ক্যাটাগরি

মেটা ছাড়ছেন শেরিল স্যান্ডবার্গ

২ জুলাই এক ফেইসবুক পোস্টে সিওও পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্যান্ডবার্গ। ভবিষ্যতে জনহিতকর কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দেবেন বলে পোস্টে লিখেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন থেকে আয় বৃদ্ধির হার কমছে মেটার, পাশাপাশি টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে কোম্পানিটি। এমন পরিস্থিতিতেই প্রস্থানের ঘোষণা দিলেন তিনি।

প্রযুক্তি শিল্পে সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল নারীদের একজন হিসেবে স্যান্ডবার্গকে বিবেচনা করা হয়। টাইম সাময়িকী একাধিক বছর তাকে বিশ্বের শীর্ষ একশ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় রেখেছে।

নিজের ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আমি ২০০৮ সালে যখন এই চাকরিটা নেই, তখন ভেবেছিলাম এই দায়িত্বে আমি পাঁচ বছর থাকবো। ১৪ বছর পরে সময় হয়েছে আমার জীবনের পরবর্তী অধ্যায় লেখার।”

মার্ক জাকারবার্গের পরে মেটার সবচেয়ে ক্ষমতাবান কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন স্যান্ডবার্গ। স্যান্ডবার্গের অনুপস্থিতিতে মেটার বর্তমান ‘চিফ গ্রোথ অফিসার (সিজিও)’ হাভিয়ের অলিভান সিওও-এর দায়িত্ব নেবেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

স্যান্ডবার্গের প্রস্থানের ঘোষণায় শেয়ার বাজারে মেটা শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

স্যান্ডবার্গ যখন ফেইসবুকে যোগ দেন, তখনও বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক মাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেনি ফেইসবুক। সে সময়ে জাকারবার্গ ছিলেন ২৩ বছর বয়সী হার্ভার্ড ত্যাগী এক প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।

ফেইসবুকে যোগ দেওয়ার আগে দীর্ঘদিন গুগলের হয়ে কাজ করেছেন স্যান্ডবার্গ। তার হাত ধরেই ফেইসবুক তথা মেটার বিজ্ঞাপন ব্যবসা দানবীয় রূপ নেয়।

‘লিন ইন: ওমেন, ওয়ার্ক অ্যান্ড উইল টু লিড’ বইটি লিখে প্রযুক্তি শিল্পের বাইরেও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন স্যান্ডবার্গ।

তবে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি এবং ফেইসবুকে কনটেন্ট মডারেশন প্রশ্নে তার সেই জনপ্রিয়তায় অনেকটাই ভাটা পড়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিবিসি।

সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মটিকে নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের বিষয়টিও নিজের ফেইসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন স্যান্ডবার্গ।

“শুরুর দিনগুলোর তুলনায় সামাজিক মাধ্যমকে ঘিরে বিতর্ক এতোটাই পাল্টে গেছে যে তা আর চেনাই যায় না।”

“সব কিছু সব সময়ে সহজ ছিল না বললে কম বলা হবে। তবে, এটা কঠিন হওয়াই উচিত। আমরা যে পণ্য বানাই তার বিস্তর প্রভাব আছে। তাই পণ্যগুলো গোপনতা বজায় রাখার এবং ব্যবহারকারীকে নিরাপত্তা দেওয়ার উপযোগী করে নির্মাণের দায়িত্ব আমাদেরই।” লিখেছেন স্যান্ডবার্গ।

স্যান্ডবার্গের প্রস্থানকে একটি ‘যুগের সমাপ্তি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জাকারবার্গ। সিওও হিসেবে স্যান্ডবার্গের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের বিবেচনাতেও ‘বিরল’ বলে মন্তব্যে করেছেন মেটার প্রধান নির্বাহী।

“শেরিল আমাদের বিজ্ঞাপন ব্যবসার প্রকৌশলী ছিলেন, সেরা কর্মীদের নিয়োগ দিয়েছেন, আমাদের ব্যবস্থাপনা সংস্কৃতি নির্মাণ করেছেন এবং আমাকে কীভাবে একটি কোম্পানি চালাতে হয় শিখিয়েছেন,” স্যান্ডবার্গের ভূমিকা নিয়ে বলেছেন জাকারবার্গ।

স্যান্ডবার্গের প্রতিষ্ঠানিকে দায়িত্বের সঙ্গে সিওও হিসেবে অলিভানের দায়িত্বে পার্থক্য থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন মেটা প্রধান। সিওও হিসেবে ‘প্রথাগত’ দায়িত্ব পালন করবেন অলিভান, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় এবং পরিচালনা কর্মকাণ্ডেই বেশি নজর দেবেন তিনি।

অন্যদিকে, নানা দিক থেকে চাপের মুখে আছে মেটা। সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতি কঠোর হচ্ছে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলো। অ্যাপল গোপনতা নীতিমালা পরিবর্তন করায় তার প্রভাবও পড়েছে মেটার বিজ্ঞাপনী আয়ে।

কেবল বিজ্ঞাপনী আয় নয়, সেবা গ্রাহকদের সংখ্যা নিয়েও বিপাকে আছে মেটা। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের বাজারে প্ল্যাটফর্মটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার থেমে এসেছে। অন্যদিকে, টিকটকের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছেন তরুণ ব্যবহারকারীরা।

এই দৃশ্যপটে স্যান্ডবার্গের ভূমিকা নিয়ে বাজার বিশ্লেষক ইনসাইডার ইন্টেলিজেন্সের প্রধান বিশ্লেষক ডেব্রা আহো উইলিয়ামসন বলেছেন, স্যান্ডবার্গ “ফেইসবুককে একটি বিশ্ব মানের বিজ্ঞাপনী প্ল্যাটফর্ম নির্মাণে সহযোগিতা করেছিলেন, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি গুগলের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ব্যবসা হিসেবে গড়ে উঠতে পেরেছে।

“কিন্তু, তার অধীনে একাধিক কেলেঙ্কারির মুখেও পড়েছে ফেইসবুক; যার মধ্যে আছে ২০১৬ সালের নির্বাচন, ২০১৮ সালের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি এবং ২০২০ সালের নির্বাচন। ২০২২ সালে এসে মেটার ব্যবসা বৃদ্ধির হার এবং বিজ্ঞাপনী আয় কমছে যা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক ভিত্তিকেই পরীক্ষার মুখে ফেলছে।”

“কোম্পানিটির সামনের এগোনোর জন্য নতুন পথ দরকার এবং সম্ভবত স্যান্ডবার্গের প্রস্থানের জন্য এটাই ছিল সেরা সময়,” যোগ করেন তিনি।