বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি এ পরিকল্পনার কথা জানায়।
এদিকে সংসদীয় কমিটি এই জাহাজে হামলার বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিতে একজন মেরিটাইম আইনজীবী নিয়োগ এবং জাহাজটিকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা অবস্থায় গত ২ মার্চ গোলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’, নিহত হন জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান।
৩ মার্চ জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নাবিকদের নামিয়ে একটি শেল্টার হাউজের বাংকারে নেওয়া হয়। হাদিসুরের মরদেহও রাখা হয়েছিল বাংকারের ফ্রিজারে।
উদ্ধার পাওয়ার পর জীবিত ২৮ নাবিক রোমানিয়া হয়ে ৯ মার্চ দেশে পৌঁছান। সবশেষ ১৪ মার্চ হাদিসুরের মরদেহ দেশে পৌঁছায়।
বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ইউক্রেইনে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে জাহাজটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থান করে বিএসসি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়ম অনুসারে জাহাজকে পরিত্যক্ত করে কন্সট্রাক্টিভ টোটাল লস (সিটিএল) কার্যকর করতে হলে স্যালভেজ (উদ্ধার) ও মেরামত খরচ বীমা মূল্যের ৮০ শতাংশের বেশি হতে হয়। বাংলার সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে (বীমা মূল্য ২২ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার) সিটিএল কার্যকর করতে উদ্ধার ও মেরামত খরচ ১৭ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলারের বেশি হতে হবে।
এর কম হলে সেটি আংশিক ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর উদ্ধার ও মেরামত খরচ বীমাকারী (সাধারণ বীমা কর্পোরেশন) থেকে আদায়যোগ্য হবে। সেক্ষেত্রে জাহাজ পরিত্যক্ত না হয়ে উদ্ধার ও মেরামত শেষে বিএসসি’র বহরে যুক্ত হবে।
কমিটির সদস্য সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করার জন্য আমরা জোর দিয়েছি। জাহাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা কিংবা উদ্ধার ও মেরামত যেটা আমাদের জন্য ভালো হবে- তা নির্ণয়ে দক্ষ পরামর্শক নিয়োগের কথা বলেছি। আমাদের জন্য যেটা সব থেকে ভালো হয়, সেই উদ্যোগ নিতে বলেছি। এক্ষেত্রে আমরা কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর জোর দিতে বলেছি।”
বাংলার সমৃদ্ধি, হামলার আগে।
ইউক্রেইনে বাংলাদেশি জাহাজে গোলা, নিহত ১
বাংলার সমৃদ্ধির ইউক্রেইনে যাওয়ার ব্যাখ্যা দিল বিএসসি
‘বাংলার সমৃদ্ধি’র উদ্ধার ও মেরামত খরচ জানতে মেরিন সার্ভে/ কস্ট এস্টিমেটের কাজে পারদর্শী সিঙ্গাপুর ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান একুয়ালিস ব্রেমার এলওসি (এবিএল) নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়ে বিএসসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জাহাজে সরাসরি উপস্থিত হয়ে সার্ভে করে মেরামত খরচ নির্ণয় করা সম্ভব না হওয়ায় জাহাজের বিভিন্ন তথ্য, ড্যামেজের ছবি, ভিডিও ফুটেজ ইত্যাদি পর্যালোচনা করে রিমোট অ্যাসেসমেন্টের (দূরে বসে ক্ষতি নিরূপণ) মাধ্যমে আনুমানিক মেরামত খরচ নির্ণয় করে এবিএল প্রতিবেদন দিয়েছে।
এবিএলের প্রতিবেদনের বরাতে বিএসসি বলছে, জাহাজের আনুমানিক মেরামত খরচ তিন মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং উদ্ধার খরচ শূন্য দশমিক তিন মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার মানে উদ্ধার ও মেরামতের আনুমানিক মোট খরচ তিন দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আনুমানিক এই খরচে ‘আপাতদৃষ্টিতে’ সিটিএল কার্যকর হবে না ধরে জাহাজ উদ্ধার ও মেরামত কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়েছে বিএসসি।
তবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনো উদ্ধারকারী এ মুহূর্তে জাহাজটি উদ্ধার করতে সম্মত হচ্ছে না বলেও জানিয়েছে বিএসসি।
জাহাজটি দীর্ঘদিন ইউক্রেনের ওলিভিয়া বন্দরে পড়ে থাকার কারণে এর বীমা/যুদ্ধঝুঁকি প্রিমিয়াম পরিশোধসহ বিএসসির পরোক্ষ ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলার সমৃদ্ধির দ্রুত উদ্ধার ও মেরামত কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পোল্যান্ড এবং রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস যেভাবে জাহাজের ক্রু উদ্ধার এবং দেশে প্রত্যাবর্তনে সহযোগিতা করেছে, সেইভাবে জাহাজ উদ্ধারকারীর ক্ষেত্রে সহযোগিতা চেয়ে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “কমিটি ইউক্রেইন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের তদন্ত কমিটিতে মন্ত্রণালয়কে দ্রুত একজন মেরিটাইম আইনজীবি নিয়োগ করার সুপারিশ করে। একইসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জাহাজে ক্ষেপনাস্ত্র হামলার শিকার হওয়ার কারণ উদঘাটন করে জাহাজ দ্রুততার সহিত দেশে ফেরাতে বর্তমান করণীয় পদক্ষেপ গ্রহনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করে।”
কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত নিষ্কাশন খালগুলোতে প্রয়োজনীয় ট্র্যাপ নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ, সেই সঙ্গে নদী রক্ষায় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।
কমিটি ঢাকার সন্নিকটে বুড়িগঙ্গা নদী এক বছরের মধ্যে দূষণমুক্ত করার সুপারিশ করে এবং শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করে।
এছাড়া পরিবেশ উন্নয়নে স্কুলে শিশুদের সম্পৃক্ত করে পরিবেশ রক্ষায় তাদের অবদানে পুরস্কৃত করার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পরিবেশ রক্ষায় করণীয় কার্যাবলী কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে কমিটি।
কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান, এম আব্দুল লতিফ, সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল ও এস এম শাহজাদা অংশ নেন।