বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ক্ষণ গণনা শুরুর পর বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “সেখানে আমরা কেন দুর্নীতি করতে যাব। আর আমাদের দুর্নীতি করার প্রশ্নই উঠে না। অথচ সেই অপবাদটা আমাদের উপর দিতে চেয়েছিল।
“আমি মনে করি, সততার একটা শক্তি থাকে। কাজেই সেই সততার শক্তি ছিল বলেই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছিলাম। দেশের মানুষের অফুরন্ত সহযোগিতা পেয়েছি আমি। আর যার ফলে আজকে পদ্মা সেতু আমরা করতে পেরেছি।”
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাওয়া পদ্মা সেতুর কাজ এক দশক আগে শুরুর সময় এই প্রকল্পে যুক্ত ছিল বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থা।
তখন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। টানাপড়েনের এক পর্যায়ে তাদের বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা।
সেই কাজ শেষ করে এমাসেই ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সেতুতে গাড়ি উঠতে যাচ্ছে, রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চল।
শেখ হাসিনা সেই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “সেখানে দুর্নীতির বিষয়ে যখন প্রশ্ন তোলে, আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কাজেই এটা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডা কোর্ট সেটা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে তাদের সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা-ভুয়া।
“আমি বলেছিলাম, আমরা নিজেদের অর্থে করব। আমরা কিন্তু সেটা করেছি। আল্লাহর রহমতে আজকে পহেলা জুন, পঁচিশে জুন আমরা আমাদের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করব। আশা করি, সব কিছু ভালোভাবে হবে।”
সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “আমি নিয়েছিলাম এই কারণে যে বাংলাদেশের সম্পর্কে কেউ কোনো বিরূপ কথা বললে, এটা আমার নিজেরই কষ্ট লাগে। কারণ এদেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন।
“এই একটা সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ যে কারও উপর নির্ভরশীল না বা কোন একটা প্রতিষ্ঠানের প্রতি যে একেবারেই নির্ভরশীল না, সেটা প্রমাণ করেছি। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি।”
পদ্মা নদীর বুকে নির্মিত দেশের দীর্ঘতম এই সেতুর নাম নদীর নামেই হচ্ছে। উদ্বোধন হবে আগামী ২৫ জুন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাড়িয়েছে আত্মবিশ্বাসও: প্রধানমন্ত্রী
তখন এক ধরনের মানসিক চাপ মোকাবেলার কথাও বলেন তিনি।
“সেই সময় একটা প্রচণ্ড মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে হয়, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠে এবং বাংলাদেশের কিছু লোক নানা ধরনের কথা বলেছিল।”
এই পর্যায়ে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, “ঘরের শত্রু বিভীষণই হয়।
“আপনারা জানেন যে ড.ইউনূস, সে ই এই কাণ্ডটা ঘটিয়েছিল, তার গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদটার জন্য। কারণ সে এমডি পদটা হারিয়েছে তার বয়সের কারণে।”
এনিয়ে আইনি লড়াইয়ের ইউনূসের হারের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সে হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে অর্থাৎ আমেরিকার সরকারকে দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করে আমাদের পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করে দিতে।”
সব মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে তিনি বলেন, “আজকে অন্তত এইটুকু বলতে পারি যে বাংলাদেশটা কিন্তু বদলে গেছে। বাংলাদেশ বললে আগে যেখানে বলত- ওহ! ঝড়, বন্যা, দুর্ভিক্ষ। এখন আর তা নেই।
“মঙ্গা নেই। মানুষের খাবারের নিশ্চয়তা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি, আজকে পুষ্টির নিশ্চয়তা দিচ্ছি, চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিয়েছি, শিক্ষার হার বৃদ্ধি করেছি, মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করেছি, একটা মানুষের যে মৌলিক চাহিদা, জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানে যা বর্ণিত আছে, আমরা তা একে একে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”