ক্যাটাগরি

সোয়া ৪ ঘণ্টার লড়াইয়ে জোকোভিচকে হারালেন নাদাল

প্যারিসে বাংলাদেশ সময় মাঝরাতে শুরু হয় দুই বিশ্বসেরার লড়াই। চার ঘণ্টা ১২ মিনিটের কোয়ার্টার-ফাইনাল চলে ভোর পর্যন্ত। পঞ্চম সেটে নেওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি জোকোভিচ। বলা ভালো, তাকে পারতে দেননি নাদাল।

৬-২, ৪-৬, ৬-২, ৭-৬ (৭-৪) গেমে জিতে ফরাসি ওপেনের সেমি-ফাইনালে পা রাখলেন নাদাল। যে আঙিনায় এর আগে ১৩ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, প্রথম তিন সেটের প্রতিটির প্রথম গেম হারেন জোকোভিচ এবং প্রতিবার সার্ভিস ছিল তারই!

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নাদালের ফিটনেস নিয়ে ছিল প্রশ্ন। দুদিন আগে চতুর্থ রাউন্ডে তরুণ খেলোয়াড় ফেলিক্স ওজি-আলিয়াসসিমের বিপক্ষে পাঁচ সেটের ঘাম ঝরানো লড়াইয়ের পর নিজেও নতুন করে পুরনো শঙ্কাটাকে জাগিয়ে তুলে বলেন, “আমি আমার অবস্থা বুঝতে পারছি।”

তবে কোর্টে নামতেই সব আশঙ্কা উড়িয়ে দেন। ভয়ানক ফোরহ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ড, দারুণ সব ড্রপ শটে আলো ছড়ান নাদাল। তার সামনে জোকোভিচ অনেকটা সময় ধুকেছেন বটে, তবে কঠিন চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ঠিকই।

সময়ের সেরা দুই তারকার লড়াই কতটা জমজমাট হতে পারে, তার ইঙ্গিত মেলে শুরুতেই। ম্যাচের প্রথম গেম চলে ১০ মিনিট ধরে এবং সার্ভিস ব্রেক করে এগিয়ে যান নাদাল। তৃতীয় গেমে দারুণ কয়েকটি শটে চেনা ছন্দ খুঁজে পাওয়ার আভাস দেন জোকোভিচ; কিন্তু টিকতে পারেননি। পঞ্চম সেটে আবারও সার্ভিস ব্রেক করে নাদাল সহজেই জিতে নেন সেট।

দ্বিতীয় সেটে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর তারকার শুরুটা ছিল আরও খারাপ। ১৩ মিনিট স্থায়ী প্রথম গেম জেতা নাদাল তৃতীয় গেমেও সার্ভিস ব্রেক করে ৩-০ তে চালকের আসনে উঠে বসেন। তবে এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র তো নন জোকোভিচ।

কোণঠাসা হয়ে পড়ার পর তিনি ঘুরে দাঁড়ান দুর্দান্তভাবে। নাদালের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সেট চলে ৮৮ মিনিট পর্যন্ত; ষষ্ঠ ও দশম গেমে সার্ভিস ব্রেক করে ১-১ সেটে সমতা টানেন জোকোভিচ।

গত আসরের সেমি-ফাইনালে প্রথম সেটে দাপুটে জয়ের পর পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন নাদাল। পরের তিন সেটে হেরে ছিটকে যান শিরোপা লড়াই থেকে। এবারও জোকোভিচের ঘুরে দাঁড়ানোয় নাদালকে ঘিরে সেই শঙ্কা জেগেছিল। তবে এ দিনের নাদাল ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তৃতীয় সেটে বলা যায় জোকোভিচকে দাঁড়াতেই দেননি তিনি।

খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে চতুর্থ সেটে ঘুরে দাঁড়াতেই হতো জোকোভিচের। প্রথম তিন সেটের প্রতিটিতে প্রথম গেম হারার অবশেষে এবার হার এড়াতে পারেন তিনি। প্রতিপক্ষের একবার সার্ভিস ব্রেক করে ম্যাচ পঞ্চম সেটে নেওয়ার সম্ভাবনাও জাগান।

তবে নবম গেমে নাদালের পাল্টা আঘাত এবং বাকিটা কেবলই নাদালময়। এরপরও জোকোভিচ পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, কিন্তু ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নকে আটকানোর জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

এই নিয়ে ৫৯তম বারের মতো মুখোমুখি হলেন জোকোভিচ ও নাদাল। ৩০ বার জিতে একটু এগিয়ে জোকোভিচ, নাদালের জয় ২৯টি।

দুজনেরই বয়স ৩৫, তবে তাদের পারফরম্যান্সে নেই তার ছাপ। তাই তারা যে আরও অনেকটা পথ এগোবেন, সেই আশা করাই যায়।

ম্যাচের আগে নাদাল এখানে ইতি টানার যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এমন জয়ের পর সেখানেও হয়তো নতুন করে ভাববেন তিনি।

বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে পুরুষ এককে রেকর্ড ২১টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড গড়েন নাদাল। সংখ্যাটাকে এবার বাড়িয়ে নেওয়ার পালা। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সেমি-ফাইনালে তিনি খেলবেন আলেক্সান্ডার জেভেরেভের বিপক্ষে, আগামী শুক্রবার।