার ওপর উঠে যেতে দেখেন তবে হাতটা গায়ের চাদরে আটকে রাখতে পারেন। কোলবালিশ ব্যবহার উপকারী, এতে হাঁটু ওপরে উঠে থাকে ফলে চাপ পড়ে না। আর বিছানা খুব নরম হওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন
হাঁটার সময় পিঠ ও কোমরে ব্যথা হওয়ার কারণ