বুধবার দিল্লিতে ভারতের রেলওয়ে বোর্ডের সম্মেলন কক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিউ জলপাইগুড়ি জংশনে মিতালী এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রার আনুষ্ঠানিকতা সারেন ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
তারা দিল্লি থেকে পতাকা নেড়ে সংকেত দিলে হুইসেল বাজিয়ে চলতে শুরু করে ট্রেন। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে চালু হওয়া তৃতীয় যাত্রীবাহী ট্রেন এটি।
মিতালী এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরুর এই মুহূর্তকে দুই দেশের রেল সহযোগিতার ইতিহাসে একটি ‘মাইলফলক’ হিসাবে বর্ণনা করেন ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
ব্রিটিশ আমল থেকেই চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দার্জিলিং থেকে খুলনা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত এ রেলপথে নিয়মিত চলাচল করত একাধিক যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন। ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ব্রিটিশদের ঐতিহ্যবাহী দার্জিলিং মেইলের ’ঝক ঝক ঝক’ পথচলাও এই রুটে দেখেছে দুই বাংলার মানুষ।
& Towards shared heritage, shared present and shared future!
Flagged off “Mitali Express” between New Jalpaiguri (India) and Dhaka (Bangladesh) with His Excellency Md Nurul Islam Sujan. pic.twitter.com/CYlVK0Jzva
— Ashwini Vaishnaw (@AshwiniVaishnaw) June 1, 2022
৫৫ বছর পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চুয়াল দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে এই রেলপথ উদ্বোধন করেছিলেন। এর সাড়ে সাত মাস পর গেল ১ অগাস্ট শুরু হয় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল।
এর মধ্যে ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে তৃতীয় ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা পেরিয়ে ১৪ মাসের মাথায় তা চালু হল।
মিতালী এক্সপ্রেসের পতাকা ওড়ানোর অনুষ্ঠানে ভারতের রেলমন্ত্রী বলেন, একীভূত ঐতিহ্য, একীভূত বর্তমান ও একীভূত ভবিষ্যতের উপর গড়ে উঠেছে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক। সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন- সব পর্যায়ে দুদেশের সম্পর্ক বর্তমানে বেশ বেগবান।
”এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে এবং এই বন্ধনকে আরও জোরালো করার ক্ষেত্রে মিতালী এক্সপ্রেস গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের ভূমিকা রাখবে।”
ভারতীয় রেলমন্ত্রী বলেন, দুদেশের রেলওয়ের মধ্যে বহু প্রকল্প চলমান আছে। আমরা বাংলাদেশ রেলওয়ের অভিজ্ঞতা থেকেও শিখছি এবং আমাদের ক্ষুদ্র পর্যায় থেকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করছি।”
রেলে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের সংখ্যা গত কয়েক বছরে বাড়ার কথা তুলে ধরে অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, কয়েক বছর আগেও মাত্র ৭০০ মালবাহী ট্রেন চলত। এই সংখ্যা এখন ১ হাজার ৬০০টির মত।
পুরো রেলপথ ব্রডগেজ করা, রেলের বিদ্যুতায়নসহ বাংলাদেশের রেলকেন্দ্রিক বিভিন্ন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে ভারতীয় মন্ত্রী বলেন, “আমাদের রেলওয়ের মধ্যে সম্পর্ক ভবিষ্যতে তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল বয়ে আনবে বলে আশা রাখছি।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের অক্ষরে লেখা। বর্তমানে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক বেশি গভীর হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর যে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে রেলওয়ে তালিকার শুরুতেই ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, রেললাইন, রেলব্রিজ ও রেলের বিভিন্ন কারখানা সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
”ভারতের সহযোগিতায় সেসময় আমরা রেলব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের রেলকে অবজ্ঞা করেছে।”
মিতালী এক্সপ্রেস সপ্তাহে দুদিনের পরিবর্তে তিন দিন করা যায় কি-না, সেটি ভেবে দেখার পরামর্শ অনুষ্ঠানে দেন সুজন।
সরকার একক লাইন থেকে পুরো রেলওয়েকে ডাবল লাইনে রূপান্তরের কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে রেলখাতে ভারতের জোরালো সহযোগিতা চান তিনি।
রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, “ভারত তার রেলব্যবস্থাকে যেভাবে গড়ে তুলেছে, আমি বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছি, তাদের নিজেদের সামর্থ্য, প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে গড়ে তুলেছে, তাতে আমি অভিভূত।
”ভারতের রেলব্যবস্থা তাদের যে অভিজ্ঞতা, তা যদি বাংলাদেশের রেলওয়ের জন্য কাজে লাগাতে পারি, আমরা উভয়ে উপকৃত হতে পারব।”
ভারতের পাশাপাশি প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের সাথেও রেল যোগাযোগ তৈরিতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদের মধ্যে ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান মিতালী এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মিতালী
এক্সপ্রেসের সময়সূচি
নিউ প্রতি |
প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার ঢাকা |
||
নিউ জলপাইগুড়ি ছাড়বে |
বেলা ১১:৪৫ আইএসটি |
ঢাকায় পৌঁছাবে |
রাত ১০:৩০ বিডিএসটি |
ঢাকা ছাড়বে |
রাত ৯:৫০ বিডিএসটি |
নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে |
সকাল ৭:১৫ আইএসটি |
আইএসটি: ভারতের সময়, বিডিএসটি: বাংলাদেশ সময় |
মিতালী
এক্সপ্রেসের ভাড়া
শ্রেণি |
মোট ভাড়া* (ডলারে) |
মোট |
এসি বার্থ |
৪৪ |
৫২৫৫ |
এসি সিট |
৩৩ |
৩৪২০ |
এসি চেয়ার |
২২ |
২৭৮০ |
*
১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ক্ষেত্র বিশেষে
ট্র্যাভেল ট্যাক্স ও বেডিং ভাড়াসহ।