অথচ খুব শিগগিরই সুস্বাদু ও সুলভ এ খাবারটি পাওয়া কষ্টসাধ্য এবং তা দুর্মূল্য হয়ে উঠতে পারে।
মালয়েশিয়া মুরগি রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দেওয়ায় সিঙ্গাপুরবাসীদের প্রিয় এ খাবারকে ঘিরে এমন আশঙ্কাই সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
নগর রাষ্ট্রটির আরও অনেকের মতো র্যাচেল চংও চিকেন রাইস এতটাই পছন্দ করেন যে সপ্তাহে অন্তত তিনবেলা এ খাবার খেতেই হয় তার।
“আমার তালিকায় এটি এক নম্বর। এটি স্বস্তিদায়ক খাবার এবং সহজে মেলে,” বলেন তিনি।
র্যাচেল যে দোকানে খান, সেই আহ কিয়াত চিকেন রাইসে একবার খেতে খরচ পড়ে সিঙ্গাপুরি ৪ ডলার (২.৯০ মার্কিন ডলার)।
কিন্তু খাবারটির প্রধান উপকরণ মুরগি রপ্তানি বিধিনিষেধের খাড়ায় পড়ায় সামনে তুলনামূলক সস্তায় এ খাবার মিলবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকায় নিজেদের বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টায় কয়েকটি দেশ গুরুত্বপূর্ণ অনেক খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ দিয়েছে।
কয়েকদিন আগে মালয়েশিয়া মুরগি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। তার আগে ভারত গম রপ্তানি বন্ধ ও বিদেশে সীমিত আকারে চিনি বিক্রির কথা জানিয়েছিল। নিজেদের বাজারে রান্নার তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইন্দোনেশিয়াও পাম তেলের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।
এসবের ফলে খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো বিপাকে পড়েছে।
৯০ শতাংশের বেশি খাদ্য আমদানি করা সিঙ্গাপুরও এসব বিধিনিষেধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। দ্বীপরাষ্ট্রটির যত মুরগি লাগে, তার এক তৃতীয়াংশের জন্য তারা মালয়েশিয়ার ওপরই নির্ভর করতো।
স্বভাবতই, মালয়েশিয়ার মুরগি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার খবর সিঙ্গাপুরের চিকেন রাইসের দোকানগুলোতে খাবারের জন্য অপেক্ষারতদের সারিতেও উদ্বেগ নিয়ে হাজির হয়েছে। দেশটির প্রায় সব ফুড কোর্ট ও হকার কেন্দ্রেই এই চিকেন রাইসের দোকান পাওয়া যায়।
“এবার মুরগি, পরেরবার অন্য কিছুও হতে পারে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে,” বলেছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লং।
চিকেন রাইসে যে মুরগি লাগে, তা সাধারণত মালয়েশিয়া থেকে জীবন্ত অবস্থাতেই সিঙ্গাপুরে যায়, এরপর সেখানেই জবাই, রান্না শেষে পরিবেশিত হয়। কিন্তু মালয়েশিয়া মুরগি রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় এমনটা করা সম্ভব হচ্ছে না।
‘উৎপাদন ও অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত’ এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে মালয়েশীয় সরকার জানিয়েও দিয়েছে।
আহ কিয়াত চিকেন রাইসের মালিক লিম উই কিয়াত বলছেন, ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মালয়েশীয় মুরগি সরবরাহকারী চলতি বছর তার কাছ থেকে আগের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি অর্থ নিলেও তিনি চিকেন রাইসের দাম বাড়াতে আগ্রহী ছিলেন না।
“আমরা আমাদের চিকেন রাইসের দাম বাড়াতে চাই না, কারণ তাতে ক্রেতা চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা ধারণা করছি, হয়তো একমাস বাড়তি খরচ করেও এভাবে চালাতে পারবো আমরা। কিন্তু যদি খারাপ পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, সেক্ষেত্রে হয়তো প্রতি প্লেটে ৫০ সেন্ট করে বাড়ানো শুরু করতে হবে,” বলেছেন তিনি।
সামনের দিনগুলোতে চিকেন রাইস বানাতে পর্যাপ্ত মুরগি পাবেন না এমন শঙ্কাও আছে লিমের। ঘাটতি পোষাতে তাকে হয়তো হিমায়িত মাংসের দিকে ঝুঁকতে হতে পারে, যা তার ক্রেতাদের আগের স্বাদ নাও দিতে পারে।
“হিমায়িত মাংস নিয়ে ধারণা হচ্ছে এতে ফ্রিজারের গন্ধ বা স্বাদে ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমি বড় ধরনের কোনো পার্থক্য দেখিনি। আমরা ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁগুলোতে এই মুরগি খাই এবং সেগুলোর স্বাদও বেশ ভালো,” বলেছেন তিনি।
মাংস বিক্রেতাদের হাতে বিকল্প আরও কম।
সিঙ্গাপুরের সমৃদ্ধ কাঁচা বাজারগুলোর মধ্যে একটিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মুরগি বিক্রি করছেন হামিদ বিন বুয়াং।
তিনি জানান, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তার ক্রেতারা বেশি মাংস কিনলেও তিনি এখন মালয়েশিয়া রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আগ পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করছেন।
কবে যে ফের দোকান ভরাতে পারবেন তাও নিশ্চিত নন হামিদ।
“সবাই এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। মুরগি না থাকলে সবাই ঝামেলায় থাকে,” বলেছেন তিনি।