২০১৭ সালের নির্বাচনে ১১ হাজার ৮৫ ভোটে আওয়ামী
লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আঞ্জমু সুলতানা সীমাকে পরাজিত করে
দ্বিতীয়বারের মতো মেয়রের চেয়ারে বসেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু।
আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা সিটি করপোরেশন
নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইতোমধ্যে প্রচারে জমজমাট হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ।
পাঁচজন প্রার্থী হলেও তাদের মধ্যে তিন প্রার্থীর প্রচারই ভোটের মাঠ সরগরম করে
রেখেছে।
এরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী
আরফানুল হক রিফাত, বিএনপিপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মনিরুল হক
সাক্কু এবং বিএনপিপন্থী আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দিন
কায়সার।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা দলবল
নিয়ে ছুটছেন ভোটারদের কাছে, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
অপর দুই প্রার্থী হলেন হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী
রাশেদুল ইসলাম এবং হরিণ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুলও
নির্বাচনী মাঠে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে নগরীতে খুব একটা আলোচনা নেই তাদের
নিয়ে।
এরই মধ্যে তিন হেভিওয়েট প্রার্থী ভোটের মাঠে নতুন
তরুণ ভোটারদের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। তাই ২২ হাজারের বেশি তরুণ ভোটারদের দিকে
বিশেষ চোখ রাখছেন রিফাত, সাক্কু ও কায়সার। বলতে গেলে তাদের আকৃষ্ট করতে মরিয়া হয়ে
উঠেছেন ওই তিন প্রার্থী। এজন্য দিতে শুরু করেছেন নানান ধরনের প্রতিশ্রুতিও।
তবে তরুণ ভোটারদের অনেকেই দেখেশুনে নগরীর জন্য
কল্যাণকর একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন।
নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এরই মধ্যে নৌকার
প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত তার কয়েকটি পথসভায় ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হলে
কুমিল্লার তরুণ ভোটারদের নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে যাবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আরফানুল হক রিফাত বলেন, “তরুণরাই
আমাদের পথচলার শক্তি। তবে বিগত দিনে কুমিল্লার তরুণ ও যুব সমাজের জন্য তেমন কোনো
উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমি নির্বাচিত হলে তরুণ ও যুবকদের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প হাতে
নেব।”
তিনি তরুণদের সঙ্গে নিয়ে মাদকমুক্ত কুমিল্লা গড়ার
কথা জানিয়ে বলেন, “আর নির্বাচিত হতে পারলে নতুন ভোটারদের নিয়ে পদ্মা সেতুতে যাব।”
সদ্য সাবেক মেয়র বিএনপিপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী
মনিরুল হক সাক্কু বলেন, তিনি তরুণদের তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সিটি
করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত কুমিল্লা নিউ মার্কেটের ৫ পঞ্চম তলায় ১১৯টি দোকান
বরাদ্দ দিয়েছেন। কুমিল্লার কোথাও এত বড় কম্পিউটার মার্কেট নেই। সেখানে কুমিল্লার
তরুণরা তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ হচ্ছে।
“নিজ উদ্যোগে একটি পার্ক করে দিয়েছি। গোমতী নদীর
পাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন করে তাদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করেছি। তরুণরা সিদ্ধান্ত
নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। প্রয়োজনে তারা অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ করে যাকে ভালো লাগে তাকে
রায় দেবে – এটাই আমার প্রত্যাশা। বেশিরভাগ তরুণ শিক্ষিত, আশা
করছি তারা কারও কথায় প্ররোচিত হবে না।”
স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার
বলেন, “এবারের নির্বাচনে ১০ শতাংশ তরুণ ভোটার। আমি এই নতুন প্রজন্মের একজন
প্রতিনিধি হিসেবে কুমিল্লাকে নতুন করে গড়তে চাই। যে কুমিল্লার সঙ্গে আধুনিকতা ও
প্রযুক্তির একটা সমন্বয় থাকবে। আর আমি নিজেও তরুণ সমাজের প্রার্থী। তাদের সঙ্গে
আমার সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক। তরুণ ভোটারদের প্রচুর সাড়া পাচ্ছি, আশা করছি তারা
আমাকেই বেছে নেবে।”
এবারের সিটি নির্বাচনে জীবনের প্রথম ভোট দেবেন বলে
জানান কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস।
তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে নিজের মধ্যে এক ধরনের
উৎসাহ-আমেজ কাজ করছে। তবে তরুণদের বেশিরভাগই কোনো রাজনীতি বোঝে না। আমি নগরীর
উন্নয়ন ও নগরীবাসীর সেবা করবেন এমন একজন ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে চাই।”
আরেক তরুণ ভোটার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি
কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত আক্তার।
তিনি বলেন, “রাতেই বেলায় কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন
এলাকায় চলতে ভয় লাগে। অনেক এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আমাদের জন্য নিরাপদ
কুমিল্লা গড়তে পারবে, এমন একজন ব্যক্তি মেয়র নির্বাচিত করতে চাই।”
একই কলেজের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন আকাশ ও মোহাম্মদ
শরীফ খান বলেন, তারা মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত কুমিল্লা চান। চান আধুনিক
প্রযুক্তিনির্ভর কুমিল্লা। এজন্য যিনি কাজ করতে পারবেন, তাকেই তারা ভোট দিতে চান।
তাদের কাছে দল বড় কথা নয়, যোগ্য ব্যক্তি বড় কথা
বলে জানান তারা।
নগরীর ছোটরা এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, “জীবনের
প্রথম ভোট দেব। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নগরীকে যিনি আধুনিকতায় সাজাবেন, তাকেই
আমরা মেয়র হিসেবে বাছাই করব। নগরীতে খেলাধুলার তেমন জায়গা নেই। এজন্য যুব সমাজ
মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এই বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন এমন ব্যক্তিকে মেয়র হিসেবে দেখতে
চাই।”
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো.
শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর
মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন।
তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুইজন। এবার নতুন ভোটার রয়েছেন ২২ হাজারের অধিক।
আরও পড়ুন
কুমিল্লার ভোটে বিএনপি ‘নেই’, দলের প্রার্থী আছেন দেড় ডজন
কুমিল্লা
সিটি: প্রতীক নিয়ে প্রচারে
কুমিল্লার ‘বিদ্রোহী’ ইমরান ‘ছাড়ছেন’ ভোটের মাঠ
কুমিল্লা সিটি
নির্বাচন: ‘বিদ্রোহী’ ইমরানকে বোঝাতে বৈঠকে বসছেন
আওয়ামী লীগ নেতারা
সাক্কু-নিজামের
ভোটের প্রচারে যেতে বিএনপিকর্মীদের মানা
কুমিল্লা
সিটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আফজল খানের ছেলে ইমরান
কুমিল্লা
সিটি নির্বাচন: সাক্কুর সম্পদ সবচেয়ে বেশি
কুমিল্লা
সিটি নির্বাচন: সাক্কুর চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে বেশি
কুসিক
নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মনোয়নপত্র নিলেন সাংসদ সীমা