তাই মৌলিক চাহিদা মেটাতে এবং অর্থকষ্ট দূর করতে তহবিল সংগ্রহ করার মতো কাজেও শ্রীলংকার মানুষেরা এখন বেশি বেশি ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম এবং টুইটারের মতো নানা স্যোশাল মিডিয়া প্লাটফর্মের শরণাপন্ন হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার ডেলিভারি রাইডার মাইকেল সাথিস। বাইকে পেট্রোল নেই মানে তার রোজগার বন্ধ। অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি এখন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। প্রেট্রোল পাম্পগুলোতে বেশিরভাগ সময় জ্বালানি থাকে না।
সাথিসকে মাঝে মাঝে জ্বালানি পেতে সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অবস্থা যখন এতটাই খারাপ তখন তার জন্য আশার আলো হয়েছে এসেছে একটি ফেইসবুক গ্রুপ।
সেখানে কোথায় জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে তার নিয়মিত আপডেট দেওয়া হয়। এমনকী পেট্রোলপাম্পের সামনের লাইন কত লম্বা সেটাও জানিয়ে দেয়া হয়। ফলে সাথিসের মত জ্বালানির খোঁজে যাদের দিশেহারা অবস্থা, তারা এই গ্রুপ থেকে বেশ খানিকটা উপকৃত হচ্ছেন।
সাথিস বলেন, ‘‘এই সংকটে জ্বালানি পাওয়া অনেকটা হারিয়ে যাওয়া সুচ খুঁজে পাওয়ার মত…যেটা অনেকটা অসম্ভব। কিন্তু এই গ্রুপটা ঠিক যেন চম্বুক…এদের সাহায্যে এখন আমি অনেক বেশি সময় নষ্ট করা ছাড়াই জ্বালানি খুঁজে বের করতে পারছি।”
২৯ বছরের সাথিস শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোর উপকণ্ঠে বাস করেন।
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। কোভিড মহামারীতে পর্যটন খাত ধসে পড়া, ভবিষ্যৎ না ভেবে সরকারের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর কর্তন, বিশাল অংকের ঋণ নিয়ে উচ্চাভিলাষী নানা প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া, ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে বিশ্ববাজারে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, লাগামহীন মূল্যস্ফ্রীতি এবং সর্বপরি সরকারের দুর্নীতির কারণে দেশটির সাধারণ মানুষকে আজকের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেই বললেই চলে। ফলে দেশটির সরকার জ্বালানি এবং ওষুধসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি করতে পারছে না। সাধারণ মানুষ তাই তথ্য ও সাহায্যের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছেন।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী ক্রেগ রাইডার বলেন, ‘‘আমরা এই প্ল্যাটফর্মগুলি তাদের সরাসরি এবং নির্দিষ্ট চাহিদা যেমন জ্বালানি বা অন্যান্য অতি জরুরি প্রয়োজন মেটাতে অভিনব উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে দেখছি।”