বিয়ের অনুষ্ঠানে তিনি লাল শাড়িতে সাজবেন, হাতে থাকবে মেহেদী, কপালে সিঁদুর। হিন্দু রীতিতে পবিত্র অগ্নি ঘিরে সাতপাকও ঘুরবেন।
বিয়ের আগে আর সবার যেমন গায়ে হলুদ হয়, বিন্দুর জন্যও সেই আয়োজন হচ্ছে। সেখানে নাচ-গানও হবে। বিয়ের পর দুই সপ্তাহের হানিমুন হবে ভারতের গোয়ায়। ইতোমধ্যে বিয়ের কার্ডও ছাপানো হয়ে গেছে।
সব আয়োজনই বেশ ছিমছাম, শুধু একটি বিষয় মিলছে না। বিয়ের কার্ডে কোনো বরের নাম নেই, কারণ নিজেকেই নিজে বিয়ে করার ঘোষণা দিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী বিন্দু।
বিবিসি লিখেছে, রীতিমত অনুষ্ঠান করে নিজেকে নিজে বিয়ে করার প্রবণতা বেড়ে চলেছে পশ্চিমে, যাকে বলা হয় ‘সলোগ্যামি’। সেই ঢেউ এবার ভারতে এসে পৌঁছেছে। সম্ভবত বিন্দুই হতে যাচ্ছেন প্রথম ভারতীয়, যিনি নিজেকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন।
সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী, ব্লগার ক্ষমা বিন্দু নিজের প্রশংসা শুনেছেন প্রচুর, বাঁধনে জড়ানোর প্রস্তাবও পেয়েছেন ঢের। সবাইকে তিনি বলেন, “আমি শুধু নিজের বাঁধনেই জড়িয়েছি।”
বিবিসিকে বিন্দু বলেছেন, বিয়ের মাধ্যমে তিনি ‘আত্মপ্রেমে’ জীবন উৎসর্গ করতে চান।
“নিজেকে বিয়ে করা মানে হল নিজেকে নিয়ে থাকার জন্য জীবন ধারণ ও লাইফস্টাইল বেছে নেওয়া প্রতিশ্রুতি; যা আপনাকে আরও প্রাণবন্ত, সুন্দর ও অনকে সুখী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।”
বিন্দু বলেন, “নিজের যে অংশগুলো আমি অস্বীকার করার চেষ্টা করেছি, যেমন- আমার শারীরিক, মানসিক দুর্বলতাগুলো; নিজেকে বিয়ে করে আমি দেখাতে চাইছি যে নিজের ভালো মন্দ সবকিছুকেই আমি গ্রহণ করে নিচ্ছি। এই বিয়ে আসলে নিজেকে স্বীকৃতি দেওয়ারই একটি গভীর প্রকাশ।
“আমি বলতে চাইছি, আমি নিজেকে এবং আমার সবকিছুকে গ্রহণ করেছি। এমনকি আমার যা কিছু আমার ভালো লাগে না, সে বিষয়গুলোও।”
বিন্দু বিবিসিকে বলেছেন, বিয়েতে তার পরিবার তাকে আশির্বাদ করেছে। বন্ধুদের সঙ্গে তারাও বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
“মা আমাকে বলেছেন, ‘ওহ, তুমি সবসময় নতুন কিছু ভাবো।’ আমার মা-বাবা খুব খোলা মনের। তারা এটা মেনে নিয়েছেন। তারা বলেন, ‘তুমি যদি এটা নিয়ে খুশি থাক, আমাদের তাতে আপত্তি নেই।”
বিবিসি লিখেছে, নিজেকে বিয়ে করার ধারণাটি প্রথম খবরের শিরোনাম হয়েছিল প্রায় দুই দশক আগে। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় সিরিজ সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটির একটি চরিত্র ক্যারি ব্র্যাডশো ওই ধারণার অবতারণা করেন। যদিও সেটি ছিল কমেডি।
সেই থেকে এরকম শতাধিক বিয়ের খবর দুনিয়াবাসী পেয়েছে, আর তাদের বেশিরভাগই নারী। ফুলের তোড়া হাতে নববধূরা বিয়ের গাউন পরে গির্জার পথ ধরে হেঁটে গেছেন। কখনও কখনও পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছেন।
এর মধ্যে ব্যতিক্রম একটি ঘটনাও রয়েছে। ব্রাজিলের ৩৩ বছর বয়সী এক ফ্যাশন মডেল নিজেকে বিয়ের তিন মাস পর নিজেকে ডিভোর্সও দিয়েছিলেন।
নিজেকে বিয়ের প্রবণতা বিশ্বের অনেক জায়গায় ছড়িয়েছে। তবে ভারতে বিন্দুর আগে কারও কথা শোনা যায়নি। সে কারণে বিষয়টি নিয়ে এখন ভারতে চলছে তুমুল আলোচনা।
এ বিষয়ে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গেও কথা বলেছে বিবিসি। বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন চণ্ডিগড় শহরের পিজিআইএমইআর হাসপাতালের প্রাক্তন ডিন এবং সাইকিয়াট্রির অধ্যাপক সবিতা মালহোত্রা।
তিনি বলেন, “আমার কাছে এটি একটি অদ্ভুত ধারণা। প্রত্যেকেরই নিজের প্রতি ভালোবাসা আছে। আত্ম-ভালোবাসা দেখাতে আপনাকে সম্পর্কের ছেদ ঘটাতে বা একটি বাহ্যিক প্রতিরূপ তৈরি করতে হবে না। আত্মপ্রেম আমাদের সকলের মাঝেই আছে। আর বিয়ে হল দুটি সত্তাকে একত্রিত করা।”
বিন্দুর বিয়ের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিতর্ক তৈরি করেছে। কেউ তাকে উৎসাহ দিয়ে বলেছেন, অনেকের জন্য তিনি অনুপ্রেরণা যোগাবেন; কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ সলোগ্যামিকে উদ্ভট আর অসুস্থ কাণ্ডকারখানা হিসেবেই দেখছেন।
টুইটারে এক নারী বিষ্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, যদি অন্য কেউ না থাকে, তাহলে বিয়ের দরকার কী!
আরেকজন বলেছেন, “মনে হচ্ছে বিন্দু শুধু পারিবারিক দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।”
কেউ কেউ সলোগ্যামিকে ‘হতাশাজনক’ বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের মতে দীর্ঘদিনের আত্মমগ্নতাই এমন আত্মপ্রেমের জন্ম দিয়েছে।
সমালোচনার জবাবে কেবল ‘একটি কথাই’ বলার আছে বিন্দুর। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, “এটা আমার সিদ্ধান্ত, আমি যাকে চাই তাকে বিয়ে করব, সে পুরুষ হোক বা নারী বা আমি নিজে।
“নিজেকে বিয়ে করে আমি দেখাতে চাই, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমি মানুষকে বলতে চাই, পৃথিবীতে আপনি একা আসেন এবং একা চলে যান। তাহলে কে আপনাকে আপনার নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে পারে?”
বিন্দুর ভাষ্য, “আপনি যদি পড়ে যান, তাহলে আপনারই নিজেকে টেনে তুলতে হবে।”