শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে
এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “যারা জোর করে
ক্ষমতা দখল করে থাকে, তারা কী ক্ষমতা
ছেড়ে দেয়?
এটা আদায় করতে হবে, সেটা জনগণের শক্তিতেই আদায় করতে হবে। আমাদের তো কোনো শক্তি নেই, শক্তি একটাই সেটা হচ্ছে জনগণ।
“আসুন, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যে ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি, সেই ঐক্য প্রক্রিয়াকে আমরা সবাই সফল করি। আমরা খুব স্পষ্ট করে
বলেছি যে,
এটা দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের, বাম-ডান হোক, যেটাই হোক আমরা তাদেরকে একখানে নিয়ে এসে এই ভয়াবহ যে সরকার আমাদের বুকের ওপর
চেপে বসে আছে- তার থেকে আমরা মুক্তি নিই।”
সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে গত
২৪ মে থেকে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে। এরই মধ্যে মাহমুদুর
রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকি
নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন, সাইফুল হকের
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব সংলাপ করেছেন।
এছাড়া ২০ দলীয় জোটের বাংলাদেশে
লেবার পার্টি ও কল্যাণ পার্টির সঙ্গেও সংলাপ শেষ করেছেন বিএনপি নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, “তারা (আওয়ামী লীগ) অতীতে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। আজকে
আবার অলিখিত বাকশাল তারা চালাচ্ছে গত ১৫
বছর ধরে এবং এখানে তারা বিচার বিভাগ, প্রশাসন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী,
গণমাধ্যম, ব্যবসা-বাণিজ্য
সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে তারা একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা নির্বাচন
ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দিয়েছে।
“সেই কারণে আমরা খুব স্পষ্ট করে
বলেছি যে,
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। এখানে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে সরে
যেতে হবে। নিরপেক্ষ একটা সরকারের হাতে দায়িত্ব দিতে হবে এবং সেই সরকার নতুন
নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।”
খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ‘সরকার জড়িত’
দেশের খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির
প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজকে কী হচ্ছে বাজারে? মন্ত্রী নিজে
স্বীকার করেছেন সিন্ডিকেটরা দাম বাড়াচ্ছে। তাহলে আপনি আছেন কেন? যারা সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো না, যারা দুর্নীতিবাজদের ধরতে পারো না, এই যে, ছোট ছোট আড়তদারদের
গিয়ে ধরে বেড়াচ্ছো বাজারে গিয়ে…।
“আসল ব্যাপার তো সেখানে নয়। আসল
ব্যাপার তো পত্রিকায় এসে গেছে। বড় বড় কর্পোরেটগুলো এতো বেশি করে চাল কিনছে, চালের দাম বেড়ে
যাচ্ছে। বরাবরই তাই নয়। সরকারের প্রশ্রয় ছাড়া, সরকারের মদদ ছাড়া কখনোই এটা করা সম্ভব হয় না।”
ফখরুল বলেন, “তাই আমরা বারবার করে
বলছি যে, সরকারের কারসাজি
শুধু নয়,
সরকারের সরাসরি সম্পৃক্ততা আজকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেছে, চালের দাম বৃদ্ধি করেছে।”
ক্ষমতাসীনদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল
কাদেরের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি আপনাদের সর্তক করতে চাই, আপনারা ইতিহাস থেকে তো শিক্ষা নেন না। এবার একটু শিক্ষা
নেন। মনে করুন ১৯৭৪ সালের কথা। তখন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে
গিয়েছিল।
“আজকে আবার খাদ্যশস্যের দাম বাড়ছে, খাদ্যের দাম বাড়ছে এবং মানুষের হাহাকার শুরু হয়েছে। সেই সময়ে যদি আপনি
দেওয়ালের লিখন না পড়েন, উদ্যোগ যদি না
নেন। এখন ওই সমস্ত উল্টো-পাল্টা কথা বলে লাভ নাই।”
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসুন, গণতন্ত্রের পরিবেশ তৈরি করুন, মানুষের মানুষের
কথা বলতে দিন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। তা
নাহলে আপনাদের যে পরিণতি হবে, সেই ভয়ানক
পরিণতি যেন না হয়।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান
এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাগপা এ আলোচনা
সভা আয়োজন করে।
জাগাপার সভাপতি খন্দকার লুতফর
রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, ডিএলের সাইফুদ্দিন
আহমেদ মনি, জাগপার আওলাদ হোসেন শিল্পী, ইউসুফ আলী হুমায়ুন কবির।