ফাইল ছবি
তাদের দুধ, দই, ঘি, মাখন, লাবাংয়ের দাম এবার ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতির এই সময়ে সরকারি এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটির পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভোক্তারা।
মিল্ক ভিটার কর্মকর্তারা বলছেন, গোখাদ্য, প্যাকেজিং ও পরিবহনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়াতে হয়েছে।
বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ভিটা) দেশে শীর্ষ দুগ্ধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান।
কোভিড মহামারীর মধ্যে গত বছরের মার্চ মাসেও সব পণ্যের দাম বাড়িয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। সে হিসাবে দুই বছরে দাম ৩০ শতাংশ বাড়ালো তারা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি এক লিটার প্যাকেটের মিল্ক ভিটা দুধ ৭ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, আধা লিটার ৫ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা, ২০০ গ্রামের মাঠা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ২৫০ গ্রাম ওজনের লাবাং ৩১ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা এবং ৫০০ গ্রাম ওজনের লাবাং ৭ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিল্ক ভিটার এক কেজি মিষ্টি দইয়ের দাম হয়েছে ২১০ টাকা, আগে বিক্রি হত ১৯০ টাকায়। এক কেজি টক দইয়ের দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৭৫ টাকা।
এছাড়াও ২০০ গ্রাম ওজনের ঘি ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৩২০ টাকায়, ৪০০ গ্রাম ওজনের ঘি ৭০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৬০০ টাকা এবং ৯০০ গ্রাম ওজনের ঘি ১২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩২০ টাকায়।
এছাড়া মিল্ক ভিটার তৈরি সব ধরনের আইসক্রিমের দামও অন্তত ৯ শতাংশ বেড়েছে।
বুধবার থেকে নতুন দর কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ।
বর্ধিত দাম দেখে ক্ষোভ জানিয়েছেন ঢাকার মিরপুরের রূপনগরের সোনার বাংলা মার্কেটের মোহাম্মদিয়া স্টোরে বৃহস্পতিবার বাজার করতে আসা গৃহিনী উম্মে হাবিবা
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি করতাম। মহামারীর শুরুতেই আমি ও আমার স্বামী চাকরি হারাই। কিন্তু বাচ্চার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ঢাকা ছাড়িনি। প্রায় এক বছর পর স্বামী আবার চাকরিতে যোগদান করলেও আমি আর চাকরি পাইনি। এখন নানা রকম দায়-দেনায় পড়ে অনেক সমস্যায় আছি।
“গত এক বছরে বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। আগে ১ হাজার টাকায় যে সদাই পাওয়া যেত, এখন সেই পণ্য কিনতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ টাকা। এরফলে আমাদের মতো এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও অনেক চাপে পড়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “গত বছরের শুরুতে মিল্ক ভিটার আধা লিটার তরল দুধের দাম ছিল ৩৫ টাকা। বছরের মাঝামাঝি সময় সেটা ৫ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়।
“আজ দুধ কিনতে এসে দেখি আধা লিটার দুধের দাম আবার ৫ টাকা বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করা হয়েছে। এখন ভাবছি দুধ নেব কি না?”
মিল্ক ভিটার পণ্যের দাম বৃদ্ধি দেশের সাধারণ মানুষের পরিপূর্ণ পুষ্টি পাওয়া ব্যাহত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন উম্মে হাবিবা।
সরকারি সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটার দাম বাড়ানোয় অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, বলেন তিনি।
দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মিল্ক ভিটার মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মো. মইনুল হক চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুগ্ধ পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দাম বাড়ানো হয়েছে।
বিশেষ করে, গোখাদ্য, প্যাকেজিং এবং পরিবহন খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
মইনুল বলেন, “এখন গরুর খাদ্যের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আগে এক লিটারের প্লাস্টিক প্যাকেটের দাম পড়ত ২ টাকা ২০ পয়সা, এখন তা কিনতে হচ্ছে ৪ টাকায়। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন খামারিদের যাতায়াতে ২৫ শতাংশ খরচ বাড়ানো হয়েছে।”