তবে দুই বারের মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু, এসব অভিযোগকে ‘জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যই তিনি ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন।
এর বাইরে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী নাজিম উদ্দিন কায়সার ও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারে-প্রচারে সরগরম এখন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। ১৫ জুনের নির্বাচনে প্রার্থীদের হাতে প্রচার চালানোর জন্য সময় আছে আর মাত্র ১০ দিন।
বৃহস্পতিবার নৌকা মার্কার প্রার্থী রিফাত নগরীর কান্দিরপাড় এলাকা থেকে জনসংযোগ শুরু করেন। এরপর তিনি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে প্রচার চালান। বিকালে তিনি টমছম ব্রিজ, উনাইসার, দিশাবন্দ এলাকায় পথসভা করেন।
পথসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, “সাক্কু উন্নয়নের নামে জনগণের টাকা লোপাট করেছেন। সাক্কু বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদনে নগরীর মানুষের কাছ থেকে ফ্ল্যাট ঘুষ নিতেন।”
নিজের কাছে এসবের প্রমাণ আছে জানিয়ে রিফাত ঘোষণা দেন, “নির্বাচিত হলে ১৫ দিনের মধ্যে সাক্কুর দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করে কুমিল্লার মানুষের কাছে পৌঁছে দেব।”
পথসভায় রিফাত আরও বলেন, “জলাবদ্ধতা ও যানজট কুমিল্লার মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে কুমিল্লা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন সাক্কু। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি কুমিল্লা নগরীর মানুষের জন্য কী করেছেন, তা নগরীর প্রতিটি মানুষের কাছে দৃশ্যমান।
“সাক্কু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন, সরকার থেকে আনা জনগণের টাকা লুটপাট করেছেন। তিনি এতই উন্নয়ন করেছেন যে, আধা ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই কুমিল্লা নগরী পানির নিচে ডুবে যায়। সিটি করপোরেশনকে বানিয়েছেন নিজের পার্টি অফিস।“
নৌকার প্রার্থী আরও বলেন, “আপনারা আমাকে একবার সুযোগ দেন। সততার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করে জলাবদ্ধতা ও যানজটমুক্ত কুমিল্লা গড়ব। আমি জনতার মেয়র হতে চাই। আমি নগরীর মানুষের সেবক হতে চাই, অন্যদের মতো নগর পিতা হতে চাই না।”
অপরদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক সাক্কু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নগরীর ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। তিনি ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা’ অব্যাহত রাখতে তাকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ভোটারদের।
এ সময় রিফাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী বলেন, “তিনি (রিফাত) এতদিন এসব কথা বলেননি কেন? এখন নির্বাচনের মাঠে এসব কথা বলে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন তিনি।
“আমি দুর্নীতি করলে এত বছর স্থানীয় সরকার বিভাগ বা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আমাকে ধরেনি কেন? এ ছাড়া অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা কী করেছে? এগুলো বলে কুমিল্লার মানুষকে আমার কাছ থেকে বিমুখ করা যাবে না। মানুষ আমার পাশে আছে, আমিও তাদের পাশে আছি।“
প্রার্থীরা টানা ১৩ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের শর্ত মেনে প্রচার চালাতে পারবেন। ১৪ জুন অর্থাৎ নির্বাচনের আগের দিন প্রচার চালানো যাবে না। ১৫ জুন সকাল থেকে ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেবেন নগরবাসী।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে প্রচার চালিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। এদিন দুপুরের পর নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন তিনি।
এ সময় ‘পরিবর্তনের অঙ্গীকার’ করে কায়সার বলেন, নির্বাচিত হলে যানজট ও জলাবদ্ধতামুক্ত আধুনিক কুমিল্লা গড়বেন তিনি।
২ কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ
নির্বাচনে প্রচারকে কেন্দ্র করে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত নেতার সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিষ্ণুপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকায় বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত লাটিম প্রতীকের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আবুল হোসেন ছোটন এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের প্রার্থী ও কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের সদস্য কাজী গোলাম কিবরিয়ার সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবুল হোসেন ছোটন বলেন, “বুধবার রাতে প্রচার চলাকালে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী কাজী গোলাম কিবরিয়ার লোকজন আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আমার চার কর্মী লাজিম হোসেন, দিদার হোসেন, পলিন ও জাকির হোসেনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।”
জামায়াত নেতা গোলাম কিবরিয়া বলেন, “আওয়ামী লীগ সমর্থিত আবুল হোসেন ছোটনের কর্মী-সমর্থকরা বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় মিছিল নিয়ে আমার নির্বাচনী এলাকার সাধারণ ভোটাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
“হামলায় আমার ২০ জনের বেশি সমর্থক গুরুতর আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। যদিও এই সময়ে মিছিল করা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচনী বিধিমালার লঙ্ঘন।”
কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি সহিদুর রহমান বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি। মামলা হলে পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবে।“